ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে অভ্যন্তরীণ জোট রাজনীতির ছায়া

মার্চ ২২, ২০১৩

9320566-illustration-of-the-india-flag-on-map-of-country-isolated-on-white-backgroundঢাকা জার্নাল: শ্রীলঙ্কার তামিল ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ভারতের অবস্থান নিয়ে অভ্যন্তরীণ জোট রাজনীতির প্রভাব মনমোহন সিং সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে৷ শরিক দল ডিএমকে কড়া সংশোধনীর দাবিতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়৷

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়ে ভারত এক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে হবে গ্রহণযোগ্য৷ মানবাধিকারের প্রতি শ্রীলঙ্কা তার দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেনা, বলেছে ভারত৷ কূটনৈতিক কাঠামোর মধ্যে এবং তামিল ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে ভারতের পক্ষে যা করা সম্ভব, তাই করা হয়েছে৷

মার্কিন প্রস্তাবের সংশোধনীতে ‘গণহত্যা’ আন্তর্জাতিক তদন্ত ইত্যাদি যুক্ত না করায় তামিল পার্টি ডিএমকে মনমোহন সিং-এর জোট সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যায়৷ সরকারকে ঠেলে দেয় সংখ্যালঘু সরকারের দিকে৷ এই ইস্যুতে সরকারের পররাষ্ট্র নীতির সমর্থনে এগিয়ে আসে তৃণমূল কংগ্রেস৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার কারণ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই মুহূর্তে জোট সরকারে না ফিরলেও কেন্দ্রের সঙ্গে যে একটা সদর্থক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় তৃণমূল, সেটা স্পষ্ট৷ তিক্ততার বদলে একটা উষ্ণতার সম্পর্ক ফিরে পেতে চায়৷ গত কয়েক মাস ধরে সেটা লক্ষ্য করা গেছে৷

যেমন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঢাকা সফরে তৃণমূল সাংসদ ও মমতার ডানহাত মুকুল রায়কে পাঠানো তারই ইঙ্গিত৷ তিস্তার জলবণ্টনের মত আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনে প্রধানমন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলা যে সঠিক কাজ হয়নি, সেটা দেরিতে হলেও মমতা বুঝতে পেরেছেন৷ বুঝেছেন যে পররাষ্ট্র নীতি কোন এক রাজ্যের বিষয় হতে পারে না৷ ভারতের জাতীয় স্বার্থ কথা মাথায় রেখেই চলতে হয়৷ এবারের ঢাকা সফরে রাষ্ট্রপতির ভাষণে তিস্তা চুক্তির আশু সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে৷

খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ ইস্যুতে সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়া যে তৃণমূলের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি, দেরিতে হলেও সেটা বুঝতে পারছেন মমতা৷ রেল মন্ত্রক ছেড়ে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি৷ যেমন বুঝতে পেরেছিল সিপিএম ভারত-মার্কিন বেসামরিক পরমাণু চুক্তির বিরোধিতায় সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়ে৷ এতে লাভের থেকে বেশি হয়েছে লোকসান৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারছেন, কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া রাজ্য চালানো প্রতি পদে কঠিন হয়ে পড়ছে৷ উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে অর্থাভাবে৷ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল ক্রমশই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে৷ সংখ্যালঘু মুসলিম স্বার্থ রক্ষা করতে হলে বিজেপির চেয়ে বেশি দরকার কংগ্রেসকে৷ শুধু তাই নয়, গোর্খাল্যান্ড পরিস্থিতি সামাল দিতেও মমতার প্রয়োজন কেন্দ্রের সমর্থন৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.