‘নিজের বোনকে কি কেউ ধর্ষণ করতে পারে ?’
ডিসেম্বর ৫, ২০১৫ চট্টগ্রাম: ‘আমাকে থানায় রেখে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। পুলিশ বলেছে আমি যেন আমার বোনকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করি। আমি বলেছি, নিজের বোনকে কি কেউ কখনো ধর্ষণ করতে পারে ? মারধরের পরও তারা আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে পারেনি। আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমার মায়ের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। ’
শনিবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেছেন রাঙ্গুনিয়ার কিশোর তাসফিক উদ্দিন ওরফে ছবুর আক্তার। কিশোর তাসফিক আপন বোনকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুস্থভাবে কোন কথাই বলতে পারেনি ওই কিশোর। কাঁদতে কাঁদতে বারবার নিচু হয়ে টেবিলের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে রাখে। এসময় তার বাবা-মা এবং শিশুবয়সী ছোট ভাইও কাঁদতে থাকে। আর দূরে চেয়ারে বসে ধর্ষিতা মেয়েটিও কাঁদতে থাকলে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এসময় তার মাকে ওই কিশোরের মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্ত্বনা দিতে দেখা যায়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মিনাগাজীর টিলা এলাকার প্রভাবশালী শাহআলম তার প্রতিবেশি ১৩ বছর বয়সী এক শিশুকে ফুসলিয়ে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করে। এতে শিশুটি অন্ত:স্বত্তা হয়ে পড়লে শাহআলম তার মায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে গর্ভপাত ঘটান। ৭ মে রাতে শিশুটির মা রাঙ্গুনিয়া থানায় শাহআলমকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ৮ মে রাতে শাহআলমকে পুলিশ আটক করে। পরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ওসি হুমায়ন কবির ও এস আই মুজিবুর রহমান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাত ২টায় শাহআলমকে ছেড়ে দেয় বলে বারবার অভিযোগ করে আসছে ধর্ষিতার পরিবার।
এরপর ৯ মে বাদিনী শাহআলমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে সেটা ছিঁড়ে নতুন করে একটি অভিযোগে স্বাক্ষর নেয় যেখানে শাহআলমের নাম নেই। ৯ মে ভিকটিমের ১৪ বছর ৬ মাস বয়সী বড় ভাই তাকে থানায় দেখতে এলে তাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে নিজের বোনকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করে।
এরপর গণমাধ্যম অনুসন্ধান করে বের করে, কিশোর তাসফিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ছিল মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। মূল ধর্ষককে বাঁচাতে ওই কিশোরকে ফাঁসানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাসফিক তাকে ফাসানোর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শাহ, ওসি হুমায়ন কবির, এস আই মুজিব এবং শাহআলমের ভাগিনা সালাহউদ্দিন জড়িত বলে অভিযোগ করেছে।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে ভিন্ন ঘটনা বেরিয়ে আসার পর ২৭ মে ধর্ষিতার মা নূরনাহার বেগম বাদি হয়ে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ রাঙ্গুনিয়ার ওসি এবং এস আই’র বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
এর আগে ঘটনাটি সংবাদপত্রে এলে তা যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া একটি রিট আবেদন করলে ২৫ মে হাইকোর্ট শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।
ওই কিশোরীর মায়ের মামলা নিতে পুলিশের অস্বীকার করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং শাহ আলমসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে রুলও দেওয়া হয়।
নভেম্বর ০৫,২০১৫