হার্ট অ্যাটাক? না ঘাবড়ে চটজলদি ব্যবস্থা নিন

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫

বুঝবেন কী করে

অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়, সমস্যাটা যে সত্যিই হার্টের, সেটি বুঝতে বুঝতেই অনেক সময় চলে যায়। আসলে হার্টের সমস্যা মানেই যে সব সময় বুকে ব্যথা হবে তা কিন্তু নয়। একদম বুকের মাঝখানে চাপ ধরা ব্যথা যেমন হয়, তেমনই ব্যথা হতে পারে ঘাড়, পেট বা হাতেও। বুকে ব্যথার ক্ষেত্রে মনে হতে পারে কেউ একটা বেল্ট শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে। ব্যথাটা ঘাড় বা পিঠের দিকে যেতে পারে। বাঁ-হাতেও ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথাকে বলে অ্যানজাইনাল পেন। সঙ্গে যদি প্রচণ্ড ঘাম হয় বা শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, তবে তো কথাই নেই। বুঝে নিতে হবে, ব্যাপারটা হার্ট অ্যাটাকের দিকে গড়াচ্ছে। অনেকের মুখ ফ্যাকাশে বা কালচে হয়ে যেতে পারে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। অনেক সময় বুকে ব্যথা না হয়ে ওপর পেটে ব্যথা হতে পারে। যদি দেখেন ওপর পেটে ব্যথা হচ্ছে, অস্বস্তি, হাঁসফাঁস অবস্থা। বিশেষ করে ভারী খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি বাড়ছে, গ্যাসের ওষুধ খেয়েও পেটের অস্বস্তি কমছে না, একটু স্বস্তি দিয়ে আবার ফিরে আসছে, পাশাপাশি পালসটা খুব দ্রুত চলছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তবে ফেলে রাখবেন না। আবার অনেকের বুকে-পেটে-পিঠে কোনও ব্যথা নেই। ব্যথা হয় দাঁতে। যদি দেখেন বার বার দাঁতে ব্যথা হচ্ছে, খেলে পরেই ব্যথাটা বাড়ছে, অথচ দাঁতের ডাক্তার কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না, তবে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। দাঁতে মনে হলেও ব্যথাটা হয়তো হচ্ছে চোয়ালে।

এ ধরনের কোনও উপসর্গ দেখা দিলে স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়ে গ্যাস-অম্বলের ওষুধ খেয়ে ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ফল মারাত্মক হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে সবার আগে মাথায় রাখতে হবে সময়ের কথা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। অন্তত ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে ঢুকতেই হবে।

 

কী করবেন

প্রথমত সেই অবস্থায় রোগীর একটা ইসিজি করা দরকার। তাতে গোলমাল কিছু পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে যেতে হবে। তবে ইসিজি করতে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। যদি দেখেন, হাতের কাছে ইসিজি করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে একটা অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে ঝটপট রোগীকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। চারটে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট জলে গুলে আর চারটে ক্লোপিড্রোজেল ট্যাবলেট গিলে খেয়ে নেবেন। এতে হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটা কমে যায়। এর পর একটা সরবিট্রেট জিভের তলায় দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন।

 

কোন হাসপাতালে যাবেন

অনেক সময় কাছাকাছি কোন হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাবেন, তা ঠিক করতে করতেই বাড়ির লোক দিশাহারা হয়ে পড়েন। বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে অনেকটা সময় চলে যায়। অথচ এ সব ক্ষেত্রে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, জেনে রাখুন কাছাকাছি কোন হাসপাতালে ক্যাথল্যাব ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তাতে দরকারের সময় হাতড়াতে হবে না। আর যাওয়ার আগে সেই হাসপাতালকে জানিয়ে দিন এ রকম রোগী নিয়ে আসছেন। সে রকম কিছু ঠিক করা না থাকলে যে কোনও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন।

 

ক্যাথ ল্যাব কেন

দুম করে রক্তনালীর ভেতরের কোনও জায়গায় ব্লক তৈরি হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হয়। সে ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি (বেলুন) করে ব্লক খুলে স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়। তাই হার্ট অ্যাটাক হলে বাড়িতে ডাক্তার না ডেকে কাছের কোনও হাসপাতালে তিন ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছতে হবে, যেখানে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবার ব্যবস্থা আছে।

হার্টের সমস্যা হলে একটা কথাই বলার, কবে বুকে চাপ ধরা ব্যথা দেখা যাবে, সে অপেক্ষায় থাকবেন না। আগের তুলনায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধে শুরু হলেই সতর্ক হবেন। আর ৪০ বছর বয়স হলেই নিয়ম করে বছরে একটা হেল্থ চেক-আপ করাবেন। বাড়িতে কারও হার্টের সমস্যা থাকলে বা কোলেস্টেরল, প্রেসার, সুগার ধরা পড়লে ৩৫-এর পর থেকেই এটা করতে হবে। ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাম আর ট্রেডমিল টেস্ট করতে হবে। আর আয়েসি শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলে একটা কার্ডিয়াক সিটি স্ক্যান করতে পারলে ভাল হয়। যদি দেখেন সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হচ্ছে, একটুতেই হাঁপিয়ে পড়ছেন, তবে প্রয়োজন বুঝে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হবে। নিয়মিত চেক আপ-এ থাকতে হবে।

জেনে রাখুন

• ডায়াবেটিস রোগীরা অ্যানজাইনাল পেন টের পান না। ডায়াবেটিস থাকলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপিয়ে ওঠা এ ধরনের সমস্যা টের পাওয়া যায়। যদি দেখেন আগে বাড়ি থেকে বাসস্ট্যান্ড আরামসে চলে যেতেন, এখন সেই রাস্তাই যেতে দু’বার থামতে হচ্ছে, তবে ব্যাপারটা ফেলে রাখবেন না।
• অনেকের চলতে ফিরতে সমস্যা হয়, স্বাভাবিক কাজকর্মে অসুবিধে হয়, এমনকী, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গেলেই হয়তো হাঁপিয়ে ওঠেন। সিঁড়ি ভাঙতে গেলে কষ্ট হয়, সব মিলিয়ে রোজকার জীবনে সমস্যা হয়। হার্টের ধমনীতে ব্লক তৈরি হলে এ ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। সমস্যা একটা ধমনীতে হলে ওষুধ দিয়ে কাজ হয়। কিন্তু তিনটে ধমনীতে ব্লক তৈরি হলে আর তার সঙ্গে যদি হার্টের পাম্প করার ক্ষমতাও কমে যায়, সে ক্ষেত্রে বাইপাস করতে হয়। তার আগে অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় কোথায় কোথায় ব্লক রয়েছে।
• অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টিতে যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা খরচ হয়। দিনে দুটো সিগারেট কম খেয়ে সেই টাকা জমিয়ে একটা হেল্থ ইন্সিওরেন্স করে রাখুন। দরকারের সময় কাজে দেবে।
• তিনটি আর্টারিতে ব্লক তৈরি হলে বাইপাস করাই ভাল। কারণ স্টেন্ট-কে ঠিক রাখতে একটা ওষুধ নিয়মিত খেয়ে যেতে হয়। ভবিষ্যতে কোনও অপারেশন করতে হলে, এমনকী দাঁত তোলার দরকার হলেও সেই ওষুধটা বন্ধ রাখতে হয়। এক দিনের জন্য ওষুধ বন্ধ রাখলে স্টেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া আমাদের দেশের মানুষদের ব্লকগুলোও অন্য রকম হয়। তার জন্য বাইপাস ভাল।
• এখানকার মানুষদের চেহারা তুলনামূলক ভাবে ছোট। পাশাপাশি, প্রচুর কার্বোহাইড্রেট ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার জন্য একটা জায়গায় ব্লক হয় না। সারা আর্টারি জুড়ে ব্লক হয়। সে জন্য ওষুধ দিয়ে সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে ভাল। ওষুধ কাজ না করলে বাইপাস। এক মাত্র হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হলে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করতে হবে।
• অপারেশনের পর কড়া হাতে জীবনধারা পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। রেড মিট খাবেন না। মাঝে মাঝে ছোট মুরগি গ্রিল বা বেক করে খেতে পারে। যাতে করে তেলটা কম ঢোকে। দুধ বা দুধের তৈরি কোনও জিনিস খেতে পারবেন না। সঙ্গে নিয়ম বেঁধে ওষুধ খাবেন। এ রকম মেনে চললে আর্টারিতে ব্লক আর ঘুরে আসবে না।

 

সৌজন্যে আনন্দ বাজার

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.