একটি কাল্পনিক গল্প

মার্চ ১৮, ২০১৬

muhammed-zafar-iqbalমুহম্মদ জাফর ইকবাল :

১.

রিকশাটা থামতেই সামিয়া দেখতে পেল, হাসান কফিহাউসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়াকে দেখেই হাসান লম্বা পায়ে এগিয়ে এসে সামিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। সামিয়া হেসে বলল, ‘তোমার ধারণা আমি নিজে নিজে রিকশা থেকে নামতে পারব না?’ হাসান বলল, ‘কেন পারবে না? একশবার পারবে! কিন্তু ঢাকা শহরে রিকশার কথা চিন্তা করলেই ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়।’ সামিয়াকে হাতে ধরে রিকশা থেকে নামিয়ে হাসান বলল, ‘আর একদিন! তার পর তোমাকে আর কোথাও রিকশা করে যেতে হবে না।’
আগামীকাল তাঁদের বিয়ে, বিয়ের পর সামিয়া যখন হাসানের বাসায় উঠে আসবে, তখন তাঁকে আর রিকশায় উঠতে হবে না। হাসানদের বাসায় প্রত্যেকের জন্য আলাদা গাড়ি। সামিয়া আর হাসান যখন ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছে, তখন তাঁদের ক্লাসে শুধু হাসানই নিজের গাড়ি ড্রাইভ কারে ক্লাস করতে আসত।

সামিয়া বলল, ‘বিয়ের আগের দিন এভাবে কফিহাউসে লুকিয়ে দেখা করতে এসেছি, কেউ দেখে ফেললে কী লজ্জার ব্যাপার হবে।’ হাসান শব্দ করে হেসে বলল, ‘এর ভেতরে লজ্জার কী আছে?’ সামিয়া বলল, ‘তুমি বুঝবে না। ছেলেরা এগুলো বোঝে না।’

তাঁরা দুজনে কফিহাউসের এক কোনায় বসে কফির অর্ডার দেয়, কফি খেতে খেতে দুজনে নিচু গলায় কথা বলে। বিয়েতে একশ রকম ঝামেলা থাকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। অনেক ছেলেবেলায় সামিয়ার বাবা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন, বাসায় তাঁর মা আর ছোট বোন ছাড়া কেউ নেই। বিয়ের ঝামেলার বড় অংশটাই সামিয়ার নিজেকেই করতে হচ্ছে। সামিয়ার কথা শুনতে শুনতে হাসান একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে সামিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সামিয়া, তোমাকে একটা কথা বলব, ভাবছি! সামিয়া হাসল, বলল, সরি হাসান, আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি, তোমাকে কথা বলার কোনো সুযোগই দিচ্ছি না। বলো, তুমি কথা বলো।’ হাসান একটু ইতস্তত করে বলল, ‘বিয়ের পর তুমি নিশ্চয়ই তোমার চাকরিটা ছেড়ে দেবে?’

২.

সামিয়া চমকে উঠল, কেমন যেন ভয় পেয়ে সে হাসানের দিকে তাকাল, শুকনো গলায় বলল, ‘কী বলছ তুমি? আমি চাকরি ছেড়ে দেব?’ হাসান মাথা নাড়ল, বলল, ‘হ্যাঁ, বিয়ের পর তোমার চাকরি করার দরকার কী? তোমার তো তখন আর টাকা-পয়সার দরকার হবে না।’ সামিয়া কেমন যেন অবাক হয়ে হাসানের দিকে তাকিয়ে রইল, কোনো কথা বলতে পারল না। হাসান বলতে থাকল, ‘মেয়েদের চাকরি করার বিষয়টা জানি কেমন একেবারে মানায় না। মেয়েরা তখন কেমন জানি খিটখিটে হয়ে যায়। তাদের কথাবার্তা চালচলনে কোনো সুইটনেস থাকে না।’

সামিয়া কিছুক্ষণ শুকনো মুখে হাসানের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, ‘ইউ আর নট সিরিয়াস, তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছ। তাই না?’ হাসান মাথা নাড়ল, বলল, ‘না। আমি ঠাট্টা করছি না। আমি সিরিয়াস।’ সামিয়া বলল, আমি চার বছর ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছি। দুই বছর থিসিস করেছি। আমার জার্নালে তিনটা পাবলিকেশনস। আমি গোল্ড মেডেল পেয়েছি। ইউনিভার্সিটিতে আমি চাকরি পেয়েছি। আমি ফোর্থ ইয়ারের ছাত্রছাত্রীদের একটা কোর্স পড়াই—আর তুমি বলছ আমি সেই চাকরি ছেড়ে দেব?’

হাসান বলল, ‘হ্যাঁ, আমি তাই বলছি। ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র পড়িয়ে তুমি কয় টাকা বেতন পাও? আমি প্রতি মাসে তোমাকে তার দ্বিগুণ টাকা হাত খরচ দেব।’ সামিয়া কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না, তারপর একটু কষ্ট করে বলল, ‘তোমার ধারণা আমি টাকার জন্য ইউনিভার্সিটির মাস্টার হয়েছি?’ হাসান একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বলল, তুমি কি ভলান্টারি করো? বেতন নাও না? তাহলে সেটা টাকার জন্য হলো না?’

সামিয়া অবাক হয়ে হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকে, হঠাৎ করে তাঁর হাসানকে কেমন যেন অচেনা মনে হতে থাকে।

৩.

তাঁরা চার বছর একসঙ্গে পড়াশোনা করেছে, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে হৈচৈ করেছে, লেখাপড়ায় ভালো বলে কতবার সে নিজে হাসানের হোমওয়ার্ক করে দিয়েছে। যখন ইউনিভার্সিটিতে চাকরি পেয়েছে সে, তখন সবাইকে নিয়ে চায়নিজ খেতে গিয়েছে, এখন সেই হাসান বলছে বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিতে? সামিয়া নিচু গলায় বলল, ‘হাসান, তুমি আগে আমাকে কখনো বলোনি কেন যে তুমি চাও না আমি চাকরি করি?’ হাসান বলল, ‘আমি ধরে নিয়েছি তুমি সেটা জানো। আমাদের ফ্যামিলিতে কখনো কোনো মেয়ের চাকরি করতে হয়নি। তুমি যখন আমাদের ফ্যামিলিতে আসবে, তখন আমাদের ফ্যামিলির নিয়ম মেনেই আসবে।’

সামিয়া বিবর্ণ মুখে হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকে। হাসান জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে বলল, ‘বাদ দাও এই আলোচনা। পরে দেখা যাবে। কাল আমাদের বিয়ে, এখন এসব আলোচনা করে মুড অফ করার কোনো দরকার নেই।’ সামিয়া কোনো কথা না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।

ঘণ্টাখানেক পর হাসান সামিয়াকে তাঁদের বাসায় নামিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর গাড়িতে নিয়ে বের হলো। দুজনের কথাবার্তা হচ্ছে খুব কম, কোথায় জানি সুর কেটে গেছে। সামিয়াদের বাসা মোহাম্মদপুরে, হাসান যখন হঠাৎ গাড়িটা ঘুরিয়ে বনানীর দিকে রওনা হলো, সামিয়া একটু অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ হাসান হাসল, বলল, ‘চাকরি ছাড়ার কথা বলে তোমার মন খারাপ করে দিয়েছি, তাই চলো তোমার মন ভালো করে দিই?’ সামিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন করে আমার মন ভালো করে দেবে?’ হাসান বলল, ‘তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই। আমাদের বাসার ওপরের ফ্ল্যাটটা আমাদের জন্য রেডি করা হয়েছে। তোমার নতুন সংসার কেমন করে সাজানো হয়েছে তুমি দেখবে।’ সামিয়া বলল, ‘না হাসান, কাল আমার বিয়ে আর আজ আমি ঢ্যাং ঢ্যাং করে শ্বশুরবাড়ি যাব এটা হয় না। আমাকে বাসায় নামিয়ে দাও। প্লিজ!’

৪.

হাসান রাজি হলো না, একরকম জোর করেই সামিয়াকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল। গাড়িটা গ্যারেজে রেখে দুজন যখন চুপিচুপি করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছে, তখন হঠাৎ করে দোতলার দরজা খুলে হাসানের মা বের হয়ে এলেন। সামিয়া ভয়ানক চমকে ওঠে, এই ভদ্রমহিলাকে সে একটু ভয় পায়। হাসানের মা একবার হাসানের দিকে তাকালেন তারপর সামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ছিঃ মা! এটা তুমি কী করছ? কাল তোমার বিয়ে আর আজকে শ্বশুরবাড়িতে চলে এলে?’

সামিয়া একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেল, আমতা আমতা করে বলল, ‘আমি আসতে চাইনি আন্টি—আমাকে হাসান জোর করে নিয়ে এসেছে।’ হাসানের মা বললেন, ‘প্রথমত, আমি তোমার আন্টি না, আমি তোমার মাদার ইন ল, আমাকে মা ডাকবে। দ্বিতীয়ত, হাসান তোমাকে আনতে চাইলেই তুমি চলে আসবে?’ সামিয়া কী বলবে বুঝতে পারল না, অপমানে তার মুখ লাল হয়ে উঠল। ভদ্রমহিলা বলতে থাকলেন, ‘যাই হোক, এসে যখন পড়েছ ভেতরে ঢোকো। তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।’

সামিয়া আচ্ছন্নের মতো ভেতরে ঢুকল। ভেতরে ঢুকে থতমত খেয়ে গেল। সোফাতে বেশ কয়েকজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। হাসানের মা বললেন, ‘এরা তোমার খালা, চাচি ও ফুফুশাশুড়ি। সালাম করো।’

সামিয়া উবু হয়ে সবাইকে পা ধরে সালাম করল। হাসানের একটা সোফায় বসে সামিয়াকে তাঁর সামনে একটা সোফায় বসতে বললেন। সামিয়া জড়োসড়ো হয়ে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। ঠিক কী কারণ জানা নেই, হঠাৎ করে তার মনে হতে লাগল সে বুঝি একজন আসামি এবং সে একটি বিচারের কাঠগড়ায় বসেছে।
হাসানের মা কেশে একটু গলা পরিষ্কার করে বললেন, ‘দেখ মা, তুমি আমার বাড়ির বউ হয়ে আসছ, তুমি বুঝতে পারছ কি না আমি জানি না, এটা কিন্তু খুব ছোটখাটো কথা না। হাসানের জন্য কত জায়গা থেকে বিয়ের আলোচনা এসেছে, তুমি চিন্তা করতে পারবে না। আমি ভেবেছিলাম দেখে-শুনে এই ফ্যামিলির উপযুক্ত একটা মেয়ে বেছে নেব। তখন হাসান বলল, সে তোমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি মিথ্যা কথা বলব না মা, আমি প্রথমে রাজি হতে চাইনি, তুমি বাপ মরা একটা মেয়ে, তোমাকে বিয়ে করা মানে তো শুধু তোমার দায়িত্ব নেওয়া নয়, তোমার ফ্যামিলির দায়িত্ব নেওয়া। তা ছাড়া ছেলেদের যখন বিয়ে হয়, শ্বশুরবাড়িতে একটু জামাইয়ের আদর পেতে চায়। তোমার বাবা নেই, আমার ছেলের আদর-যত্ন কে করবে?’

সামিয়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না, সে সত্যিই এ রকম একটা কথা বসে বসে শুনছে। তাঁর মনে হলো, প্রতিবাদ করে একটা কিছু বলা উচিত; কিন্তু কী বলবে ভেবে পেল না। হাসানের মা একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘দেখ মা, আমার হাসান অনেক আদরের ছেলে। সে কিন্তু জীবনে এক গ্লাস পানিও নিজে ঢেলে খায়নি। এই বাড়িতে তুমি যদি বউ হয়ে আসো, তোমার প্রথম দায়িত্ব হবে আমার ছেলেকে যত্ন করে রাখা। দেখাশোনা করা। আমি শুনলাম, তুমি নাকি স্কুল না কলেজে মাস্টারি করো?’ সামিয়া খুবই দুর্বলভাবে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল, বলল, ‘ইউনিভার্সিটিতে।’ হাসানের মা বললেন, ‘একই কথা। মাস্টারি হচ্ছে মাস্টারি। আমার বাড়ির বউ মাস্টারি করবে, সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এই বাড়ির বউ হয়ে এলে তোমার কিসের অভাব থাকবে যে তোমাকে মাস্টারি করতে হবে? কাজেই স্পষ্ট করে বলে রাখি, তোমাকে চাকরি ছেড়ে ঘরে থাকতে হবে। তোমার ব্যবহারের জন্য গাড়ি থাকবে, ড্রাইভার থাকবে, কাজে সাহায্য করার জন্য বুয়ারা আছে, তোমার জন্য হাত খরচ আছে, তোমার কিসের অভাব?’

সামিয়া কিছু একটা বলার চেষ্টা করল, কিন্তু ভদ্রমহিলা কথা বলতে দিলেন না, ‘আমার বংশে বাতি দিতে হবে, আমি চাই বছর না ঘুরতেই তোমার কোলে বাচ্চা আসবে। প্রথম পুত্রসন্তান, তখন কোথায় যাবে তোমার চাকরি?’ সামিয়া আতঙ্কিত চোখে তার ভবিষ্যৎ শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। ভদ্রমহিলা গলার স্বর নিচু করে বললেন, ‘আর তোমাকে কিন্তু পোশাক-আশাকের ব্যাপারে আরো কেয়ারফুল থাকতে হবে। কপালে দেখি টিপ দিয়েছ, আমাদের ফ্যামিলিতে এই সব হিন্দুয়ানি চলবে না। ছেলের ফেসবুকে তোমার ছবি দেখলাম জিন্সের প্যান্ট আর ফতুয়া পরে আছ। ছিঃ ছিঃ মা, এটা কি একটা পোশাক হলো? বড় ঘরে আসছ, এখন বড় মানুষের মতো চিন্তা করবে।’ সামিয়া হাসানের দিকে তাকাল, ভাবল হাসান নিশ্চয়ই তাঁর মাকে থামাতে কিছু একটা বলবে। কিন্তু হাসান কিছুই বলল না, নির্লিপ্ত মুখে বসে রইল। হাসানের মা টানা কথা বলতে লাগলেন, হঠাৎ করে সামিয়া লক্ষ করল, সে আর কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে কেউ বুঝি কথা বলছে।

রিকশা করে বাসায় আসার সময় সামিয়া তাঁর বিয়েটা ভেঙে দিল। ছোট একটা এসএমএস পাঠিয়ে একটা বিয়ে আগের দিন ভেঙে দেওয়া যায়, সামিয়া সেটা জানত না। সে আবিষ্কার করল, এতবড় একটা সিদ্ধান্ত সে খুব সহজেই নিতে পেরেছে, খুবই ঠান্ডা মাথায় নিতে পেরেছে। সেটা নিয়ে তাঁর ভেতরে কোনো চাপ নেই, কোনো দুর্ভাবনা নেই, বরং হঠাৎ করে নিজেকে কেমন জানি ভারমুক্ত মনে হতে থাকে।

সামিয়ার মা বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা শুনে কেমন যেন রক্তশূন্য হয়ে গেলেন। বসার ঘরের দরজাটা ধরে অবিশ্বাসের গলায় বললেন, ‘তুই কী বলছিস? বিয়ে ভেঙে দিয়েছিস?’ সামিয়া শান্ত গলায় বলল, ‘হ্যাঁ মা, আমি বিয়ে ভেঙে দিয়েছি।’ সামিয়ার মা আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিয়ে ভেঙে দিয়েছিস? আগের দিন কেমন করে বিয়ে ভেঙে দেয়?’ সামিয়া হাসার চেষ্টা করল, বলল, ‘খুব সোজা মা। আমি এসএমএস করে দিয়েছি। আমার বন্ধুকে ফোন করে দিয়েছি, সে আসছে। ডায়মন্ডের এনগেজমেন্ট রিংটা ফেরত নিতে আসবে।’

সামিয়ার মা মেঝেতেই বসে পড়লেন, হাহাকারের মতো শব্দ করে বললেন, ‘তুই এটা কী করলি সর্বনাশী! এখন আমাদের কী হবে? আমি লোকজনের কাছে মুখ দেখাব কেমন করে?’ কথা শেষ করে মা মাথা ঠুকতে ঠুকতে বললেন, ‘এর আগে আমি মরে গেলাম না কেন? কেন আমি মরে গেলাম না?’

সামিয়া তার মাকে ধরতে গেল, মা ঝটকা মেরে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। সামিয়ার ছোট বোন লামিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে পুরো দৃশ্যটি দেখছিল। এবারে সে কাছে এসে সামিয়াকে হাত ধরে সরিয়ে নেয়, তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘আপু, তুমি যেটা করেছ, সেটা ঠিক করেছ। এক্কেবারে ঠিক। আম্মু তোমাকে যাই বলুক না কেন, তুমি মন খারাপ করো না, আর কেউ থাকুক আর নাই থাকুক, আমি তোমার সঙ্গে আছি।’

সামিয়া লামিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল, বলল, ‘থ্যাংকু লামিয়া।’
এটি একটি কাল্পনিক গল্প। বিশ্ব নারী দিবসে বসে কিছু একটা লিখতে গিয়ে কেন এ রকম একটি গল্প লেখার ইচ্ছে করল, আমি জানি না। মনে হয়, গল্পটি কাল্পনিক হলেও যে বিষয়টির কথা বলা হয়েছে সেটা কাল্পনিক নয়, আমাদের চারপাশে প্রতিমুহূর্তে এগুলো ঘটছে এবং আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি—সেটি একটি কারণ।

আশা করে আছি, আমাদের দেশে একদিন এ রকম একটি গল্প সত্যি সত্যি পুরোপুরি কাল্পনিক একটা গল্প হয়ে যাবে। বিশ্ব নারী দিবসে সেটি আশা করা, নিশ্চয়ই খুব অন্যায় কোন আশা নয়।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ১৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.