ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য তালিকায় উঠবে মঙ্গল শোভাযাত্রা!

এপ্রিল ২৬, ২০১৬

Ambassador-ঢাকা জার্নাল: বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’-কে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য তালিকাভূক্ত করার চেষ্টা চলছে।

একথা জানিয়েছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। নিজ কার্যালয়ে আলাপকালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটিতে দেশের ঐতিহ্য তালিকাভূক্তি, আমদানি-রপ্তানি, অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গসহ দূতাবাসের নানা কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে দূতাবাসের নান্দনিক সাজসজ্জা আর পরিবেশ দূতালয়ের মর্যাদাকে তুলে ধরেছে অনন্য উচ্চতায়।
তিনি জানান, ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অন্তর্ভ‍ূক্তির চেষ্টা চলছে। এরপরের টার্গেট বাংলাদেশের জামদানী।

ইউনেস্কোর সদরদপ্তর অবস্থিত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের তিনটি স্থানকে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।
নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং সুন্দরবন এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্সে রপ্তানিবাণিজ্য আমাদের অনুকূলে। দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে আমাদের অবস্থান চতুর্থ। সেই অবস্থানকে আরও সুসংহত করে শীর্ষে নিতে চাই আমরা। একারণে আমরা জোর দিয়েছি অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর। বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনার দেশ। সেই সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়েই আমরা এগিয়ে নিতে চাই দেশকে। বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে চাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।

পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে ২০১২ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে।

সাগরপাড়ি দিয়ে বা অবৈধ পথে এসে ফ্রান্সে আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেকে মানবপাচারকারী বা দালালদের প্ররোচনা ও প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে নানা দেশ ঘুরে ফ্রান্সে আসেন। তবে দেশটির শ্রমবাজার সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় দুর্ভোগের কবলে পড়তে হয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের। অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলেও দিন দিন সেই পথগুলোতেও এসেছে কড়াকড়ি।

শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতপক্ষে ভাষা ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ছাড়া  দেশটিতে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। ভারতের সঙ্গে ফ্রান্সের চুক্তি রয়েছে, যাতে কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিতে না হয়। তবে বাংলাদেশর সঙ্গে এটা নেই। অবশ্য এর অপব্যবহারে কিছুটা সময়ের জন্যে দেশটি সেই সুযোগ রহিত করেছিল।

২০১১ সালে দেশটি দেখলো, আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করে নিজেরা তদন্ত শুরু করলো। তারপর ‘আনসেফ কান্ট্রি’র তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিলো। প্রত্যাখ্যান শুরু করলো বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন।
রাষ্ট্রদূতের মতে, এর ভালো-মন্দ দু’টো দিকই রয়েছে। ‘আনসেফ কান্ট্রি’র তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়ায় দেশের ইমেজ বাড়লেও আশ্রয়প্রার্থীদের পথরুদ্ধ হওয়ায় বিষয়টি তাদের স্বার্থের বাইরে চলে যায়। যদিও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দেশটি।

শহীদুল ইসলাম বলেন, পরিশ্রমী হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম রয়েছে এ দেশে। আমি যখন পরিচয়পত্র পেশ করেছি, তখনই শুনেছি, বাংলাদেশের মানুষ ভালো। তারা সংঘবদ্ধ কোনো অপরাধ করে না। এমনকি মাদক ব্যবহার বা মাদক পরিবহনও করে না। এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগিয়ে আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়েছি বাণিজ্যিক কূটনীতিতে। আমরা চিংড়ি, তৈরি পোশাক, নীট, টেক্সটাইল, সিরামিক পণ্য ও জুতা রপ্তানিতে আরও জোর দিয়েছি।

ফ্রান্স দূতালয় এখন আরও জনবান্ধব ও সেবামুখি (সার্ভিস ওরিয়েন্টেড) উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দূতাবাসকেন্দ্রিক ৮০ ভাগ অসন্তোষ আর ক্ষোভের কারণ ছিলো কর্মীদের আচরণগত সমস্যা। তবে সেটি আমরা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন দূতাবাসে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে সেবাগ্রহীতারা সন্তোষের সঙ্গে সেবা নিচ্ছেন। সৌজন্যে বাংলা নিউজ।
ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ২৬, ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.