সারা দেশে বজ্রপাতে নিহত ৩৫

মে ১২, ২০১৬

Bozropatঢাকা জার্নাল : সারা দেশে বজ্রপাতে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। ঢাকায় ২,  সিরাজগঞ্জে ৫, গাজীপুরে ২, হবিগঞ্জে ১, রাজশাহীতে ৫, নরসিংদীতে ৩, কিশোরগঞ্জে ৪, নাটোরে ২, নেত্রকোনায় ২, ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ায় ১, নওগাঁয় ১, নীলফামারীতে ১ এবং পাবনায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন।

ঢাকা (যাত্রাবাড়ী) :  রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে শাহেদ সোহাগ (২১) ও তাহসিন লিংকনের (২৩) মৃত্যু হয়েছে। এ সময় রায়হান নামে আরো একজন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। মৃত দুজন ছাত্র বলে জানা গেছে।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তারা যাত্রাবাড়ী কাঠেরপুল এলাকার কনকর্ড বালুর মাঠে ফুটবল খেলছিল। এ সময় বজ্রপাতে আহত হয় তারা। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬টার দিকে সোহাগ ও লিংকনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

লিংকনের বন্ধু জানায়, তাদের দুজনের শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে যায়। এদের মধ্যে শাহেদ আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তারা সবাই যাত্রাবাড়ী থাকত।

যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনিসুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মৃত দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

সিরাজগঞ্জ : জেলার উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জে বজ্রপাতে মাদরাসা শিক্ষকসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৃষ্টির সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- হাসিল উল্লাপাড়া উপজেলার সিমলা গ্রামের আব্দুল লতিফ (৩০), একই উপজেলার বেতুয়া গ্রামের শাহেনূর (২৮), রায়গঞ্জ উপজেলার হাসিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক বেতগাড়ী গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪৫), একই উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের চকনূর গ্রামের নূরনবী সরকারের মেয়ে নূপুর খাতুন (৮) ও বৈকণ্ঠপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে সুলতান মাহমুদ (৩৫)।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দিপ সরকার ও রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুর : জেলার কাপাসিয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে বজ্রপাতে এক কৃষিশ্রমিক ও এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সাতান্না গ্রামের সানাউল্লাহ বেপারীর ছেলে মো. সাত্তার আলী (২৬) এবং কাপাসিয়ার খিরাটি গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী রুবিনা (৪০)।

কাপাসিয়া থানার এসআই মো. শাহজাহান জানান, কৃষিশ্রমিক মো. সাত্তার আলী কাপাসিয়া উপজেলার উত্তরখামের গ্রামের আব্দুর রশীদের জমিতে ধান কাটছিলেন। বৃস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এদিকে, প্রায় একই সময় গৃহবধূ রুবিনা মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতের কবলে পড়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন।

হবিগঞ্জ : জেলার বানিয়াচং উপজেলার প্রতাপপুর হাওরে বজ্রপাতে হাবিব মিয়ার (২৫) মৃত্যু হয়েছে। নিহত হাবিব প্রতাপপুর গ্রামের শেখ তাজুল মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, হাবিব হাওরে বোরো ধান কাটছিলেন। এ সময় বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত হলে হাবিব গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা বজলুর রহমান হাবিবের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাজশাহী :  জেলার মোহনপুরে বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলার ঘাষিগ্রাম ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বজ্রপাতে আরো চারজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ওই ইউনিয়নের আতা নারায়ণপুর গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (২), হাততৈড় গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল আজিজ (৫০) এবং ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সৈত চন্দ্র (৩০)। দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আহতরা হলেন- উপজেলার পুল্লাকুড়ি গ্রামের জালাল উদ্দিন (৪০), বারইপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আলিমন বেগম (৭০) এবং মোল্লাডাইং গ্রামের সমির উদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (২৮)।

তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে বাগমারার ধামিনপুর গ্রামের রহিমা বেগম বজ্রপাতে আহত হলে তাকেও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

মোহনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনলাম। নিহতদের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’

নিহতদের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে মোহনপুরে একের পর এক বিজলি চমকাতে থাকে। পাশাপাশি বিকট শব্দে একের পর এক বজ্রপাত ঘটতে থাকে।

নরসিংদী : জেলার রায়পুরা উপজেলায় বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ দাবদাহের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে শুরু হয় ভয়াবহ বজ্রপাত। দুপুরে সদর উপজেলার মহিষাশুরা ইউনিয়নে মহিষাশুরা গ্রামের আব্দুল করিম (৫০) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখে মাঠে গরু আনতে স্থানীয় বানিয়ার খালে যান। এ সময় হঠাৎ তার ওপর বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। একই সময় সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামে গৃহবধূ ফুলি বেগম (৩২) বজ্রপাতে মারা যান। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গ্রামের চান্দু মিয়ার স্ত্রী এক সন্তানের জননী ফুলি বেগম পাশের জমিতে ছাগল আনতে গেলে বজ্রপাতে মারা যান।

এদিকে, রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরচর গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন গৃহবধূ জোসনা বেগম (৩৮)। দুপুরে বাড়ির অদূরে মাঠে কাজ করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটলে জোসনা বেগমসহ তার পরিবারের আরো দুজন আহত হন।

স্থানীয়রা তাদের রায়পুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার জোসনা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শীতল চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জ : জেলার পৃথক তিন স্থানে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহমত আলীর ছেলে ও হোসেনপুর ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শরীফুল ইসলাম শুভ (১৮), তাড়াইল উপজেলার বেলংকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছের স্ত্রী মমতা বেগম (৪০), বাজিতপুর উপজেলার কৈকুরি গ্রামের আবু বকরের স্ত্রী রেজিয়া খাতুন (৫৬) ও বাহের নগর গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার ছেলে স্বপন (১৭)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে হোসেনপুরের চর বিশ্বনাথপুর এলাকায় জমিতে ধান কাটা শ্রমিকদের জন্য খাবার পানি নিয়ে যায় শুভ। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে হঠাৎ বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নান্নু মোল্লা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে তাড়াইলের বেলংকা ইউনিয়নের ইচা পশর গ্রামে বাড়ির সামনে ধান মাড়াই করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মমতা বেগম। নিহত মমতা বেগম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছের স্ত্রী। জাওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম অংকুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে একই সময়ে বাজিতপুরের পিরোজপুর ইউনিয়নের কৈকুরি গ্রামে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান রেজিয়া খাতুন এবং দিলালপুর ইউনিয়নের বাহের নগর গ্রামে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই স্বপনের মৃত্যু হয়। পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল জুয়েল এবং দিলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া নোবেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

নাটোর : নাটোরের লালপুরে বৃহস্পতিবার বিকেলে বজ্রপাতে এক নারীসহ ২ জন নিহত এবং এক নারীসহ দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের লালপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ বজ্রপাতে নাটোরের লালপুর উপজেলার উত্তর লালপুরের বান্টু আলীর স্ত্রী সাহারা বানু (৪৮) ও রঘুনাথপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোবারক আলী (৩০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

একই সময়ে উপজেলার মোহরকয়া গ্রামে আব্দুস সালামের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন (২৫) ও কাজীপাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে সাজেদুল ইসলাম বজ্রপাতে আহত হন। আহত দুজনকেই লালপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নেত্রকোনা : জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় বজ্রপাতে কৃষক রইছ উদ্দিন (৫০) নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের ভগবতীপুর গ্রামের পানিডুবি বিলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রইছ উদ্দিন ভগবতীপুর গ্রামের মৃত শামছ উদ্দিনের ছেলে।

আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বজ্রপাতে রইছ উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া : সরাইলে বজ্রপাতে জাহানারা বেগম (৪৮) নামের এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের দুবাজাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহানার দুবাজাইল গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপক কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নওগাঁ : জেলার  আত্রাইয়ে বজ্রপাতে জয়নাল উদ্দিন (৬৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কৃষক জয়নাল উদ্দিন উপজেলার বিষা উত্তর গ্রামের মৃত ব্যাঙ্গা প্রামাণিকের ছেলে।

আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) বদরুদ্দৌজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.