শীর্ষদের নিরাপত্তা!

মার্চ ২৬, ২০১৩

vip_protectionঢাকা জার্নাল: বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এদের মধ্যে যেমন নিছিদ্র আর বিলাসি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, আবার সাধারণ, অতি-সাধারণ মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আছে।

২০১২ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চাঁদা সংগ্রহের জন্য লস অ্যাঞ্জিলেসে যান। তখন লস অ্যাঞ্জিলেসের পুলিশ ওবামার চলার পথে অল্প কিছু সময় সাধারণের জন্য ট্রাফিক কনট্রোল জারি করে।

যদিও স্থানীয় টেলিভিশন, পত্রিকা ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগাম ঘোষণা দেওয়া হয়, তবুও এমন সিদ্ধান্তে সত্যি জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাপক দূর্ভোগ সৃষ্টি করে। এতে অনেক নাগরিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

লস অ্যাঞ্জিলেসের বাসিন্দা মিলেন্না ওয়েবসাইটে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ঠিক আমার বাসার সামনে থেকে চলে যান, সত্যি ২০টিরও বেশি পুলিশের গাড়ি তার চারপাশে ছিল। এমন কঠিন ট্রাফিক কন্ট্রোল-এর কারণে আমি আমার যোগব্যায়ামের ক্লাসে যেতে পারিনি।

ভিল নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট ওবামা, আপনি জানেন কি, এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি সাফল্যের সঙ্গে ভোটারদের হারাবেন। ঠিক আপনার কারণে লস অ্যাঞ্জিলেসের সড়ক যোগাযোগ বিশৃংখল হয়েছে।

এমন ট্রাফিক কন্ট্রোল যদিও প্রেসিডেন্টের চলাচল নিশ্চিত করেছে, তবুও সত্যি জনসাধারণের জন্য তা দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। আরো কিছু কিছু লোক ওবামাকে প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন তারা বলেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট, প্রতিবার আপনি যখন লস অ্যাঞ্জিলেসে যাবেন তখন সড়ক যোগাযোগ বিশৃংখল হয়ে পড়ে, এটা সত্যি ভালো নয়, হেলিকপ্টার, হ্যাঁ, আপনি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আসতে পারেন, অথবা গোপন সুড়ঙ্গ-সড়কের কথাও বিবেচনা করতে পারেন আপনি। একবার নয় এমন ঘটনা অনেক বার ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট একবার বাইরে যেতে সাধারণত কতগুলি গাড়ি একসাথে যায়? এ সংখ্যা হলো ২৭টি।  একজন ব্যক্তি বাইরে যাবে, তার জন্য ২৭টি গাড়ি কেন লাগবে? তাহলে এ ২৭ গাড়ি কার কার জন্য? হ্যাঁ, প্রেসিডেন্টের জন্য অবশ্যই একটি বিশেষ গাড়ি থাকবে আর এ গাড়ি নিশ্চয়ই কেবল বিলাসবহুল নয়, নিরাপত্তার দিক থেকেও অনেক উঁচুমানের।

এ ছাড়া রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষী সৈন্য, দেহরক্ষী, স্থানীয় কর্মকর্তারা, তার উপদেষ্টা গ্রুপসহ আরও বেশকিছু উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার গাড়ি। এ ছাড়া নিরাপত্তা সু-নিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশ মোটরসাইকেল দল প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহরের সামনে থাকবে। আর ট্রাফিক কন্ট্রোল তো নিশ্চয়ই থাকবে, কারণ প্রেসিডেন্ট বলে কথা।

তবে এদিকে প্রেসিডেন্টের নিরপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন যে, তারাও আসলে নিরুপায়। কারণ নিরাপত্তার এই সকল ব্যবস্থা ছাড়া প্রেসিডেন্টের পক্ষে বাইরের কোনো অনুষ্ঠানে সময় মত পৌঁছানো সম্ভব নয়। যদি ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে প্রেসিডেন্টের পক্ষে সময় মত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।

আসলে এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। যদিও দেশের ভিতরে “বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত গাড়ি” নামে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত গাড়ি-নীতি বাতিলের জন্য তিনি রাশিয়ায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন, তবে তিনি নিজেই যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবসময় বিশেষ অধিকার ভোগ করে থাকেন। আর কারণে অভিযোগেরও শেষ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এক টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

বিশ্বে তো অনেক দেশ আছে, সব দেশের নেতারাই এমন দুর্ভোগ সৃষ্টিকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন? এর উত্তর হলো না। ওবামা এবং পুতিনের তুলনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস্কো ওঁলাদের নিরাপত্তা প্রটোকল কিন্তু খুব সাধারণ এবং সহজ।

২০১২ সালে প্রসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের ন্যায় প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান-প্রেগানকোন দুর্গ ভ্রমণে যান। তিনি কিভাবে গেছেন এটা শুনলে ভালো লাগবে। তিনি সাধারণ ট্রেনে করে সেখানে যান।

তিনি বলেন, এখনো ফ্রান্সের আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার হয় নি, তাই বিলাসবহুল ভ্রমণে অর্থ অপচয়ের পরিবর্তে সাশ্রয় করাটাকে উত্তম মনে করলেন।আসলে এ ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নতুন সম্পাদক সি চিন পিংও দৃষ্টান্ত রেখেছেন। এখন তিনি বাইরে যেতে কোনো ট্রাফিক কন্ট্রোল জারি করেন না এবং জনসাধারণের মতো ট্রাফিক লাইনের সামনে অপেক্ষা করেন এবং জনসাধারণ কাছে থেকেই তাকে দেখতে পান।
শীর্ষ নেতাদের এমন আচরণের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেক কমে যাবে, ঠিক না? এ বিষয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কামেরোনও খুব ভালো একটি উদাহরণ হতে পারেন। যদিও তার পরিবার অনেক ধনী, তবে জনগণের কাছে তার ভাবমূর্তি খুব ভালো এবং তা বিলাসি নয়। তিনি এবং তার স্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় যানবাহন হল বাইসাইকেল। বিবিসি বিশেষ করে একবার তার বাইসাইকেল চালিয়ে কংগ্রেসে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি সব সময় বাইসাইকেল চালাতেন এবং এ সময়ে দু, দু’বার তার বাইসেকেল হারিয়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় তিনি অনেক আগে থেকেই বাইসেকেল চালাতেন। ২০০৮ সালে যখন তিনি রক্ষণশীল পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি পুলিশের কাছে জানিয়েছেন যে, অফিস শেষে তিনি বাইসাইকেল চালিয়ে সুপারমার্কেটে কিছু জিনিস কিনতে যান এবং কেনাকাটা পর তিনি দেখেন তার বাইসাইকেলটি খোয়া গেছে। আবার ঠিক একবছর পর বাসার সামনে থেকে চোর তার বাইসাইকেলটি চুরি করে।

কামেরোনের প্রতিক্রিয়া কি? তার মুখপাত্রের কথা অনুযায়ী, তিনি অনেক অনেক রাগ করেছিলেন। কারণ বাইসাইকেল তার প্রিয় বাহনের একটি।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও কামেরোন সবসময় খুব সহজ সাদামাটা নিরাপত্তা বলয়ে বাইরে যেতে পছন্দ করেন, এমনটাই দেখা যায়। ২০১০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, আর তিনি সাধারণের মতোই বিজনিস ক্লাসের টিকিতে বিমান যোগে ওয়াশিংটনে ভ্রমন করেন। এরপর নিইউয়র্ক সফরকালে তিনি কোনো বিশেষ গাড়ি গ্রহন করেন নি, বরং তিনি জনসাধারণের সাথে একই ট্রেনে করে সেখানে গেছেন। তার এই সফর মার্কিন তথ্য মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে, বিশেষ করে তার নিরাপত্তা প্রটকলের  প্রশংসা করে।

সবাই জানে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরে অবশ্যই বিশেষ বিমান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ করেই ভ্রমণ করতে হবে। আর স্থলে রয়েছে বড় আর বিলাসবহুল গাড়ির বহর। ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ নামে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র আছে। ওই মুভিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হিরোইজমকে ফলাও করে তুলে ধরা হয়েছে।

সূত্র: সিআরআই।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.