পৃথিবীর বিস্ময়কর শহরগুলো

ডিসেম্বর ১১, ২০১৫

18এর আগে আমরা বলেছি পৃথিবীর বিষ্ময়কর সাত শহরের কথা। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে এর শেষ পর্ব। এবারে আমরা এমন কিছু শহরের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যে শহর গুলো বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্ব জুড়ে। তাহলে চলুন জেনে নিন পৃথিবীর বিস্ময়কর আরো আটটি শহর সম্পর্কে।

 

বৃদ্ধদের শহর

নামটা ভুল পড়েননি। সত্যিই এমন শহর আছে পৃথিবীতে যেখানে কিনা সবাই বৃদ্ধ। আসলে বৃদ্ধ না হলে এ শহরে বসবাস করার অনুমতিই পাওয়া যায় না। আর এই শহরটির নাম হচ্ছে দ্যা ভিলেজেস। বৃদ্ধদের এই শহরে বসবাস করেন অবসরপ্রাপ্ত সব মানুষ। ভাবছেন শহরের অধিবাসী কজন? সেই সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। ১,০০,০০০ এর বেশি মানুষ বাস করে এই শহরে।

 

শুনতে অবাক লাগলেও এ শহরে থাকবার অনুমতি নেই কোনো শিশুর। একরকম নিষিদ্ধই বলা চলে শিশুদেরকে এ শহরে। দ্যা ভিলেজেসের পরিচিতি অবশ্য কেবল এর অধিবাসীদের কারণেই নয়, এখানকার ভায়াগ্রার কালোবাজারির জন্যেও। আর পরিসংখ্যান মতে একজন পুরুষ সঙ্গ পান দশজন নারীর। অন্যান্য অনেক স্থানের চাইতে এ শহরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গলফ খেলার মাঠ।

 

দাবার শহর

রাশিয়ার কালমাইকিয়ার রাজধানী এলিস্তাতে প্রবেশ করলে প্রথমেই যে কথাটি আপনার মনে আসবে সেটা হচ্ছে- আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! বিশেষ করে যদি দাবার প্রতি কোনরকম আকর্ষণ থাকে আপনার। কারণ পৃথিবীতে এটিই একমাত্র শহর যেটার শুরু থেকে শেষ অব্দি পুরোটাতেই রয়েছে দাবার ছাপ। রাজা, রানী, বড়ে, নৌকা- এ শহরের সব দালান আর স্থাপত্যেই রয়েছে এগুলোর ছাপ।

 

শহরটির টাউন স্কয়ারে রয়েছে বিশাল এক দাবা খেলার বোর্ড। শহরটি তৈরির সময় এখানকার মানুষেরা এতটাই দাবার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন যে কেবল দাবার অনুকরণই নয়, ১৯৯৮ সালে দাবার অলিম্পিয়াডও অনুষ্ঠিত হয় এখানে। দাবার শহর নামে পরিচিত এ শহরে এখন অব্দি ঘুরে গিয়েছেন বিখ্যাত অনেক দাবাড়ু। তবে সেটার ছাড়াও অন্য একটা পরিচিতি রয়েছে এলিস্তার। ইউরোপের বৌদ্ধদের থাকার একমাত্র শহর হচ্ছে এলিস্তা। আর এখানেই গড়ে ওঠেছে পৃথিবী বিখ্যাত বুদ্ধিস্ট জাদুঘর।

 

সুবিধাবাদী শহর

শহর আবার সুবিধাবাদী হয় কি করে, এমনটাই তো ভাবছেন? জার্মানিতে অবস্থিত বুসিনগেন এএম হকরহেইন নামের এই শহরটি সুইজারল্যান্ড থেকে আলাদা হয়েছে সুক্ষ্ণ একটা রেখার দ্বারা। তবে এই শহরের অধিবাসীরা শুধু জার্মান সুবিধাই ভোগ করেন না তারা সুইজারল্যান্ডেরও সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

 

মোটকথা, একটা শহর হয়েও এটি সুবিধা নেয় দুই রাষ্ট্র থেকেই। এভাবে একটি শহর হয়েও দু দুটো দেশের সুবিধা পাওয়ায় সুবিধাভোগীদের শহর হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে এটি।

 

নকল শহর

শহর আবার নকল কি করে হয়? এমন প্রশ্ন জাগলেও এই আস্ত শহরটি তৈরি হয়েছে ব্রিটেনের একটি শহরের আদলে। নাম দেওয়া হয়েছে টেমস টাউন। নামের মতোই টেমস নদীর তীরে গড়ে ওঠা লন্ডনকে অনুকরণ করে তৈরি হয়েছে এই শহরের সবকিছু। এর অবস্থান চীনের ভেতরে।

 

এই শহরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ স্থাপত্য, রাস্তা, লাল রং এর টেলিফোন বুথ। এখানে ব্রিটেনের স্থানীয় সব ধরনের খাবারও পাওয়া যায়।

 

সালফারের শহর

বসবাসের অযোগ্য জাপানের এই দ্বীপ শহরটিতে রয়েছে সালফার গ্যাসের ছড়াছড়ি। শহরটির পাশেই রয়েছে আগ্নেয়গিরি। সেখান থেকেই উৎপন্ন সালফার বিষে যেকোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ বিপর্যায়। প্রায় সময়েই এখানকার মানুষদেরকে দেখা যায় গ্যাস মাস্ক পড়ে ঘুরতে।

 

খুব অদ্ভূত রকমের একটি শহর হলেও এ শহরটিকে ছেড়ে এখনো যাননি এর অনেক অধিবাসীরা। আর এই শহরটির নাম হচ্ছে মিয়াকে-জিমা। মিয়াকে-জিমা এমনিতে বেশ সুন্দর হলেও এখানকার অধিবাসীদের মুখের মাস্ক বারবারই আপনাকে মনে করিয়ে দেবে ভভিষ্যতের বিপদের কথাও।

 

বামনদের শহর

চীনের এই শহরটির ঘর-বাড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুই ছোট ছোট। অনেকটা যেন খেলনা পুতুলের শহর এটি। আর এই শহরটির নাম হচ্ছে বামন শহর বা ডোয়ার্ফ ভিলেজ। যেখানে পুতুলের মতন ছোট ছোট ঘর বাড়িতে ক্ষুদে আকৃতির মানুষ বাস করেন।

 

সাধারন আর সব মানুষের করুনার পাত্র না হতে চান না বলেই নিজেদের মত করেই একটি শহর তৈরি করে নিয়েছেন এখানকার অধিবাসীরা। তবে ভাববেন না যে এখানে কোনো কাজ ছাড়াই ঘরে বসে থাকে বামন মানুষগুলো। তারা আর দশটা সাধারন মানুষের মতোই কাজ করে এখানে। এখানকার পার্কে। পর্যটকদেরকে স্বাগত জানান, কেউ কেউ খেলাও দেখান পর্যটকদের মনোরঞ্জন করতে। সব মিলে বেশ ভালোই কাটে তাদের দিনকাল।

 

ভূগর্ভস্থ শহর

এর আগের প্রতিবেদনটিতে আপনারা জেনেছেন পাহাড়ের খাঁজে গড়ে ওঠা শহরের কথা। এবার বলছি এক মাটির নীচে গড়ে ওঠা এক শহরের কথা। অস্ট্রেলিয়ার কবার পেডি নামের এ শহরটির পুরোটাই নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে মাটির নীচে। কাবার পেডি নামের এ শহরটি বসবাসের জন্য একটি দারুণ জায়গা। কেননা এ অঞ্চলের ঠান্ডা পরিবেশ ও থাকার সুব্যবস্থার জন্য এর খ্যাতি রয়েছে।

 

শহর গড়ে ওঠার এখানে এটি ছিল খনি। সেই খনিগুলো বন্ধ হয়ে গেলে সেগুলোকে ফেলে না রেখে সেখানেই তৈরি করে নেওয়া হয় ঘর-বাড়ি। গড়ে ওঠে শহরটি।

 

এক দালানের শহর

কতগুলো দালান, খেলার মাঠ, প্রশাসন, পুলিশ, পোস্টঅফিস, হাসপাতাল, বিদ্যালয়- এসবকিছু মিলেই গড়ে ওঠে একটি শহর। আলাস্কার হোয়াইটার নামের শহরটিতে সাধারণ শহরগুলোর মতো সব উপাদান রয়েছে। তাই পুরো একটি শহর গড়ে উঠেছে একটি মাত্র দালানের ভিতর।

 

শহরের কেন্দ্রস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ তলার একটি দালান। আর এখানে বাস করেন প্রায় ২২০ জন মানুষ। বেইজিক টাওয়ার নামে পরিচিত এই দালানটি সাবেক আর্মি ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটিই শহরবাসীর একমাত্র আশ্রয়স্থল। অদ্ভূত এই দালানে থাকবার ঘরের পাশপাশি রয়েছে দরকারি ডাকঘর, পুলিশ স্টেশন, বিদ্যালয়, চার্চ, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ছোটখাটো বাজারও। আরো আছে শরীরচর্চার জন্যে জিম আর ভূগর্ভস্থ টানেল। একটি ১৪ তলার ভেতরেই সাজানো সবকিছু।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.