জার্মানি’র জনপ্রিয় পরিবহন এখন রিক্সা!

মার্চ ২৩, ২০১৩

5605935159_4e96917ffc_zঢাকা জার্নাল: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, এমনকি চীনেও পরিবহন ব্যবস্থার একটি অন্যতম অঙ্গ রিক্সা ৷ কিন্তু জার্মানিতেও যে রিক্সা যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিণত হবে – এ কথা হয়তো কিছুদিন আগে পর্যন্তও অবিশ্বাস্য ছিল৷

এফএম রেডিও, বাসের ভিড় আর ট্রেনের কু-ঝিকঝিকের মধ্যে খুঁজে পাওয়া মুস্কিল৷

রিক্সার সঙ্গে ঢাকা বা কলকাতাবাসীর সম্পর্কটাও বেশ অনেকদিনের – তাই না? অন্ততপক্ষে ঢাকাতে যানযটের জন্য প্রাথমিক ভাবে রিক্সাকে দায়ী করা হলেও, আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বলে, ভীষণ যানযটে সবচেয়ে দ্রুত গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেয় কিন্তু রিক্সাই৷ তাছাড়া, ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যে রিক্সা চড়ার মজাটাই যে আলাদা!

একটা সময় ছিল, যখন কলকাতা শহর মানেই ছিল – হাতে টানা রিক্সা, ট্রাম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আর হাওড়া ব্রিজ৷ সে সময় শহরতলির এমন কিছু অবহেলিত এলাকা ছিল, যেখানে হাতে টানা রিক্সা ছাড়া অন্য কোনো যোগাযোগমাধ্যম ব্যাবহার করা ছিল অসম্ভব৷ সামান্য বৃষ্টিতেই জলে ডুবে যেতো রাস্তাঘাট৷ তখন রিক্সাচালকের অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমই ছিল যাত্রীকে নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র পথ৷ আর যাত্রীরাও ভরসা করতেন রিক্সাচালকের ওপর৷

মনে আছে, দুপুরবেলা স্কুল ফেরত বহুবার দেখেছি লাইন করে খান চার-পাঁচ হাতে টানা রিক্সাওয়ালাকে ছাতু নিয়ে বসে থাকতে৷ ফুটপাথের ধারে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার সঙ্গে তাদের মানিয়েও যেতো৷ এখন অবশ্য কলকাতা শহরে আর হাতে টানা রিক্সা দেখা যায় না৷ মানবিকতার খাতিরে তাঁদের অনেকেই আজ সাইকেল-রিক্সা হাতে নিয়েছেন৷ তাছাড়া, শহরের নানা জায়গায় সাইকেল ও রিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে যানযট মোকাবিলার জন্য৷

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যখন এই রিক্সা হটাও আন্দোলন চলছে, তখন জার্মানির মতো একটা উন্নত দেশে শুরু হয়েছে রিক্সার চল৷ তবে পর্যটকদের খাতিরেই৷ এই তো, প্রতিবেশী কোলন শহরের ডোম-চত্বরে অথবা রাজধানী বার্লিনের বেশ কিছু ঐতিহাসিক জায়গায় আজকাল নিয়মিতই দেখা মিলছে সাইকেল রিক্সার৷ অলস ভ্রমণার্থী যুগল চেপে বসছে রিক্সায়৷ অথবা নিতান্ত কৌতূহলের কারণেও অনেকে চড়ছে রিক্সা৷ এমনকি, রিক্সায় চড়ে বিয়ে করা অথবা বিয়ের পর রিক্সায় বসে ছবি তোলারও একটা ফ্যাশন দেখা দিয়েছে এখানে৷ অবশ্য শুধুমাত্র সাইকেল রিক্সা নয়, মোটর-যুক্ত দরজাবিহীন ছোট্ট গাড়ির মতো রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছে জার্মানিতে৷ নাম তাদের ‘ভেলোট্যাক্সি’৷

আমাদের দেশের মতো এখানকার রিক্সাওয়ালারা কিন্তু অবহেলিত নন৷ বেশ কিছু সংখ্যক বেকার থাকলেও, কোলন শহরের বেশিরভাগ রিক্সাচালকই কিন্তু নিতান্ত শখের বশেই সাইকেল রিক্সা চালাচ্ছেন৷ এই যেমন ইয়োহানেস ভিটিগ৷ প্রায় ১৬ বছর আগে ভারত থেকেই একটা সাইকেল রিক্সা নিয়ে এসেছিলেন তিনি৷ আর এখন, ভিটিগ’এর নামে রিক্সার আস্ত একটা এজেন্সি আছে৷ বাংলাদেশের রিক্সার মতো, নিজে হাতে ভিটিগ তাঁর রিক্সাগুলিকে সাজান৷ বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রী, এমনকি শিব-দুর্গার মতো হিন্দু দেব-দেবীও তাতে স্থান পায়৷

ইয়োহানেস ভিটিগ’এর কথায়, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, রিক্সা চালাতে আমার ভীষণ ভালো লাগে৷ জার্মানিতে সহজে পয়সা উপার্জনের এটা একটা দারুণ মাধ্যম৷”

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ, ডয়েচ ভেলে

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.