বর্বরতায় একাত্তরকে হার মানিয়েছে

মার্চ ৩০, ২০১৩

2013-03-28-13-23-32-515444546b7d2-lalmoni2ঢাকা জার্নাল: লালমনিরহাটে স্কুলের শিক্ষক ও শিশুদের ওপর বিরোধী জোটের ৩৬ ঘণ্টা হরতাল শেষে হরতাল সমর্থকদের হামলার পর শিক্ষক ও ছাত্ররা এখনও আতঙ্কে৷ হামলার ঘটনা একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা৷

আর ছাত্রদের কথায়, তাদের চড় থাপ্পর নয় টেনে হিঁচড়ে স্কুল থেকে বের করা হয়৷

লালমানরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজনিন জাহান৷ এই সাহসী নারীর কারণেই বৃহস্পতিবার অনেক শিশু হামলার হাত থেকে বেঁচেছে৷ হরতাল সমর্থকরা স্কুলে হামলা চালানোর পর পরই তিনি হামলা প্রতিরোধ করে স্কুলের মাইকে তার খবর ছড়িয়ে দেন৷ প্রতিরোধের আহ্বান জানান অভিভাবক এবং এলাকাবাসীকে৷ আর অভিভাবকরা দ্রুত চলে আসায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায়৷

কেন তিনি এতটা সাহসী হলেন? তার জবাব, ১২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা তার সন্তানের মতো৷ তারা তার কাছে পবিত্র আমানত৷ তাই তিনি বসে থাকতে পারেননি৷ সন্তানদের রক্ষায় যা করণীয় করেছেন৷

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতাল সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ে৷ প্রথমেই তারা প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাইকে মারধোর করে৷ আর বলতে থাকে ‘শালা সরকারের দালাল হরতালের দিনে স্বুল খুলেছ কেন?’ এরপর তারা বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের চড়-থাপ্পড় মেরে বই খাতা ছুড়ে ফেলে দেয়৷ তাদের হাত-পা ধরে টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে৷ এসময় ভয়ে আতঙ্কে শিশুরা কাঁদতে থাকে, কেউ কেউ ছুটে বাইরে বের হয়ে যায়৷

নাজনিন জাহান বলেন, শুনেছি একাত্তরে শিশুদেরও রেহাই দেয়া হয়নি৷ আর এবার নিজ চোখে দেখলাম শিশুদের ওপর হামলার দৃশ্য৷

হামলায় আহত কয়েকজন ছাত্র জানায় তাদের প্রধান শিক্ষককে মারধোরের পরই তাদের ক্লাস রুমে ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা৷ তাদের হাতে লাঠি সোটা ছিল৷ তাদের তারা লাঠি দিয়েও পেটায়৷

নাজনিন জাহান আরো জানান, শনিবার স্কুল খোলা থাকবে৷ তাই তারা আতঙ্কে আছেন তাদের ওপর যদি আবার হামলা হয়৷ কারণ যারা হামলা চালিয়েছে তাদের চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ আর তারাও হামলাকারীদের নাম পুলিশের কাছে বলে দিয়েছেন৷

তিনি জানান, তারা নয়জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর সবাই নারী৷ তাই আতঙ্ক একটু বেশি৷ তবে এই সাহসী নারী প্রত্যয়ের সুরে বলেন, আবার হামলা করলে এবার সরাসরি প্রতিরোধ করব৷

অভিভাবক লুৎফর রহমান জানান, মাইকে খবর পেয়ে তার গিয়ে দেখেন স্কুলের আসবাপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ বইপত্র ছিড়ে ফেলেছে হামলাকারীরা৷ ভেঙে ফেলা হয়েছে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ড৷ তাদের হামলায় বেশ কয়েকটি শিশু আহত হয়েছে৷ তারা তখন অঝোরে কাঁদছিল৷

তিনি অভিযোগ করেন স্থানীয় বিএপি নেতা আমিনুল ইসলাম আমুর নেতৃত্বে এই হামলা চালান হয়৷ তারা ছেলেরাও তার সঙ্গে ছিল৷

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জমির উদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষককে মারপিট ছাড়াও হামলায় ১৪টি শিশু আহত হয়েছে৷ তারা মামলা নিয়েছেন এবং চারজনকে গ্রেপ্তার করেছেন৷ বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷

তবে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজার রহমান বাবলা দাবি করেন স্কুলে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ পাশেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল তাতে ভয় পেয়ে কয়েকটি শিশু পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে৷ তাঁর দাবি, স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক আওয়ামী লীগ করে৷ তাই তারা বিএনপিকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিক রঙ দিয়েছে৷ এখন যে শিশুরা হামলার অভিযোগ করেছে, তারাও কি আওয়ামী লীগ করে? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সব কিছু জানানোর কথা বলেন ৷

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলার পর হরতাল সমর্থকরা পাশের খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়েও হামলা চালায়৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.