টনের্ডোর আঘাত: অসহায় বাংলাদেশ

মার্চ ২৪, ২০১৩

ashrafmahmud_1335624379_11-tornado2ঢাকা জার্নাল: টর্নেডোর মতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের মানুষের ভরসা নিয়তিতেই৷ কারণ টর্নেডোর পূর্বাভাষের কোন প্রযুক্তি নেই বাংলাদেশে৷ অথচ এই দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে৷ শুক্রবারেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্নেডোতে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছেন৷

শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি উপজেলার সংলগ্ন বিশটি গ্রাম ১৫ মিনিটের মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে যায়৷ কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হন৷ আর আহত হন ৫ শতাধিক৷ দুমড়ে মুচড়ে যায় ঘর-বাড়ি, গাছ পালা, ফসলের ক্ষেত৷ আখাউড়ার আমোদাবাদ দিঘী গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন চৌধুরী জানান, তাঁর জীবনে এমন ঘটনা দেখেন নি৷ মুহূর্তে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যায়৷ যেন রোজ কেয়ামত নেমে আসে৷

কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া কর্মকর্তা আয়েশা খাতুন  জানান, টর্নেডো স্থানীয়ভাবে ছোট এলাকায় সৃষ্টি হয়৷ ওই এলাকায় বায়ুর চাপ খুবই কমে গিয়ে বাতাস হাল্কা হয়ে উপরে উঠে যায়৷ আর চারপাশের ভারী বাতাস শূন্যস্থান পুরণ করতে তীব্র বেগে, প্রচণ্ড শক্তিতে ওই এলাকায় আঘাত হানে৷ তার স্থায়িত্ব হয় খুব অল্প সময়৷ তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক ধ্বংসলীলা ঘটে৷

আয়েশা খাতুন জানান, এই টর্নেডের কোন পূর্বাভাষ দেয়ার মত প্রযুক্তি বাংলাদেশে নেই৷ স্থানীয়ভাবে এত অল্প সময়ে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যে স্যাটলোইটের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়৷ তাই কোন প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়না৷ দেয়া যায়না কোন সতর্কবার্তা৷ কেবল ঘটে যাওয়ার পরই জানা যায়৷

তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশে শুক্রবার ঝড়োহাওয়া এবং বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কার তথ্য তাদের কাছে ছিল৷ আর সেজন্য তার ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দিয়েছিলেন৷ কিন্তু টর্নেডোর সতর্ক সংকেত দেয়া সম্ভব ছিলনা৷’’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল  বলেন, ‘‘টর্নেডোর সময় ছোট এলাকায় বাতাসের তীব্র ঘুর্ণনের সৃষ্টি হয়৷ যা ভয়াবহ৷’’ তিনি জানান, প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ৪/৫টি টর্নেডোর ঘটনা ঘটে৷ তবে ভয়াবহ টর্নেডো প্রতি ১০ বছরে একবার আঘাত হানে বলে পর্যক্ষেণে দেখা গেছে৷ ২০ বছর আগে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় টর্নেডোর আঘাতে ওই জনপদই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল৷

মাকসুদ কামাল বলেন, ‘‘আমাদের দেশে না থাকলেও এখন টর্নোডোর পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷ আমেরিকা এবং ইউরোপ একধরনের রাডার ব্যবহার করে অন্তত ৪৫ মিনিট আগে টর্নেডোর পূর্বাভাষ দিতে পারে৷ আর এধরনের পূর্বাভাষ দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষার নজির আছে৷ এমনকি এখন ভূমিধসেরও পূর্বাভাষ দেয়া সম্ভব৷’’

অধ্যাপক কামাল মনে করেন, এধরনের প্রযুক্তি বাংলাদেশেও ব্যবহার করা উচিত৷ অসহায়ের মত প্রকৃতির হাতে মানুষের জীব ও সম্পদ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা ঠিক না৷ তিনি বলেন, ‘‘ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন, বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়৷ তাই টর্নেডোর পূর্বাভাষ দেয়া গেলে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা যাবে৷’’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.