দাতব্য কাজে ভারতের ধনকুবেরদের অনীহা

মার্চ ২২, ২০১৩

india-rich-people1ঢাকা জার্নাল: তাঁরা বহুতল ভবনে থাকেন, ব্যক্তিগত বিমানে যাতায়াত করেন, মাঝেমাঝে তারকা ভরপুর বিয়ের পার্টির আয়োজনও করেন৷ তবে গরিবদের সহায়তার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে সাড়া কম৷ বলছি ভারতের ধনকুবেরদের কথা৷

ভারতে ডলার বিলিওনিয়ারের সংখ্যা ৫৫৷ চলতি মাসে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷ সাময়িকীটির বিলিওনিয়ারের তালিকায় ভারতের অবস্থান পঞ্চম৷ তবে চীনের মতোই দাতব্য কাজে সহায়তার ক্ষেত্রে মার্কিন বিলিওনিয়ারদের মতো উদার হতে পারেননি ভারতীয় ধনকুবেররা৷

বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন এন্ড কোম্পানির হিসেব অনুযায়ী, ভারতীয় কোটিপতিরা ২০১১ সালে তাদের সম্পদের ৩.১ শতাংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করেছেন৷ এই হার ২০১০ সালের তুলনায় বেশি৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম৷ যুক্তরাষ্ট্রের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা গড়ে তাদের সম্পদের ৯.১ শতাংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করেন৷

দাতব্য কাজে বিভিন্ন দেশের ধনকুবেরদের সম্পৃক্ততা সম্পর্কিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে হালনাগাদ তথ্য অবশ্য নেই৷ তবে এই প্রতিবেদনে একটি বিষয় পরিষ্কার, সেটি হচ্ছে দাতব্য কাজে অর্থ প্রদানের আগে এখন দাতারা সেই কাজের প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান৷ ফলে আগের মতো মুক্ত হস্তে সহায়তা পাওয়া এখন দুরূহ৷

ভারতের সবচেয়ে বড় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি দাতব্য কাজের ক্ষেত্রে পশ্চিমা নীতির সমালোচক৷ রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান এবং বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক এই ব্যবসায়ী থাকেন ২৭ তলা বিশিষ্ট পারিবারিক বাড়িতে৷ তিনি মনে করেন, পশ্চিমাদের অর্থ সহায়তা নীতি মানুষকে আরো বেশি নির্ভরশীল করে তোলে৷

তবে এখনকার হিসেবে মার্কিনিদের তুলনায় বেশি না হলেও ঐতিহ্যগতভাবে কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতিতে দানের রীতি চালু রয়েছে৷ এক্ষেত্রে শিল্পগোষ্ঠী টাটা এবং আদিত্য বিরলার পরেই রিলায়েন্সের অবস্থান৷ নিজস্ব ট্রাস্টের মাধ্যমে এসব শিল্পগোষ্ঠী গরীব দুঃখীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা প্রদান করে থাকে৷ টাটা এই সহায়তার হিসেবও সেভাবে প্রকাশ করে না৷ তবে তাদের দাতব্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রকল্প রয়েছে৷

ভারতের সফটওয়্যার জায়ান্ট উইপ্রো’র প্রধান আজিম প্রেমজি গত মাসে শিক্ষা খাতে ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছেন৷ তিনি নিজের দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে শিক্ষা খাতে এই অর্থ ব্যয় করছেন৷ দাতব্য কাজে এই অবদানের জন্য ফোর্বস প্রেমজিকে ‘এশিয়ার সবচেয়ে উদার ব্যক্তি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে৷

তবে প্রেমজির অর্থ সহায়তার এই পরিমাণ অন্য ধনীদের লজ্জায় ফেলেছে৷ ইকনোমিক টাইমসে প্রকাশিত একটি কলামে সাংবাদিক আনন্দ মহাদেবান লিখেছেন, ‘অন্য অনেকে প্রেমজির মতো এমন উদারতা দেখাতে পারেননি৷’

উল্লেখ্য, বিশ্ব দান সূচকের সর্বশেষ তালিকায় ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৩৩তম৷ অথচ ২০১১ সালেও সেদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম৷ সেই তুলনায় সর্বশেষ তালিকায় ভারতের অনেক উপরে রয়েছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান৷ দান সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৮৫তম এবং পাকিস্তানের ১০৯।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.