যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে ৩২১ কিলোমিটার পদযাত্রা!

মার্চ ২৭, ২০১৩

0,,16699694_303,00ঢাকা জার্নাল: ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডনের দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার৷শুধু দেশত্যাগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন একদল প্রবাসী বাঙালি৷

মার্চ মাস বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস৷ একাত্তরের এই মাসেই পাকিস্তানি হানাদারের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান৷ এই মাসেই তিনি দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ডাক৷ এই মাসেই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ নামে হত্যা করেছিল কয়েক হাজার নিরীহ বাংলাদেশিকে৷ মার্চে তাই বাঙালির জীবনে ঘটেছে অনেক কিছু৷

২০১৩ সালের মার্চ মাসটাকে আবারো আন্দোলন শুরুর জন্য বেছে নিলেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের সহায়তায় কিংবা নিজ উদ্যোগে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট পরিচালনা করা রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আবারো নামা হবে রাস্তায়৷ বিশেষ করে সেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যারা, একাত্তরের পর দেশত্যাগ করেছে, বাস করছে ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে৷

প্রতিবাদটি অভিনব, শিরোনাম ‘ওয়াকিং ফর জাস্টিস’৷ ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন অবধি ৩০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা৷ পথে বিভিন্ন স্থানে পথসভায় অংশ নেওয়া হবে৷ উদ্দেশ্য, দেশত্যাগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সবাইকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা৷ ব্রিটেনের মূল ধারার গণমাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা৷ বাঙালি এবং ব্রিটিশদেরকে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানানো৷ ২০ মার্চ শুরু হয় এই ‘ওয়াকিং ফর জাস্টিস’ আন্দোলন৷

কিন্তু এই অভিনব প্রতিবাদের পরিকল্পনাটি কে করেছেন এমন প্রশ্নের জবাব দিলেন ফজলুল কবির তুহিন৷ ২০ মার্চ ম্যানচেস্টার থেকে হাঁটা শুরু করেছেন তিনিসহ তাঁর সহযোদ্ধারা৷

তুহিন বলেন, ‘‘চিন্তাটা আসলে আমাদের আরো অনেক আগে থেকেই ছিল৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমরা দু’বছর আগে বাংলাদেশে একটি রোড শো করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সেটা হয়নি৷”

কথা বলতে বলতেই হাঁটছিলেন তুহিন৷ লন্ডন সময় মঙ্গলবার সকাল দশটা তখন৷ তাদের গন্তব্য এজোয়ার তখনও ছয় মাইল দূরে৷ তুহিন জানালেন, ‘‘একাত্তরের পরে অনেক যুদ্ধাপরাধী দেশের বাইরে পালিয়ে এসেছে৷ তাদের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন তৈরির চিন্তা আসে আমাদের মাথায়৷ সবাই এরকম আন্দোলন দরকার বলে মনে করছেন, কিন্তু শুরুটা ঠিক হচ্ছিল না৷ সেই শুরুটা আমরা করেছি৷”

দেশত্যাগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন এখন শুরু হয়েছে৷ তুহিনরা সেটা করেছেন ম্যানচেস্টারের ওল্ডহ্যাম থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে৷ তাদের এই দীর্ঘ পদযাত্রায় বিভিন্ন সময় সঙ্গী হয়েছেন অনেকে৷ কেউ হেঁটেছেন দশ মাইল, কেউ ছয় মাইল, কেউ তিন মাইল৷ তবে তুহিনরা হেঁটেছেন পুরো পথ৷ তিনি জানালেন তাঁর সঙ্গীদের কথা৷ তুহিন বলেন, ‘‘আমাদের মূল দলে আছেন সাজ্জাদ আজিজ মালিক, মঞ্জুলিকা জামালী, স্মৃতি আজাদ, আমিনুল হক বাদশাহ, স্বপন চৌধুরী, জুয়েল রাজ, আহাদ শাহ, শরিফুল আহমেদ এবং আমি৷”

বলাবাহুল্য, মার্চ মাসে ব্রিটেনের খোলা রাস্তায় হাঁটা মোটেই সহজ কথা নয়৷ একে প্রচণ্ড ঠান্ডা, সঙ্গে রয়েছে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত৷ কিন্তু সেসব দমাতে পারেনি এই আন্দোলনকারীদের৷ বরং ‘ওয়াকিং ফর জাস্টিস’ সাড়া জাগিয়েছে গোটা ব্রিটেনে৷ সেখানকার মূল ধারার গণমাধ্যম এই বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ বাংলাদেশি গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে কর্মসূচির বিভিন্ন খবর৷ লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা ছাড়াও ব্রিটেনের সাধারণ জনগণও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷

তুহিনরা চান, একাত্তরে দেশত্যাগী যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক৷ এই চাওয়ার বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন৷

কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে বিষয়টির দিকে সকলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা, খুলে দিয়েছেন দেশত্যাগী যুদ্ধাপরাধীদের মুখোশ৷ পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের বিচার যে বাঙালির প্রাণের দাবি, সেটাও ব্রিটেন সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা৷ আপাতত এসব প্রাপ্তিই বা কম কিসে!

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.