ভাসমান মানুষদের আস্থায় তিনি

এপ্রিল ১৫, ২০১৬

PM-sm20130916225128সাজাদ হোসেন সজীব : প্রত্যেকদিন সকাল হলেই যখন নিজ কর্মস্থলে আসি, তখন থেকেই শুরু হয়- ‘বাবা কয়ডা টেকা ভিক্ষা দেন’…

এই বাক্য, এই ধরনের দৃশ্য সমাজ-রাষ্ট্রের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমরা অবলোকন করছি এবং যার যার স্বাধ্যমত সাহায্য-সহযোগীতার চেষ্ঠাও অব্যাহত রেখেছে।

আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাতে ও ছলে-বলে কৌশলে ভিক্ষা নিয়ে প্রতিদিনই অন্ধকার জগতে ব্যস্ত থাকে। তেমনি একদিন সকালে কর্মস্থলে আসার কিছুক্ষণ পরেই একটি লোক আসলো এবং অতি কাতরতার সহিত ভিক্ষা চাইলো। আমার কাছেও লোকটার কাতরতা ও আকুলতা দেখে ভীষণ মায়া হলো। আমি বিলম্ব না করে তাকে কিছু টাকা দিলাম। হয়তো আমার মতো এমনিভাবে তাঁকে অনেকই টাকা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত; আমি ওই দিনই বিশেষ একটা কাজে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলাম। বাস থেকে নেমে যথারীতি রাস্তার পাশে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হাঁটছিলাম। ঠিক তখনই ফ্লাইওভারের নিচে খালি জায়গায় চোখ পড়তে খুবই অবাক হলাম। যে লোকটি সকালে আমার কাছ থেকে কাকুতি মিনতি করে কিছু টাকা ভিক্ষা নিয়ে আসলো, সেই লোকটিই এখানে একটা বস্তায় তাঁর অর্ধেক শরীর ঢুকিয়ে শুয়ে থেকে মনের আনন্দে নেশার জগতে ডুবে আছে। এটা দেখে তখন খুবই রাগ হয়েছিল !

আবার চিন্তা করলাম, এটাই হয়তো তাদের দৈনন্দিন পেশা। হ্যাঁ, এটা সত্য যে কোন কোন ‘প্রফেশনাল ভিক্ষুকও’ রয়েছে। তারা তাদের পেশা হিসেবে বা অন্য কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তাদের নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এদের মতো ছিন্নমূল মানুষদের ভিক্ষাবৃত্তির মতো কাজে লেলিয়ে দিয়েছে। ওইসব ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তাদের সর্দার। যা পায় তাঁরা ভাগ-বাটোয়ারা করে। এটা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি বিষয় বলে আমি মনে করি।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলাদেশের মানুষ যেন তাদের খাদ্য পায়, আশ্রয় পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়’। তাঁর এই কথার রূপান্তর কিন্তু আমরা তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে দেখতে পাই। তিঁনি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে গত ২ জানুয়ারি-১৬ এক অনুষ্ঠানে ঘরে ফেরা কর্মসূচি, আশ্রয়ন প্রকল্প, প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলেছিলেন।

এই ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাঁরা বিনা পয়সায় ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন, বিনা পয়সায় ট্রেনিং দিচ্ছেন এবং ঋণ প্রদান করছেন। যাতে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।

ছিন্নমূল মানুষদের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

এর মধ্যে শুধু সরকার নয় বেসরকারিভাবে কিছু সংগঠন ও এনজিও এদের মত ছিন্নমূল মানুষ এবং যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত তাঁদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব সংগঠন ও এনজিওদের ব্যক্তিগত অর্থায়নের মাধ্যমে এসব পঙ্গু, অসহায়, ছিন্নমূল মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন। চলাচল করার স্বাভাবিক ক্ষমতা যাদের নেই তাদেরকে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কাজ করে বাঁচার মানসিকতা তৈরী করছেন।

এসব প্রতিবন্ধীদের মধ্যে অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে কাজ করে বাঁচার অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন।

তাঁরা আসলে ভিক্ষাবৃত্তি না করেও কোন উপায় খুঁজে পায় না। তাঁদের মতো বিকলাঙ্গ বা পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষদের কেউ কাজ দিতে চায় না। আর যখন কাজ করে বাঁচার পথে অগ্রসর হয় তখনও সামনে আসে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা।

অনেকক্ষেত্রে প্রশাসন এইসব প্রতিবন্ধিদের কাজ করে বাঁচার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাঁদের দোকান করতে দেওয়া হয় না, যারা ইঞ্জিন চালিত রিক্সা-ভ্যান চালায় তাঁদের রিক্সা-ভ্যান নিয়ে থানায় নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়, এদের মতো অসহায় মানুষদের কোনো কোনো সময় শারীরিকভাবেও নির্যাতিত হতে হয়। যা সত্যি দুঃখজনক।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা গরীব, দুঃস্থ, ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী, বাসস্থানহীন মানুষদের কথা সবসময় চিন্তা করেন। তিঁনি ভাবেন কিভাবে তাদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বের করে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। তিঁনি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যা তাঁর এই ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতেই এসব জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের উদয় হয়েছে এবং তিঁনি এই ভাসমান মানুষদের একমাত্র আস্থার জায়গা হিসেবে বর্তমানে পরিগণিত হয়েছেন।

ইতোমধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ সরকার শুরু করে দিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ও সচেতন মহলকে এসব অসহায় ও পঙ্গু মানুষদের পাশে সাহায্য সহযোগীতার হাত প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে সে ব্যাপারে সংশ্লীষ্ট সবাইকে সজাগদৃষ্টি দিতে হবে। কোনো প্রতিবন্ধী বা অসহায় মানুষ যাতে কোন ভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

 

Sazzad

 

সাজাদ হোসেন সজীব

সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর (দ.) ছাত্রলীগ।

sazzad1989@yahoo.com

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.