গণতন্ত্রের জন্য সামরিক হস্তক্ষেপ ক্ষতিকর

মার্চ ২৬, ২০১৩

1358590975ঢাকা জার্নাল: দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের কাজ সেনাবাহিনীর নয়৷ কেউ চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ আশা করলে, তিনি গণতন্ত্রেরই ক্ষতি করছেন৷ এমনটাই মনে করেন, সামরিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ৷

রবিবার বগুড়ায় বিএনপি’র চেয়ারপার্সন এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনীর দেশের প্রতি কর্তব্য আছে৷ তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না৷ মানুষ খুন করবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখবে? কাজেই সেনবাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে সময় মতো৷”

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে৷ সামরিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) বলেন, সেনাবাহিনীর কাজের পরিধি, মানে দায়িত্ব এবং কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করে দেয়া আছে৷ রাজনৈতিক সংকট নিরসন তাদের কাজ নয়৷ পৃথিবীর কোনো দেশেই সেনাবাহিনী রাজনৈতিক সংকট সমাধান করে না, করতে পারেনি৷

তাই তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনীতিবিদদেরই করতে হবে৷

বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনীর দেশের প্রতি কর্তব্য আছে৷ তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে না৷’’

দেশের এই রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিরোধী দলীয় নেত্রী সেনাবাহিনীর যে ধরণের ভূমিকাই আশা করুন না কেন, তা কাঙ্খিত নয় বলে মন্তব্য করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশীদ৷ তিনি বলেন, রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করে৷ যেসব দেশে এমন হয়েছে সেখানে গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে৷ তাই তাদের রাজনীতির বাইরে রাখাই শ্রেয়৷

তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী আরো বলেছেন, ‘‘যে দেশের সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তি রক্ষার জন্য কাজ করছে সেদেশে যদি শান্তি না থাকে তাহলে বিদেশিরা কি বলবে, তারা কিভাবে শান্তি রক্ষার জন্য কাজ করবে? কাজেই চিন্তার বিষয় রয়ে গেছে৷ আর আপনাদের সবাইকে এটা চিন্তা করতেই হবে৷”

বিরোধী দলীয় নেত্রীর এ মন্তব্যও ইঙ্গিতপূর্ণ বলেও মনে করেন জেনারেল রশীদ৷ এই বক্তব্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক কোনো সংকট নিরসনে যদি আহ্বান করা হয়, তাহলে তা দুর্ভাগ্যজনক৷ দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, অপরাধের বিচারের জন্য কারা দায়িত্ব পালন করবে – তা সুনির্দিষ্ট৷ এ নিয়ে সেনাবাহিনীর কিছু করণীয় নেই৷ তাই তাদের এর মধ্যে টেনে আনার চেষ্টা কোনো শুভ ফল বয়ে আনবে না৷

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদের কথায়, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে তা নিরসনে রাজনীতিবিদদেরই এগিয়ে আসতে হবে৷ তাদের অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে হবে৷ নয়ত সংকট আরো ঘনীভূত হবে৷ তবে এই সংকটের রাজনীতির বাইরে কোনো সমাধান নেই৷

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ৪২ বছরে এক ধরণের পেশাদারিত্ব এবং সুনাম অর্জন করেছে৷ বিশেষ করে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের পেশাদারিত্ব আরো বেড়েছে৷ তাই তারা রাজনৈতিক কোনো প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে বলে তিনি মনে করেন না৷ তবে রাজনীতিবিদদেরও তাদের কোনোভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা ঠিক না৷

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ খালেদা জিয়ার বগুড়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘জনগণ এবং গণতন্ত্রের ওপর খালেদা জিয়ার আস্থা নেই৷ তাই তিনি ক্ষমতায় যেতে বিকল্প পথ খুঁজছেন৷ সেনাবাহিনীকে উস্কে দিচ্ছেন৷”

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.