নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা

এপ্রিল ১১, ২০১৬

nbrঢাকা জার্নাল: ক্রমশ বেড়েই চলেছে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিক (নয় মাস) শেষে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বেড়ে ১৪ হাজার ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি ছিল ১৩ হাজার ৫১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে ঘাটতি বাড়লেও গত অর্থবছরের তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এনবিআর সূত্রে সাময়িক হিসাব থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠানটি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও আয়কর এই তিন খাতেই রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাস শেষে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক খাতে রাজস্ব আদায় করেছে ৩৩ হাজার ২০০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মূসক বা ভ্যাট খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০ হাজার ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর বাবদ আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তিন খাত মিলিয়ে মোট আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৪ হাজার ৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর।

যদিও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় এই অর্থবছরের নয় মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯২ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ওই সময় ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছিল ১৩ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। এই সময়ে ১ লাখ ৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর বা মূসক, আয়করসহ মোট শুল্ক-কর আদায় হয়েছিল ৯০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।

এদিকে ঘাটতি এড়াতে শেষ পর্যন্ত মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭২০ কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশাল আকারে রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় করতেই লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে অর্থবছরের বাকি তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব আদায় করতে হবে ৪৩ হাজার ৫০৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর ফলে নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরের পক্ষে একটু সহজ হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।

যদিও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা করদাতাবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য নানা প্রচারণামূলক কর্মসূচি করছি। আশা করছি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ে কোনো ঘাটতি থাকবে না।’

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন সূত্রজানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের জন্য এবং কর্মকর্তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের জন্য এপিএ (বার্ষিক পারদর্শিতা চুক্তি) করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরগুলোতে ছিল না। এ ছাড়া সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে কৌশলগতভাবে জনবল পদায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের রাজস্বজড়িত মামলা নিষ্পত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে পর্যায়ক্রমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এখন ঘাটতি থাকার কোনো কারণ নেই।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন করে (মূসক)৬৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা এবং শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ১১, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.