বাংলাদেশে বাংলার আকাল ।। আবুল কাশেম চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬

BANGLAবাংলাদেশে বাংলার আকাল ।। আবুল কাশেম চৌধুরী : বাংলাদেশে বাংলা ভাষার আকাল! সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বাংলায় কিছু লিখতে পারেন না। প্রায়ই নির্দেশনা দিয়ে থাকেন ইংরেজিতে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলা প্রবেশ করতে পারেনি। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানও দরপত্রসহ দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে ইংরেজিতে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার ব্যবহার অনুপস্থিত।

এ যেন বিধির বিধান! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান তাদের কর্ণে প্রবেশ করেনি। তারা আমলেও নিতে চাইছেন না বাংলা ভাষা সর্বত্র চালু করার সরকারি নিদের্শনা। বাংলা ভাষায় কার্যক্রম পরিচলনা করতে তারা আগ্রহী নন। ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোথাও বাংলার ছোঁয়া পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এ ধরনের দৃষ্টান্ত নেই।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছিলেন সকল কর্মকা- বাংলায় করতে। যেসব ইংরেজি শব্দের বাংলা জানা নাই, সে ইংরেজি শব্দ বাংলায় লিখে কার্যক্রম চালাতে হবে। বঙ্গবন্ধু আদেশ তখনও তারা মানতে চায়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাদের পোয়াবারো হলো। বাংলাদেশের আমলা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বাংলায় লিখতে/পড়তে ও কাজ করতে অনিহার অন্ত নেই। তারা মনে করে, বাংলায় কাজ করা অযোগ্যতার পরিচয় এবং অমর্যাদাকর।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলায় কাজ করা হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তা প্রায় অচল। ছোট বড় বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা বিরাজমান, বাংলা ভাষার ঠাঁই নেই কোথাও। তারা মনে করেন, বাংলা ভাষায় কার্যক্রম পরিচালনা করা অমর্যাদাকর। আমলা ও বিত্তবানরা তাদের সন্তানদের বেশি টাকা খরচ করে ইংলিশ স্কুলে লেখাপড়া করিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন।

২১ ফেব্রুয়ারি ও বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এসব দিবস পালনে প্রাণের ও আন্তরিকতার ছোঁয়া নেই, আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। পৃথিবীর কোনো জাতি নিজ ভাষায় পারদর্শী না হলে সে জাতি যথাযথ উন্নতি লাভ করেনি, করতে পারে না। আমরা নিজ ভাষার প্রতি যত্নশীল নই, বাংলাদেশ যথার্থ উন্নতি লাভ করতে পারেনি সে হীনমন্যতার কারণে। ইউরোপ/আমেরিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশের উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে : জাপান, জার্মানি. ইতালি, রাশিয়া।

বাংলাদেশের মানুষ শুধু ইংরেজিতে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চায়। এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত পত্র ইংরেজিতে ছাপানো হয়। বাংলায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে, দাওয়াত পত্র ছাপানো হলে জাতে ওঠা যাবে না। দুনিয়ার কোথাও এরকম নজির পাওয়া যাবে না। নিজ দেশে যেন পরগাছা! বাঙালি জাতি কখনো স্বাধীন জাতি ছিল না বলে মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। মুঘলরা আমাদের শাসন করেছিল হাজার হাজার বছর, ব্রিটিশরা শাসন করেছে ১৯০ বছর, পাকিস্তান শাসন করেছে ২৩ বছর। ঔপনিবেশিক ধ্যান ধারণা/মানসিকতা আজও পরিবর্তন করতে পারিনি আমরা।

পরিবারে, অফিস আদালতে বাংলার চর্চা নাই বললেই চলে। এজন্য ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অসংখ্য তরুণ/যুবক জীবনদান করেনি। বাংলাকে অবহেলা/অবজ্ঞা করা সমীচীন হতে পারে না। বাংলা ভাষার অবহেলা বাঙালি জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে বলা মুশকিল। ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে শহীদ মিনারে, শহীদ বেদিতে ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে নিজ দায়িত্ব শেষ করতে চায়, অথচ বাংলার চর্চা করতে চায় না, তা কি সমীচীন?

ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি সুপ্রশিক্ষিত দুর্ধর্ষ সেনাদের পরাস্ত করে আমরা অর্জন করি বিজয়। সে বিজয় অর্জনের ৪৪ বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ আজও আমরা আমাদের মাতৃভাষা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। অফিস আদালতে চালু করতে পারিনি বাংলা ভাষা। আদালতের রায় এখনও ইংরেজি ভাষায় লেখা হয়। এই দুঃখ ও লজ্জা রাখব কোথায়? বাংলা ভাষা সর্বত্র চালু করতে না পারা দুঃখজনক এবং মাতৃভাষার প্রতি অসম্মান। ভাষার প্রতি অমর্যাদা কখনো কাম্য হতে পারে না। শহীদের রক্তের সঙ্গে তা এক প্রকার বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। একুশের শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদ আমাদের ক্ষমা করবে না।

স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা ভাষা মোটেই সমৃদ্ধ নয়। আমরা জানি আর না জানি, কথায় কথায় ইংরেজির চর্চা করি। ভুল ইংরেজি বলে নিজেরা তৃপ্তি পেতে চাই। এ অবস্থা জাতিকে সমৃদ্ধ করেনি এবং করবে না। নিজেদের দীনতা প্রকাশ পায়। ইংরেজি ভাষা শিখব/জানব, তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তাই বলে মাতৃভাষাকে এড়িয়ে কেন? জ্ঞান চর্চা করতে হলে ভাষা শেখার বিকল্প নেই। যদিও আমাদের সমাজে জ্ঞানী-গুণী মানুষের মর্যাদা নেই। আছে শুধু টাকাওয়ালাদের মর্যাদা, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ পথে আয়-রোজগার করে থাকেন। তারা সম্মানীত হন সমাজে ও রাষ্ট্রে।

আমাদের সমাজ আজ রুগ্ন। রুগ্ন সমাজের পরিবর্তন দরকার। দুর্নীতি নামক রোগের চিকিৎসা হচ্ছে জ্ঞানী-গুণী মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। জ্ঞানী-গুণী ও সৎ মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সম্মলিত প্রয়াস দরকার। মিথ্যাচার, চালবাজি, ঠকবাজির অবসান ঘটিয়ে সুস্থ ও সৎ মানুষের সমাজ গঠন করা নৈতিক দায়িত্ব। নৈতিকতাবর্জিত ও দায়িত্বহীন মানুষ জাতির কলঙ্ক। যারা নিজ ভাষার মর্যাদা প্রদান করে না, তারা কি দায়িত্ববান/কর্তব্যপরায়ণ মানুষ? যারা নিজ ভাষাকে প্রাধান্য দেয় না, তারা কি জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম? যারা জ্ঞান অর্জন করে না, তারা কি কর্তব্যপরায়ণ হতে পারে?

জ্ঞান ছাড়া সমাজের বিকাশ হয় না। মাতৃভাষাকে গুরুত্ব সহকারে সর্বত্র প্রচলন করা আমাদের নৈতিক কর্তব্য, না করা হলে নিজের প্রতি অবজ্ঞা করা হবে।  শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আনুষ্ঠানিকতা/রেওয়াজে পরিণত করা হয়েছে, যা কাক্সিক্ষত হতে পারে না। শহীদ দিবস, স্বাধীনতা, বিজয় দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা জাতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। আমি যতদূর জানি, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করতে যায়, কেউ কেউ কেউ বৃত্তি নিয়ে পড়তে যায়। সে শিক্ষার্থীদের সে দেশের ভাষা আগে শিখতে হবে, তারপর পড়াশুনা। তারপরেও আমাদের বোধোদয় হয় না নিজ ভাষা সম্পর্কে।

আমাদের নতুন প্রজন্ম জানে না শহীদ দিবস কী,স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কী? এসব দিবসের তাৎপর্য কী? কেন শহীদ দিবস? কেন স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস? এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয় না। পাকিস্তান আমলে আমি যখন স্কুলে লেখাপড়া করতাম, সে সময়ে ১৪ আগস্ট ও ৭ অক্টোবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতো না। ক্লাস হতো না বটে, তবে নানা প্রকার আয়োজন রাখা হতো। সকাল বেলা নানা খেলাধুলা, শরীর চর্চা, বিকেলে ওই দিবসের ওপর আলোচন করা হতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীন বাংলাদেশে সে ব্যবস্থা নির্বাসিত। আমি ২০১৩ সালে আমার এক লেখায় সে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সে লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। আমি আমার লেখনিতে প্রস্তাব করেছিলাম, ২১ ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি থাকবে না। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করবে, বিকেলে শিক্ষার্থীদের সামনে বিজ্ঞজনরা একুশের ওপর আলোচনা করবেন। অনুরূপভাবে জাতীয় দিবস ও বিজয় দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের আলোচনা করা প্রয়োজন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। তা করা হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেসব দিবসের তাৎপর্য বুঝতে সক্ষম হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠবে। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে সহায়ক হবে।

এ নিয়ম চালু হলে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে, তাদের পুর্বসূরিরা কত মহৎ কাজ করেছেন, কত ত্যাগ করেছেন, কেন ত্যাগ করেছেন? বাঙালি জাতির জন্মতে কত ত্যাগ? ত্যাগ আর রক্ত কত? জাতির জন্মতে মিশে আছে ৩০ লাখ শহীদের জীবন। ২ লাখ ৬৯ হাজার মা-বোনের ইজ্জত। অসখ্য মানুষের পঙ্গুত্ব। তাদের রক্ত ঋণ শোধ করতে হবে নতুন প্রজন্মকে। জাতির সমৃদ্ধি আনয়ন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। সৎ, নিষ্ঠাবান নাগরিক হয়ে জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে প্রজন্মকে।

বাংলাদেশে শিক্ষিত মানুষের বড় অভাব। শিক্ষিত মানুষের যেসব গুণাবলি থাকার প্রয়োজন সে গুণাবলি সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষদের চরিত্রে নেই। ঠকবাজ, প্রতারণা ও দুর্নীতিমুক্ত সৎ নিষ্ঠাবান শিক্ষিত মানুষ বাংলাদেশে পাওয়া দুষ্কর। বাংলাদেশে আছে লেখাপড়া জানা মানুষ। লেখাপড়া জানা মানুষ মানে শিক্ষিত মানুষ নয়। লেখাপড়া জানা মানুষ দুর্নীতিবাজ, ঠকবাজ, প্রতারক, নানা অপকর্মে লিপ্ত। আমলা ও ব্যবসায়ীরা বিদেশে অর্থ পাচার করেন। উকিল সাহেবেরা নাম করা সন্ত্রাসীদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে তাদের জামিনে মুক্ত করেন, নকল আদেশের বলে জেল থেকে আসামিকে খালাস  করেন। অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

যারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কৌশলে, তারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে, সন্তান পরিবার-পরিজনকে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করে। প্রকৃত ও সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিকেরা এ রকম নিন্দনীয় কাজ করে না। সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী দেশবাসীর প্রয়োজন। সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী দেশকে এগিয়ে নেবে। সুশীল ও জ্ঞানীগুণী মানুষের রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা/অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশপ্রেমিক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই। সৎ ও ভালো মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা জাতিকে দিতে পারে একমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা।

কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষার প্রচলন অপ্রতুল, জ্ঞান অর্জনের পথ সীমিত। শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা ভাষার প্রচলন অনেক কম। ১১ রকম শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। শিক্ষার মাধ্যম হতে হবে বাংলা ও একমুখী। সর্বত্র বাংলা ভাষার চর্চা করতে হবে। দেশপ্রমহীন ও দুর্নীতিবাজ লেখাপড়া জানা মনুষ পশুর চেয়েও অধম। বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা এই শ্রেণির মানুষ, যারা কথায় কথায় ইংরেজি বলেন।

দুর্নীতি দেশের প্রধান সমস্যা। ড. আবুল বারকাতের ভাষায় বলি- তিন লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ ঋণ ও অনুদান হিসেবে পেয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ২৫ ভাগ দেশের কাজে ব্যয় করা হয়েছে বাকি টাকা লোপাট করেছে লেখাপড়া জানা মানুষেরা। সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের টাকা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণ করতে যায়। যে শিক্ষায় মানুষকে মানুষ বানায় না, সে শিক্ষা জাতির প্রয়োজন কী? স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪৪ বছরে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ ভাগের উন্নতি হয়নি, শিক্ষিত বলে দাবিদার দুর্নীতিবাজ মানুষের কারণে।

বাঙালি জনগোষ্ঠীকে ঠিকমতো বাংলা পড়তে হবে, জানতে হবে, শিখতে হবে। দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। বাংলার চর্চা ছাড়া বাঙালি হওয়া যাবে না। বাংলাদেশের উন্নতি হবে না। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানবসন্তান এমনি এমনি জীবন দেয়নি। দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী জীবন দিয়েছে দেশমাতৃকার স্বার্থে। ত্যাগী মানুষদের মূল্যায়ন করতে হবে, তা  না হলে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে জাতি ত্যাগী বীরদের মূল্যায়ন করে না সে জাতিতে ত্যাগী বীরের জন্ম হয় না। ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার ফলে ভোগবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ভোগবাদী সমাজ দেশবাসীর জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে ত্যাগের দৃষ্টান্ত নেই, আছে শুধু ভোগের সাম্রাজ্য। মুক্তিযোদ্ধারা কার আগে কে জীবন দেবে, সে প্রতিযোগিতা করেছে। একুশের শিক্ষা ত্যাগের শিক্ষা, মাথা নত না করার শিক্ষা। অন্যায়/অপকর্মের প্রতিরোধের শিক্ষা।

বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর যেখানে গিয়েছিলেন, সবখানে বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন আন্তর্জাতিক মহলে। তার পরের শাসকরা বাংলা বলতে, বাংলায় ভাষণ দিতে লজ্জা বোধ করতেন। অনেকে ধার করা ইংরেজিতে বক্তৃতা করেছেন বিদেশে। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ও বিদেশে বাংলায় বক্তৃতা করে আসছেন। আপাদমস্তকে জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন বাঙালি। আমদের নেতৃবৃন্দের সে গুণের বড় অভাব। দেশ প্রেম নেতাদের কার্যক্রমে পাওয়া যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশপ্রেমিক নেতা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। শহীদ দিবস,স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, নববর্ষ দিবস যেন রেওয়াজ বা কনভেনশনে পরিণত না হয়, সে দিকে সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আন্তরিকতার সাথে আমাদের সে দিবস পালন করতে হবে।

শহীদ দিবসে এসে একুশের বেদিতে ফুলের মালা দিয়ে নিজেরা বিদেশি ভাষায় কথা বলব, তা কি মানানসই হতে পারে? বাংলা ভাষাকে সর্বত্র চালু করার দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে দেশে, বিদেশি ভাষার প্রচলন সংকুচিত করতে হবে। মাতৃভাষা মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা পুরণ হবে না। একুশের শহীদেরা আমাদের অভিশাপ দেবে।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিষ্ঠাতা/প্রাক্তন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : মতামত লেখকের নিজস্ব। এর জন্য রাইজিংবিডি কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.