‘পুলিশের সরাসরি গুলির বিধান আইনে নেই’

মার্চ ২৯, ২০১৩

ctg_New_Market_Fight_1ঢাকা জার্নাল: নাশকতায় জড়িতদের সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বিশ্লেষকরা বলছেন পুলিশ কখন গুলি করতে পারবে আর কখন পারবে না, তা আইনেই আছে৷

তাঁরা মনে করেন, সন্ত্রাস দমনে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার আগে সরাসরি গুলি করা হলে তা হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷

বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলের ৩৬ ঘণ্টা হরতাল শুরুর আগের দিন মঙ্গলবার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের সরাসরি গুলির নির্দেশ দেন৷ যার সমালোচনা করে বিরোধী দল৷ আর সমালোচনার জবাবে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইনেই সরাসরি গুলি করার বিধান আছে৷

তবে আইনের এই বিধান সরাসরি গুলি করার নয় বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান৷

তিনি জানান, পুলিশ কখন কোন ধরণের শক্তি প্রয়োগ করবে তা আইনে আছে৷ গুলি করার প্রশ্ন আসবে সর্বশেষ পর্যায়ে৷ যখন জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার আর কোনো পথ থাকবে না তখনই গুলি করা যাবে৷ আর গুলি করার যে প্রয়োজন ছিল তা পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে৷ অর্থাৎ, গুলির ঘটনা যৌক্তিক হতে হবে৷ এ কারণেই পুলিশের প্রতিটি গুলির ঘটনাই তদন্তের বিধান আছে৷ যদি গুলি করাকে যৌক্তিক প্রমাণ করা না যায় এবং গুলিতে কেউ যদি মারা যান, তাহলে তা হত্যাকাণ্ড বলে বিবেচিত হবে৷ এবং দায়ী পুলিশ সদস্যকে সেজন্য আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখিও হতে হবে৷

তবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন ও প্রাণহানির ঘটনা উদ্বেগজনক৷ বিরোধী দলকেও এ বিষয়ে সংযমী হতে হবে৷ পরিস্থিতি যদি এমন হয় সন্ত্রাস ও দাঙ্গা-হাঙ্গামাই সরকার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান অস্ত্র, তাহলে পুশিকেও জান-মাল রক্ষায় চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হতে পারে৷

তবে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান মনে করেন সর্বোচ্চ সংযমই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেখান উচিত৷

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি গুলির নির্দেশ মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ নাশকতা, সন্ত্রাস ও দাঙ্গা-হঙ্গামা বন্ধের কৌশল আছে৷ শুধু কৌশল নয়, আইনও আছে৷ আইনে সরাসরি গুলির কথা কোথাও বলা হয়নি৷ লাঠি চার্জ, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেটসহ আরো অনেক কৌশল ব্যবহারের পরই গুলির প্রশ্ন আসে৷ আর গুলি করার উদ্দেশ্য হবে হত্যা নয়, ছত্রভঙ্গ বা নিবৃত্ত করা৷

তিনি বলেন, বিরোধী দলের যে আন্দোলন চলছে তাতে সহিংসতা হচ্ছে৷ কিন্তু এই সহিংসতা বন্ধে সরাসরি গুলি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ সহিংসতা না কমে বরং আরো বেড়ে যেতে পারে৷

বরং তিনি মনে করেন, সারা দেশে গত ফেব্রুয়ারি থেকে যে সহিংসতা চলছে তা প্রতিরোধে পুলিশ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে৷ জামায়াত-শিবির যে তাণ্ডব চালাতে পারে তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবরও প্রকাশ পেয়েছে৷ কিন্তু আগাম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ এমনকি পুলিশকে খবর দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি৷ সুতরাং এই পুলিশকেই যদি আবার সরাসরি গুলির নির্দেশ দেয়া হয়, তাহলে সে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে৷ দেখা যাবে সন্ত্রাসী বা নাশকতা সৃষ্টিকারী নয়, এর শিকার হবে সাধারণ মানুষ৷সূত্র: ডয়েচ ভেলে

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.