দেশে চাকরী নাই, তাই বিদেশ যাই
মার্চ ২৬, ২০১৩ সম্প্রতি এক পরিচিত’র সাথে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিলাম।তিনি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশভালো ফলাফল নিয়েই স্নাতকত্তোর সম্পন্ন করেছেন। কথায় কথায় তিনি বললেন, খুব দ্রুত বিদেশে চলে যাবেন ভাবছেন । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন ?
তার সহজ উত্তর, দেশে ভালো চাকুরির খুবই অভাব , তাই ভাগ্য ফেরাতে বিদেশে পাড়ি জমাবেন । এ কথা শোনার পরে আমি বেশ উৎসাহ নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন করলাম, বিদেশে গিয়ে কি কাজ করবেন? তার উত্তর: যে কোন কাজ করতেই তিনি প্রস্তুত। তা যতই ছোট হোকনা কেন।
আমি জানতে চাইলাম, বিদেশে যাওয়ার জন্য তিনি কত টাকা খরচ করবেন? তার উত্তর,পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা বাজেট ধরে রেখেছেন। যতটুকু জানি, আমার এই পরিচিত’র পরিবারটি মূলত গ্রামের একটি কৃষি নির্ভর পরিবার, আর তাই তার এই বিদেশ যাওয়ার টাকাটাও হয়ত আসবে তার পরিবারের কোন কৃষি জমির বিক্রয় থেকে।
অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করতেই নিশ্চিত হলাম। বলা প্রয়োজন, তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুনে আমি একটু হতাশই হয়েছি।
বরাবর কৃষি খাতের প্রতি আমার কোথায় যেন একটা দূর্বলতা কাজ করে। আমার বাবা-চাচারা কৃষিকাজের সাথে জড়িত না থাকায় কখনো কখনো এ নিয়ে আফসোস করেছি। যাই হোক, আমি তাকে পরামর্শ দিলাম তিনি যদি বিদেশে না গিয়ে দেশেই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষি কাজে নিজেকে সম্পৃত্ত করেন, তাহলে দেশেই আর্থিক সচ্ছলতা পেতে পারেন। এবং এখন অনেক তরুনেরাই স্বপ্রণোদিত হয়ে এ কাজ করছেন। কিন্তু তিনি আমার এ পরামর্শ কানেই নিলেন না।
এই পরিচিত’র ‘দেশে ভালো চাকুরির খুবই অভাব’ এ কথার সাথে আমি নিজেও খানিকটা একমত । কিন্তু এটাও তো সত্যি , দেশে অনেকেই এখন ভালোমানের চাকরি করছেন । যদি কারো ভালো যোগ্যতা থেকেই থাকে তবে তিনি হয়ত শুরুতেই সকল সুযোগ-সুবিদা পাচ্ছেন না। তবে ধীরে ধীরে তার কাঙ্খিত লক্ষে অবশ্যই পৌঁছাতে পারবেন । এর জন্য তাকে অবশ্যই একটু ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটি সত্যিকার অর্থেই অনেকটা হাস্যকর । তবে দুঃখের বিষয় হল তার উত্তরের সাথে অনেকে বিদেশগামী হতাশ তরুনদের মতের সাথে মিল খুঁজে পেয়েছি । বিদেশে গিয়ে যে কোন ছোট কাজ করতে কারও কোন আপত্তি নেই , কিন্তু দেশে যে কোন কাজ করতে কঠিন আপত্তি আছে । প্রকৃত শিক্ষা আমাদের এই শেখায়, যে কোন কাজই ছোট নয়। সময় হয়েছে, আমাদেরকে এই কথাটি অতি দ্রুত মেনে নিতেই হবে। নচেৎ বিদেশের মাটিতেই শুধু ‘অড’ জব করে বেরাতে হবে।
বিদেশে যাওয়ার জন্য যে খরচের কথা তিনি বলেছেন, এই বার একটু সেই প্রসঙ্গে আসি । বর্তমান বাজারে ৫-৬ লক্ষ টাকা হয়তো কোন টাকা নয় এটা যেমন সত্যি কিন্তু এটাও তো সত্যি যে ইচ্ছে করলেই এই সামান্য পুঁজি খাটিয়ে অনেক আয়ের উৎস তৈরি করা যায । এটা কোন কাল্পনিক গল্প নয়। আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে এমন অনেক নজির আছে। এই ক্ষেত্রে কৃষি হতে পারে একটা সম্ভাবনাময় খাত ।
আমাদের দেশের কৃষিখাতে এখনো যথাযথবাবে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি । স্থানীয় কৃষকরা এখনো আকড়ে ধরে রেখেছেন পুরনো আমলের কৃষি পদ্ধতিগুলো । তাই কৃষিক্ষেত্রে চাই যথাযথ আধুনিকায়ন । আর বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকায়ন আনতে অগ্রণী ভূমিকা রাখা উচিত তরুন শিক্ষিত সমাজের । শিক্ষিত তরুনদের শাণিত মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা অবশ্যই পারবো আরো ভালো উচ্চ ফলনের সরবরাহ দিতে । যার ফলশ্রুতিতে দেশ হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সেই সাথে বেকার মুক্ত ।
লেখক: মির্জা রকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী-গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা