বামপন্থীদেরই মুক্তিযুদ্ধের পতাকা তুলে ধরতে হবে

ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫

01স্বাধীনতাকে ‘ষোল আনা ফাঁকিতে’ পরিণত করা হচ্ছে, বামপন্থীদেরই মুক্তিযুদ্ধের পতাকা তুলে ধরতে হবে   মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতার সুফল চলে যাচ্ছে লুটেরাদের ঘরে। ফসলের যৎসামান্য পৌঁছাচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরে। ফলে বৈষম্য-শোষণ বঞ্চনা। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও রুটি-রুজির নিশ্চয়তা আরো বেশী করে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা না হলে স্বাধীনতা ‘ষোল আনা ফাঁকি’ হয়ে উঠবে। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
আজ ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকালে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান। সভা পরিচালনা করেন বাসদ’র কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ।
সভায় নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, পাকিস্তানী গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে নতুন করে কোনো সাম্রাজ্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির গোলাম হওয়ার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন বিসর্জন দেয়নি, দেশবাসী সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ করেনি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের স্বাধীন স্বত্ত্বাকে বহুলাংশে খর্ব করা হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা বিশ্বায়নের নামে আমাদের উপর পুঁজিবাদী নয়াউদারবাদী পথ তথা বাজার অর্থনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলেছে। অর্থনৈতিক শোষণের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদ এদেশকে তার ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনায় আটকে ফেলেছে। যে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ধারায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল তা কার্যত পরিত্যাগ করে দেশকে ‘পুনঃ উপনিবেশিকরণের’ শিকারে পরিণত হতে দেয়া হয়েছে।
সভায় নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য দেশবাসীর দীর্ঘ সংগ্রামের পরিণতি ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িকতার পথ থেকে দেশকে বিচ্যুত করা হয়েছে। ‘উন্নয়ন আগে, গণতন্ত্র পরে’- এরূপ তত্ত্ব দিয়ে গণতন্ত্র হরণ করা হচ্ছে। ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বিধানটি বহাল রাখা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকার অভাবের সুযোগ নিয়ে উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী শক্তি উন্মত্ত ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি স্থানের মতো সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশেও আইএস, আলকায়দা, তালেবান কায়দায় জামাত, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাদেশ ইত্যাদি শক্তিকে লালন-পালন করছে।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেমন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির সাথে তামাশা করেছেন ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগ সরকারও স্বাধীনতার চেতনা-মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে লাখো শহীদ, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বেঈমানি করছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও দেখা যাচ্ছে যে, চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি তথা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার সম্বলিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারা আজ ভুলুণ্ঠিত। বুর্জোয়ারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে অবহেলায় পরিত্যাগ করছে। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বিজয়ের ৪৪ বছর পরেও দেশের শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারে নাই।

১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.