সৈয়দ শামসুল হকের ৮০ বছর পূর্ণ হবে ২৭ ডিসেম্বর। এই সব্যসাচী লেখকের জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধা

ডিসেম্বর ২৫, ২০১৫

6সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা পড়লে তাঁকে কবিই মনে হয়, তাঁর গল্প-উপন্যাসেও তাঁর কবি-সত্তার বিদ্যমানতা পাই, তাঁর নাটকে কবিত্ব অনিবার্যরূপে হাজির—কবিত্বময় নিখাদ আবেগের জোর সংলগ্নতা তাঁর প্রকাশকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। এত বিচিত্র ও বহুভাবে, ব্যাপক ও সার্থকভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর তিনি ছাড়া আর কে লিখেছেন! স্বতন্ত্র তাঁরা দুজনেই—ভাবে, প্রকারে ও কালিক দূরত্বে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সৈয়দ হকের অন্তত একটা মিলের কথা দিয়ে এই লেখাটা শুরু হোক। কবিত্বের শক্তি দুজনের মধ্যেই কেন্দ্রিকতা চিহ্নিত। তাঁর যা লেখা আমি পাঠ করেছি, তা থেকে একেবারে প্রসঙ্গহীন ও আলটপকাভাবেও যদি এই মুহূর্তে উত্থাপন করি—তাঁর দূরত্ব, নীল দংশন, নিষিদ্ধ লোবান, বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ, বালিকার চন্দ্রযান, ত্রাহি কিংবা এক মহিলার ছবি উপন্যাস থেকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি দিয়ে দেখানো যাবে, যেখানে কবির হাতে পরিচালিত হচ্ছেন কথাশিল্পী। কবিত্ব যে কথাশিল্পকে বাড়তি সহযোগ দিতে পারে, তার প্রমাণ সৈয়দ হকের উপন্যাস। তাঁর কাব্যনাট্য বাঙালির সাংস্কৃতিক উপাদানে পরিণত হয়ে গেছে এরই মধ্যে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নূরলদীনের সারাজীবন—অন্তত এই দুটি নাটককে বাদ দিয়ে কারও পক্ষে বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ছোট গল্পের যে নবযাত্রার সূচনা ষাটের দশকে ঘটে, সেখানেও তাঁর অননুকরণীয় উপস্থিতি। ‘তাস’, ‘শীতবিকেল’, ‘সিঁড়ি’, ‘আনন্দের মৃত্যু’, ‘কবি’, ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’ কিংবা ‘নেপেন দারোগার দায়ভার’—এসব গল্পের ভাষায় কাব্যিকতা এনে দেয় ভিন্নতর আমেজ, যা গল্পের জীবনকে, চরিত্রকে, মানবপরিণতিকে সার্থকভাবে নিরূপণ করে। আর তাঁর কবিতা! শেক্সপিয়ার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি যদি একটিও নাটক না লিখে শুধু তাঁর দেড় শ সনেটই রেখে যেতেন, তা-ও ইংরেজি সাহিত্য তাঁকে অনিবার্যতার অবস্থান ছেড়ে দিত। সৈয়দ শামসুল হক কিছুই না লিখে রেখে যেতেন যদি কেবল তাঁর পরানের গহীন ভিতর তবু তাঁর তর্কাতীত শ্রেষ্ঠতাই প্রতিষ্ঠিত হতো। তাঁর আরও কুড়ির অধিক কাব্যগ্রন্থের কথা নাহয় বাদই থাকুক। তাঁর আত্মজীবনী প্রণীত জীবন বা ভিন্নতর রচনা হৃৎকলমের টানে কিংবা কথা সামান্যই—এসবও কম বিভাময় নয়। এত অধিক সংখ্যক সার্থক সাহিত্যকর্মের রচয়িতা সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য, বাংলাদেশের জন্য, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য কী বিশাল বিস্ময় তা অনতিপরিসরে বোঝানো সম্ভব নয়।
সৈয়দ শামসুল হক, ১৯৮৫।ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়ামএকজন লেখক তাঁর দেশ-সমাজ-জনপদের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারেন না, বরং উল্টো করে বললে লেখক সর্বদা তাঁর থাকার বাস্তবতার প্রতিই অঙ্গীকার ব্যক্ত করে চলতে থাকেন। তাঁর সেই থাকাটা ব্যাহত হলে, হুমকি-ঝুঁকির মুখোমুখি হলে তিনি সেই বিপ্রতীপ আবেশ বিষয়ে তাঁর মত প্রকাশ করেন এবং সেই মত হোক কাফকার রচনার মতো দূরান্বয়ী, তবু সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে লেখককেই। কখনো কখনো এই থাকাটাকে লেখক বিশেষায়িত রূপ দেন—তিনি একই সঙ্গে রচনা করেন সংযোজন ও বিয়োজন। বিয়োজন তাঁর প্রতীকতার আশ্রয় এবং সংযোজন তাঁর সমকালীন জীবন। এ কথা জোনাথান সুইফট বা টমাস হার্ডির দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায়। সুইফটের লিলিপুট-পৃথিবী ও হার্ডির ওয়েসেক্সের জীবন যথাক্রমে সপ্তদশ-অষ্টাদশ ও অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকের ইংল্যান্ডের সমকালীন জীবন। লোকালয় থেকে সরে গিয়ে দুর্গের সুদূরে চলে যায় জীবনের পর্ব, গিয়ে এমনই প্রতীকী হয়ে যায় যে একটা মানুষ বর্ণের সমুচ্চয় থেকে অদ্ভুত এক বিবিক্তি নিয়ে বিন্দুতে এসে ঠেকে (দ্য ক্যাসল-এর ‘কে’) তবু কি আমরা সেই দুর্গাভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা লেখককে শনাক্ত করতে সক্ষম হই না! আমাদের তাই মনে হয়, দুর্গের কাহিনি আসলে কাফকার ‘ইনার বায়োগ্রাফি’। এক অর্থে লিলিপুটও হয়তো তা-ই, ওয়েসেক্সও তা-ই। কতকাল আগে, ১৯২৫-এ, স্পেনীয় শিল্পসাহিত্য-সমালোচক ওর্তেগা ওয়াই গ্যাসেৎ বলেছিলেন, প্রত্যেক লেখকের থাকতে হয় একটা ‘নিজস্ব গ্রাম’। হার্ডিকে যদি ওয়েসেক্সে পাই, তবে সৈয়দ শামসুল হককে পাব তাঁর ‘জলেশ্বরী’তে। কোথায় জলেশ্বরী—হয়তো কুড়িগ্রামে, কিন্তু সেটি সৈয়দ হকের শব্দের পৃথিবীতে একটি নবমাত্রিক অঞ্চল হয়ে উঠেছে। তাদের সারা গা আবর্জনা-ময়লামাখা থাকতে পারে, ক্ষুধার জর্জরতায় তারা হতে পারে ক্লিষ্ট থেকে ক্লিষ্টতর, তবু সেই তারাই ফুঁসে উঠতে পারে আপন শক্তিতে জীবনের প্রয়োজনে। সেই দৃশ্যই আমরা অভিনীত হতে দেখি ‘কবি’ বা ‘নেপেন দারোগার দায়ভার’ গল্পে, বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ উপন্যাসে, নূরলদীনের সারাজীবন নাটকে। দেখতে পাই, জলেশ্বরী-গঙ্গোত্রী বেয়ে উচ্ছ্রিত শব্দরাজি স্রোতের নিয়মে বয়ে আসতে-আসতে ক্রমে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ হয়ে ওঠে—

‘দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ
সবার অন্তরে মোর অন্তরের আগুন জ্বলিতেছে।
দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ
সবার অগ্নিতে সব সিংহাসনে অগ্নি ধরিতেছে।
দেখিবার অপেক্ষায় আছোঁ
মানুষ মানুষ বলি মানুষের কাছে আসিতেছে।’
.সৈয়দ হক থেকে এই যে আত্যন্তিক ক্ষুদ্র উদ্ধৃতি এতেও পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকে ইতিহাস-মানুষ আর মানুষের রণ-রক্ত লেগে থাকা ভাষার আবেগ। জলেশ্বরীর লোকভাষার আশ্চর্য অনুপম রূপ দেখি তাঁর গল্পে-নাটকে-কবিতায়-উপন্যাসে। অনন্তর জলেশ্বরীই হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। বিশ্বসভ্যতার প্রতিতুলনায় পূর্বপ্রান্তের এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের প্রায় ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর ভাষাতেই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে প্যাট্রিসিয়-প্লেবিয় তথা রোমক গোলার্ধের গল-এট্রুসকান-রোমস্পৃষ্ট আয়ত আঙিনার জীবনও চলে আসতে পারে ধরাছোঁয়ার সীমানায়। তাঁর গণনায়ক কাব্যনাটকে বিধৃত জলেশ্বরী ও বাংলাদেশের প্রাকৃত ভাষায় রোম আর বঙ্গের দুই আলাদা জগতের মধ্যে রচিত হয় মানব-চরিত্রের চিরন্তন নাট্যায়ন। বস্তুত সৈয়দ হক তাঁর গণনায়ক কাব্যনাটকটিকে শেক্সপিয়ারের জুলিয়াস সিজার নাটকের সঙ্গে মিলিয়ে তৃতীয় একটি ভাষ্য নির্মাণ করেছেন। অনুবাদক সৈয়দ হকের দক্ষতার এক গুরুত্বপূর্ণ নজির তাঁর এই নাটক। অনুবাদকর্মও তাঁর কাছে মৌলিক কাজের সমান। ফলে সল বলোর উপন্যাস, শেক্সপিয়ারের নাটক ম্যাকবেথ, টেম্পেস্ট, অডেন-লোরকা-ব্রেশটেরর কবিতা প্রভৃতির অনুবাদে কেবল বাংলা ভাষাই নয়, এ ভাষার বহিব্যতিরেক জীবনঘেঁষা রূপটিকে আমরা আবিষ্কার করি। সৃজনশীলতার সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একান্ত নিজের করে গড়ে তোলা জনজীবনের সেই ভাষাটিকে পাওয়া যাবে সৈয়দ শামসুল হকের বিবিধ সাহিত্যকর্মে। সেই ভাষার এক প্রান্তে ১৭৮৩-এর কৃষক-জীবন (নূরলদীনের সারাজীবন) আর অন্য প্রান্তে ১৯৭১-এর জনজীবন (পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়) এবং দুই শ বছরের ব্যবধান সত্ত্বেও আম্বিয়াকেই যেন আমরা পুনরায় খুঁজে পাই মাতবর-কন্যার মধ্যে।
.অনস্তিত্বে আশ্বাস নেই সৈয়দ হকের। সেই পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তাঁর লেখালেখির প্রাথমিক পর্বে তাঁকে কখনো কখনো কাম্যু-সার্ত্র–এর অস্তিত্ববাদী জীবনচেতনার প্রতিবেশিত্বে অবস্থিত বলে মনে হতে পারে। কিন্তু জীবনবাদের প্রচণ্ডতা যে জাতির গড়ে ওঠার ইতিহাসের মর্মমূলে স্থাপিত, সে জাতিসত্তার প্রতিনিধি সৈয়দ হকের পক্ষে ব্যক্তিসর্বস্ব পুঁজিবাদের জীবনচর্যার জিজ্ঞাসায় উদ্বেল হতে আর দেখা যায় না। তাই তাঁর গল্পে একে একে যুদ্ধক্ষেত্রে এসে দাঁড়ায় সেসব মানুষ, যারা জীবনের পুঁজি শূন্য জেনেও একমাত্র রক্তের বাজিকে হাতে রাখে শক্ত শিরদাঁড়ায়। তাঁর গল্পের নাম তাই ‘রক্তগোলাপ’। যুগ যুগ ধরে হয়তো মাটি ও প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে যে ব্যক্তিটি সবাইকে ছাড়িয়ে কোনো একভাবে একা ও একক হয়ে ওঠে (‘কবি’), তার নেপথ্যেও থাকে জনসমষ্টির ইতিহাস। এই মানুষটাকেই সুলতানের বর্ণ-বিশ্বে দেখি দাওয়ায় বসে দম নিচ্ছে ফের কাজে নামবে বলে। এই মানুষটাই সৈয়দ শামসুল হকের শব্দবিশ্বে কবি আবদুর রব মুনশী। এমনকি বাস্তবের কবি সপ্তদশ শতকের আবদুল হাকিমও হয়তোবা ঝিঁকিয়ে ওঠেন তিন শ বছর পরেকার আবদুর রবের মধ্যে। গ্রামীণ সমাজপতিদের বিরুদ্ধে লোককবি আবদুর রবের সংগ্রাম, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নূরলদীনের সংগ্রাম ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি নারী বিলকিসের সংগ্রাম শেষ পর্যন্ত আর ব্যক্তিতার জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাতে চাননি তাঁর অন্তিম আয়ু পর্যন্ত। সৈয়দ শামসুল হক মানুষের শক্তিতেই আস্থাবান।
.তাঁর মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা তাঁর সমগ্র সাহিত্যকর্মের আয়তনে সর্বাপেক্ষা শক্তিধর চেতনা, যা মানুষের শক্তির অপরিমেয়তার জয় ঘোষণা করে। সৈয়দ হকের ছোট গল্প-উপন্যাস-নাটক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় কথা ও কথকতার অস্তিত্ব পরীক্ষা। লেখাবাহুল্য সেই পরীক্ষায় বিস্ময়কর সাফল্য সৈয়দ হকের অর্জন। নানা আঙ্গিকে নানা বিষয়ে তিনি মুক্তির যুদ্ধকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তাঁর শব্দবিশ্বে। কেন তাঁর এই যুদ্ধচর্চা! তা জীবনের টিকে থাকার প্রয়োজনে, টিকে থেকে মর্যাদাপূর্ণ ভবিতব্য নির্মাণের প্রয়োজনে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিকশিত বাঙালির অস্তিত্বের সার্থকতা আগামী প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের জন্য। নিজেকে ইতিহাসের গতির সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে সৈয়দ হক পালন করেন শব্দত্রাতার ভূমিকা। ব্যক্তির ইতিহাসে স্বার্থপরতা থাকা সম্ভব, ব্যক্তির ইতিহাসে স্তোক থাকা সম্ভব, কিন্তু সমষ্টির সংগ্রামের কাহিনিতে ব্যক্তির স্বার্থপরতার কোনো স্থান নেই—আজ থেকে শত শত বছর পরেও যদি জাতির সামনে ইতিহাস বিকৃতির ঝুঁকি তৈরি হয়, তখনো সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এসব উপন্যাস-নাটক হয়ে উঠতে পারে উদ্ধারের সহায়তা। যেভাবে আজও বিশ্ব ফিরে যায় মারিয়া রেমার্কের কাছে, অঁরি বারবুসের কাছে, জন ডস প্যাসোসের কাছে, স্টিফেন ক্রেইনের কাছে। ইতিহাসের কাছে উপন্যাসের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গে ফ্রন্টিয়ারস অব লিটারেচার বইয়ে লরেন্স লার্নার বলেছিলেন, যা অনিবার্য, তা-ই বলতে হয় উপন্যাসকে। ঐতিহাসিকেরা—সত্য বলাই অঙ্গীকার যাঁদের—তাঁরা হতে পারেন অসতর্ক, অজ্ঞ কিংবা মিথ্যাবাদী; কিন্তু ঔপন্যাসিক—যাঁকে সত্য বলার কোনো দায় নিতে হয় না, মানুষকে তাঁর দ্বারস্থই হতে হয় অনেক সময়। লার্নার তাই বলেন, ১৮৪০-এর ইংল্যান্ডের প্রকৃত ইতিহাস যতটা না ইতিহাসগ্রন্থে—তারও অধিক বিধৃত সেই কালে রচিত উপন্যাসে। সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধ-পাঠ সম্পর্কে তাই তাঁর অন্তর্গত নামের উপন্যাসের একটি চরিত্রের বক্তব্য যুদ্ধ-পরবর্তী যেকোনো প্রজন্মের জন্য প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্ববহ—
‘আমরা এই কাহিনি আগেই শুনেছি,
এখন শুনছি
এবং ভবিষ্যতেও শুনব
আমাদের চারদিকে
আমাদের সঙ্গে যারা এ কাহিনি আগেও শুনেছে
এবং এখন শুনছে,
তাদের কাছে এ কাহিনি প্রতিবারই নতুন মনে হবে,
যেমন এখন হচ্ছে
তারা প্রতিবারই সমস্বরে, বিস্ময়ে,
প্রশংসায় গুঞ্জন করে উঠবে,
যেমন এখন উঠছে,
যেন সকলের ভেতর থেকে স্বচ্ছ সবুজ একটি গাছের চারা
লকলক করে বেড়ে উঠছে।’
এই স্বচ্ছ সবুজ চারা গাছটিরই সন্ধান করেছিলেন লরেন্স লার্নার। চেরনোবিল গ্রন্থের সর্বশেষ পঙ্ক্তি, লিখেছেন স্ভেতলানা আলেক্সিয়েভিচ: ‘আমি অনুভব করছিলাম যেন আমি লিপিবদ্ধ করেছি ভবিতব্যকেই। লিথুয়ানিয়ায় সংঘটিত বোগদান স্মিয়েলনিকির গণহত্যার দিনে মানুষ জানত না, আরও আরও লোকেরা অপেক্ষারত প্রথম বিশ্বসমরে মরার জন্য। প্রথম বিশ্বসমরের দিনে মানুষ জানত না, আরও আরও লোকেরা অপেক্ষমাণ হলোকাস্টে মৃত্যুর জন্য। কিন্তু যেটা মানুষ জানত, অবধারিতভাবেই জানত—যেটা মৃত্যুর অমোঘ রূপ নিয়ে দেখা দেবে সেটা ঘটাবে মানুষেরাই এবং সেই বিধ্বংস থেকে ত্রাতাও শেষ পর্যন্ত মানুষ-ই।’ সৈয়দ শামসুল হক তাঁর জীবনকে করে তুলেছেন মানুষের সাধনায় পরিপূর্ণভাবে নিমগ্ন এক প্রমিত জীবন, যে জীবন শব্দকে ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান জেনে সব্যসাচীর মতো বিরতিহীন তির ছুড়ে গেছে অভীষ্ঠের দিকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.