সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

মার্চ ২৮, ২০১৩

saidee-sm20130328042236ঢাকা জার্নাল: যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী’র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। এর আগে আসমী পক্ষ আপিল করেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর রায়ে যেসব প্রমাণিত অভিযোগে সাঈদীর শাস্তি হয়নি, সেগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করেছে প্রসিকিউশন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক এম কে রহমান জানান, যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সাঈদীকে ট্রাইব্যুনাল শাস্তি দেননি, সেসব অভিযোগে শাস্তির আরজি জানিয়ে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে আপিল করা হয়েছে।আপিল নম্বর: ৪০। ‌ 

আপিল দায়ের শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে নিজের চেম্বারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এম কে রহমান আরও জানান, ‘‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের মতো আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার প্রেক্ষিতে এর মধ্যে দু’টি অপরাধে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।’’

‘‘সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠন করা অভিযোগে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয়জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং ১০০ থেকে ১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার ২০টি ঘটনার অভিযোগ আনা হয়েছিল।’’

‘‘এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে ৮টি অভিযোগই প্রমাণ করতে পারায় ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্যে দু’টি অভিযোগে অর্থাৎ ৮ ও ১০ নং অপরাধে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এছাড়া ৬, ৭, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৯নং অভিযোগ প্রমাণিত হলেও এগুলোতে কোনো সাজার কথা ঘোষণা করেননি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল জানান, দুই অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় বাকিগুলোতে আর সাজা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আর বাকি ১২টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সেগুলোতেও কোনো সাজা দেননি ট্রাইব্যুনাল।’’

রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের কাছে সাজা না হওয়া প্রমাণিত ৬টি অভিযোগে শাস্তির আরজি জানিয়েছেন বলে জানান এম কে রহমান। ওই ৬টি প্রমাণিত অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের সাজা না দেওয়া মারাত্মক ভুল বলে মন্তব্য করে তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এম কে রহমান বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ অনুসারে এসব অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডই আশা করছি আমরা। আমাদের আশাবাদ, আপিল বিভাগে আমরা ন্যায়বিচার পাবো।’’

এর আগে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড বাতিল ও খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল আবেদন জমা দেন আসামিপক্ষ। বেলা দেড়টার দিকে আপিলটি করা হয় বলে বাংলানিউজকে জানান সাঈদীর অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন। তাদের আপিলের মূল বিষয়, প্রমাণিত ২টি অভিযোগ। সাঈদীর আইনজীবীরা অবশ্য জানান, ১২০ পৃষ্ঠার রায়ের প্রতিটি লাইন ধরে ধরে তারা আপিল করেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর বিধান অনুসারে, রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ সাঈদীর মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শেষ দিন।

এর ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের আরো একটি মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। সাঈদীর পক্ষে-বিপক্ষে এ আপিলের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে উঠতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় মামলা।

এর আগে আর্ন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী আব্দুল কাদের মোল্লা খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল আবেদন করেন।আর সাজা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির আরজি জানিয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

আগামী রোববার ৩১ মার্চ ওই মামলায় দু`টি আপিলের বিষয়েই একসঙ্গে শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেছেন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ। ওই শুনানরি মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ থেকে এ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। বিচারিক প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে জামায়াতের সাবেক সদস্য (রোকন) পলাতক আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, জামায়াতের বর্তমান সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা এবং নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে বাচ্চু রাজাকার ও সাঈদীর মামলায় ফাঁসি ও কাদের মোল্লার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৮, ২০১৩

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.