শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়া: কেবল আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ

জানুয়ারি ২৬, ২০১৬

Saudi arabঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশি কর্মীদের অন্যতম বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরব। ২০০৮ সালেও  দেশটিতে এক লাখ ৩২ হাজার একশ’ ২৪ জন বাংলাদেশি শ্রমিক যান। অথচ ২০১৫ সালে সৌদি আরবে গেছেন মাত্র ৫৮ হাজার ২৭০ জন বাংলাদেশি।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর  মৌখিকভাবে বাজারটি উন্মুক্ত হলেও কাজে তার প্রমাণ মিলছে না।

একই চিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারেরও। ২০১২ সালে দেশটিতে যেখানে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২ জন শ্রমিক যান, সেখানে ২০১৫ সালে গিয়েছেন মাত্র ২৫ হাজার ২৭২ জন কর্মী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় শ্রম বাজারগুলো বন্ধ থাকায় হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে জনশক্তি রফতানি। মলিন হচ্ছে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বপ্নও। অথচ  ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগের পরেও দেশগুলোর পক্ষ থেকে বাজার উন্মুক্ত করার ব্যাপারে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি।

বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মতো বড় শ্রমবাজারগুলোতে নামমাত্র শ্রমিক যাচ্ছেন।

গত বছর বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী গৃহকর্মী নেওয়া শুরু করে সৌদি আরব। গৃহকর্মীর (নারী কর্মীর) চাহিদাপত্রের সঙ্গে সৌদি আরবে ড্রাইভার, মালিসহ কৃষি খাতে পুরুষ কর্মী নেওয়ার চুক্তি করা হলেও এখনো সেই অর্থে পুরুষ কর্মী নেওয়া শুরু করেনি দেশটি। ফলে বড় পরিসরে উন্মুক্ত হয়নি এ  বাজারটি। তবে চলতি মাসে নারী কর্মীদের সঙ্গে একজন করে পুরুষ আত্মীয়কেও কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সৌদি। যা নতুন করে কিছুটা আশা জাগাচ্ছে।

তেলসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে গত তিন বছর ধরে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে আশ্বাস দিলেও বর্তমানে শুধু নারী ছাড়া অন্য কোনো কর্মী নিচ্ছে না দেশটি।

আর নানা নাটকীয়তার পরেও বাংলাদেশের আরেকটি বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়েনি। নিভু নিভু আলোর মতো  ‘জিটুজি’ প্রক্রিয়ায় সীমিত হারে কর্মী যাচ্ছে।

গত জুন মাসে দেশটি প্রতি বছরে পাঁচ লাখ করে তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিলেও সে প্রক্রিয়া আজো অধরা। বিষয়টিতে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুদেশ।

অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল বিএসসি বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতির খবর পাবেন। দু’দেশ এখন সর্বশেষ অবস্থায় পৌঁছেছি। আপাতত আর কিছু বলতে চাই না’।

এছাড়া অন্যান্য বড় শ্রমবাজারগুলো উন্মুক্ত হওয়াও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র- বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী আশার বাণী শোনালেও  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সেই অর্থে কোনো ‘সুখবর’ সত্যি নেই। দফায় দফায় আলোচনার পরেও শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছে বাজার উন্মুক্ত করার বিষয়টি। তবে সরকার হাল ছাড়েনি। চেষ্টা করে যাচ্ছে’।

এদিকে নতুন বাজার খোলার বিষয়েও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তবে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ওমানে এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক জায়গা পেয়েছেন।

এছাড়া কাতারেও যাচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। জনশক্তি ও প্রবাসী কল্যাণ সূত্রে জানা গেছে,  এ বছর ওমানে গেছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ১১৬ জন।  কাতারে গেছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭০ জন বাংলাদেশি কর্মী। আর মালয়েশিয়ায় গেছেন মাত্র ২৪ হাজার ৯৭৯ জন।

এছাড়া সিঙ্গাপুরে গেছেন ৪৯ হাজার ১২১ জন, জর্ডানে গেছেন ২০ হাজার ২৪১ জন, কুয়েতে গেছেন ১৫ হাজার ৬৭১ জন, বাহরাইনে গেছেন ১৮ হাজার ৬৩৮ জন, লেবাননে গেছেন ১৭ হাজার ৫৯ জন বাংলাদেশি শ্রমিক।

জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, বড় বাজারগুলোতে বিদ্যমান শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের কারণেই প্রতি বছর রেমিটেন্সের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরাট সংখ্যক অচিরেই দেশে ফিরবেন। নতুন করে এসব দেশে জনশক্তি পাঠানো না গেলে হুমকির মুখে পড়বে রেমিটেন্স আসা।

বায়রা’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, বড় বাজারগুলো উন্মুক্ত করার বিষয়ে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারাও আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, এসব বাজার উন্মুক্ত হলে আরো বেশি হারে জনশক্তি রফতানি হবে।  রিপোর্ট জেসমিন পাঁপড়ি। সৌজন্যে বাংলানিউজ।

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.