শিক্ষক শ্যামল কান্তি স্বপদে বহাল

মে ১৯, ২০১৬

Nagidঢাকা জার্নাল: নারায়ণগঞ্জের লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার’ অভিযোগের সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি।
বেআইনীভাবে বরখাস্ত পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রেখে স্কুল পরিচালনা কমিটি বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বসের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গত ১৩ মে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠ-বস করানো হয়। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড়ের মধ্যে তাকে আবার সাময়িকভাবে বহিষ্কারও করে স্কুল পরিচালনা কমিটি।

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ১৬ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটির অপর সদস্য ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, নারায়ণগঞ্জে শিক্ষককে অপমান করে চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। মাউশি’র তদন্ত কমিটি সরেজমিনে দিন-রাত কাজ করে গতকাল (বুধবার) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
রিপোর্টে সমস্যাগুলো তুলে আনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একই সঙ্গে সুপারিশও করা হয়েছে।

‘আমরা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আপাতত যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছি, তদন্তের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি কমিটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট এসেছে। সেই কমিটির যে দায়িত্ব বা যোগ্যতা বা ভূমিকা থাকা উচিত কমিটি তার যোগ্য নয়। সে হিসেবে আমরা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি, আমরা আইন অনুযায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের নিয়ে গঠিত পুরো কমিটি বাতিল ঘোষণা করছি। তার স্থলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দিচ্ছি, আপাতত সেই কমিটি স্কুল পরিচালনা করবে। নিয়ম-নীতি অনুসারে যা করা প্রয়োজন তা করবো’।

‘দ্বিতীয়ত, সেখানে প্রধান শিক্ষকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এটা কার্যকর হবে না। নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে হয়নি, যে সভায় তারা করেছেন, তার কোনো এজেন্ডা ছিল না, তাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছেন। তারা তাকে বরখাস্তের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটাই বেআইনী। প্রধান শিক্ষক স্বপদে বহাল থাকবেন এবং দায়িত্ব পালন করে যাবেন। তাদেরকেই (কমিটি) বাতিল করলাম। অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলো’।

হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওপর যা বর্তায় সেগুলো আমরা করবো। আইন-শৃঙ্খলার বিষয় জড়িত আছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে যা যা করণীয় হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি উদ্যোগ নেবেন’।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ পাওয়া গেছে কি না- জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই ধরনের কিছু আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। অভিযোগটা অন্য একটা ইস্যু নিয়ে…, ৮ তারিখের ঘটনা। প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় শিক্ষা অফিসার কোন অপরাধ করেছেন কিনা এবং তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আরও বিস্তারিত পর্যালেঅচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

‘রাজনৈতিক দলগুলো বা ১৪ দল সুস্পস্ট করে বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সেখানে শিক্ষা কর্মকর্তার ত্রুটি আছে কিনা, সেখানে সংসদ সদস্যের ভূমিকা কি ছিল- সে বিষয়ে আমাদের করণীয় কী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দায়িত্ব নিয়েছেন সেটা সমন্বয় করে বের করতে হবে। এজন্য সময় দিতে হবে’।
শিক্ষকরা মূল শক্তি, জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জে যেভাবে শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে, লাঞ্ছিত করা হয়েছে, এই রকম নির্দশন খুঁজে পাওয়া যাবে না। এজন্য আমরা খুবই ক্ষুব্ধ, আমরা নিন্দা ও ঘৃণা জানিয়েছি। এ ধরনের ঘটনা কোনো সভ্য জগতে ঘটতে পারে না।

‘বিষয়টি জানান সঙ্গে সঙ্গে বলেছি, আমাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগোতে হবে, নইলে আইনগতভাবে টিকে রাখতে পারবো না। আমরা তদন্ত কমিটি করি এবং কমিটি রাত দিন খাটুনি করে প্রতিবেদন যথা সময়ে জমা দিয়েছে’।

স্থানীয় সংসদের পক্ষে ব্যবসায়ীরা শোডাউন করছেন এবং বলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কী- এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এটা এখনই বলার কিছু নেই, এখানে যে কেউ যে কিছু বলতে পারেন। আইন, নিয়ম-কানুন, হাইকোর্টের রায়- সব কিছু মিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের ওপর কী বর্তায় তা পর্যালোচনা করে দেখবো। হাইকোর্টের রায়ও দেখবো।

‘১৪ দলও বক্তব্য দিয়েছেন, এখানে রাগ ঢাক করার কান বিষয় নেই। আইন-বিধি-বিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ না নিলে, পরবর্তীকালে সিদ্ধান্তগুলো টিকে রাখতে হবে। আইনে প্রটেকশন দিতে না পারলে হাইকোর্টে টিকবে না। সে জন্য হিসেব করে এগোতে হবে’।

সংসদ সদস্যের অবস্থান বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে, হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর অবস্থান আছে, সব মিলে ব্যবস্থা নিচ্ছে, আরও পর্যালোচনা করে যা যা করণীয় করবো।

তদন্তে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায় কিছু পেয়েছেন কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, পুরো রিপোর্টটি ভাল করে পর্যালোচনা করতে হবে। কার কী ভূমিকা ছিল, সেটাও পর্যালোচনা করে এগোবো।

লাঞ্ছনার ঘটনায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণের ন্যায়ের পথে থাকার সহমর্মিতা বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, জনগণ, অভিভাবক নানা পন্থায় প্রতিবাদ করেছেন, এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা খুবই শক্তি অনুধাবন করছি এবং মনে করছি সারা দেশবাসী অন্যায়ের বিপক্ষে আছি, ন্যায়ের পক্ষে আছি। শিক্ষকের মর্যাদার বিষয়ে সমাজের মৌলিক দিক এর মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। এ ধরনের ঘটনার নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি, খুবই ঘৃণাজনক, কখনও হতে পারে না,।

“এখানে হাইকোর্টের বিষয় আছে, পলিটিক্যাল বিষয় আছে…।”

এরআগে শিক্ষার মানোন্নয়ন কর্মশালা ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সম্মেলনে বলেন, শিক্ষকরা জাতির ইজ্জত, সম্মান। তাদের অপমান বরদাস্ত করা হবে না। এটা জাতির জন্য অপমানজনক।

সংবাদ সস্মেলনে ও অনুষ্ঠানে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা জার্নাল, মে ১৯, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.