শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনা হুজির!

মার্চ ৩১, ২০১৩

ASEM 9 meeting in Vientiane, Laosঢাকা জার্নাল: ‘প্রধানমন্ত্রী’কে হত্যার পরিকল্পনা করছিল হরকাতুল জিহাদ (হুজি)।

খেলাফতের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যারা যারা বাধা তাদের হত্যার পরিকল্পনা নিয়েই এবার এগুচ্ছিল হুজি।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আটক থাকা হুজির এক আধ্যাত্মিক নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সরাসরি কাউকে ইঙ্গিত না করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান নেতা-নেত্রীদের ইঙ্গিত করে ‘ভিআইপি’ বা ‘ভিভিআইপি’ বলে উল্লেখ করেছে।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, “গণতন্ত্রকামী সকল দলের নেতা-‘নেত্রী’কে হত্যা করে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করাই তাদের পরিকল্পনা ছিল। অর্থাৎ ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করতে যারা যারা বাধা তাদের হত্যার পরিকল্পনা নিয়েই এবার এগুচ্ছিল হুজি।”

তিনি বলেন, “এদের পরিকল্পনা ছিল জনাকীর্ণ স্থানে বোমা হামলা, দেশের ভিআইপি, ভিভিআইপিদের হত্যা করে বিশ্বে জানান দেয়া যে তাদের শক্তি কমেনি।”

২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বোমা পুঁতে রাখে হুজি। এছাড়া ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করে সন্ত্রাসী সংগঠনটি। হুজির তৎকালীন প্রধান মুফতি হান্নান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সেই মামলাটি বিচারাধীন।

এডিসি মশিউর রহমান আরও জানান, “নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের আধ্যাত্মিক নেতাসহ আটক কর্মীদের প্রথম টার্গেট ছিল ইসলামী ব্যাংকে অপারেশন করা। এ লক্ষে তারা অস্ত্রে-শস্ত্রে রণপ্রস্তুতি নিচ্ছিল। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকে অপারেশন (ডাকাতি) করে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হওয়া ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। পর্যায়ক্রমে তারা অন্যান্য ব্যাংক ও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের হত্যা করে দেশে অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতো।”

এদিকে আটককৃতদের মূখ্য মহানগর আদালতে হাজির করা হলে তিন থানার মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগম।

কলাবাগান থানার মামলায় ডা. ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ (৫৫), আফগান ফেরত ফরিদ উদ্দিন মাসুদ (৩৫), মো. মিজানুর রহমান (৩১), মাহফুজুর রহমান (২৩), সজল ও আব্দুল খালিদকে তিন দিনের রিমান্ড, খিলক্ষেত থানার মামলায় মো. মোস্তফা, মো. মামুনুর রশীদ এবং তার স্ত্রী ডলি আক্তার, মো. আবুল বাশার, রেজাউল করিম, এবং রোকসানা বেগমকে ৭ দিনের রিমান্ড, বংশাল থানার মামলায় চার পাকিস্তানির মধ্যে সায়িদ উদ্দিন (৫০), মোহাম্মদ ফারহান (২৬) এর ৪ দিন এবং রুবিনা বেগম (৪৩), নারগিস আক্তারের (৩৯) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। আটককৃতরা ডিবি হেফাজতে রয়েছে।

আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এই উর্ধতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন দেশে হরকাতুল জিহাদ পুনরায় সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গোষ্ঠিটির আধ্যাত্মিক নেতাসহ অন্যান্যরা রাজধানীতে অবস্থান করছেন।”

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুরো চক্রকে শনাক্ত করা যায় বলে জানান এডিসি মশিউর রহমান।

তিনি জানান, “বাংলাদেশে এ গোষ্ঠিটির প্রধান হয়ে কাজ করছিলেন জামায়াত নেতা ডা. ফরিদ উদ্দীন আহাম্মদ। জামায়াত, শিবিরের কিছু নেতা এবং আল্লাহর দলের সদস্যরা একত্রিত হয়ে ‘হরকাতুল জিহাদ ইন বাংলাদেশ’ পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছিল।”

মশিউর রহমান আরও বলেন, “ইসলামী ব্যাংকে অপারেশনের প্রথম ধাপ হিসেবে তারা বোমাও সংগ্রহ করে। উদ্ধার হওয়া বোমাগুলোকে ব্যাংক ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা হতো।”

ভারত ও পাকিস্তানের হরকাতুল জিহাদ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরিকল্পনাতে এগুচ্ছিলেন আধ্যাত্মিক নেতা ডা. ফরিদ। আর সামরিক কমান্ডার ফরিদ উদ্দীন মাসুদ আফগানিস্তানে যেহেতু যুদ্ধ করেছেন সেহেতু তার অস্ত্র চালনায় দক্ষতা থাকায় তাকে সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডা. ফরিদ আর ফরিদ উদ্দীন মাসুদ পাকিস্তানি হরকাতুল জিহাদ ইন পাকিস্তান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতে পাচারের জন্য চার পাকিস্তানির মাধ্যমে জাল রুপি আনেন। আর সেগুলো কৌশলে ভারতে পাচার করেন।

আটক চার পাকিস্তানি নাগরিক সাঈদ (৫০), ফারহান (২৬), রুবিনা বেগম (৪৩), এবং নার্গিস আক্তার (৩৯) এর আগেও অনেকবার ঢাকায় আসেন এবং কয়েক কোটি জাল টাকা ভারতে পাচার করেছেন।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ৩১, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.