খালেদার কাছে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা চা্ইলেন ইনু
মার্চ ১৯, ২০১৩ ঢাকা জার্নাল: ‘প্রকৃত’ যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশের জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহবান জানালেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদসম্মেলনে তিনি বিরোধী নেত্রীর প্রতি এ আহবান জানান।
এ সময় বিএনপি ও জামায়াতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মিথ্যাচার, গুজব সৃষ্টি এবং তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তারা সহিংসতায় পথে ঠেলে দিচ্ছে।” এক্ষেত্রে কতিপয় গণমাধ্যমও তাদের সহযোগিতা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ সব প্রতিরোধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে আইনগত ভাবে এসবের মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে খালেদা জিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে বলে খালেদা জিয়ার দেওয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের ‘প্রকৃত’ তালিকা প্রকাশের এ আহবান জানালেন তথ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুর বারোটার সংবাদসম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি ও জামায়াত জোট প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার, গুজব ও তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।” এর নিন্দা জানিয়ে বলেন, “তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিচার প্রক্রিয়া, আদালতের স্বচ্ছতা, ধর্ম , নাস্তিকতার আখ্যা , গণজাগরণ মঞ্চ, পুলিশের কার্যক্রম, ইতিহাস, নির্বাচন, সংসদ, সংসদ বর্জন, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, ভিটামিন এ ক্যাপসুল, চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে মিথ্যাচার, গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে মানুষকে উস্কে দিচ্ছে। দেশকে সহিংসতায় ঠেলে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
এ সব প্রতিরোধে সরকার সচেতন আছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এ কমিটির প্রতিবেদনে বেগম জিয়া থেকে শুরু করে যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই এসব মোকাবেলা করতে আইনগতভাবে প্রস্তুত থাকুন।“
ইনু বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট মিথ্যাচারকে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এত অবলীলায় গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার জাতি এর আগে কখনো দেখেনি।“
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে মন্ত্রী বলেন, “বেগম জিয়া বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। এটি একটি ডাহা মিথ্যা, সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য। ভূতের মুখে রাম নামের মতোই। কারণ জিয়াসহ তিনি সবসময়ই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে এসেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার জাহানারা ইমামকে জেলেও পাঠিয়েছিলেন।”
ইনু খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, “নিজামী, গোলাম আযম, সাঈদীদের কি আপনি যুদ্ধাপরাধী মনে করেন না? তাহলে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা প্রকাশ করুন। এতে জাতি উপকৃত হবে। সরকার চায়, প্রত্যেকটি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে।“
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের খালেদা জিয়ার ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করে ইনু বলেন, “এ ব্যাপারে তার সত্য বক্তব্য চাই। কি ভাবে প্রজন্ম চত্বর নাস্তিক হলো? তিনি নাস্তিকদের তালিকা প্রকাশ করুক। এভাবে দেশের সব মানুষকে তিনি নাস্তিক বলতে পারেন না।”
ইতিহাস বিকৃতি খালেদা জিয়ার নিজস্ব হবি বলেও এ সময় মন্তব্য করেন ইনু। তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া ইতিহাসে বিশ্বাস করে না।”
জামায়াত শিবিরের সহিংসতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “জামায়াত কোন গণতান্ত্রিক দল নয়। এটি সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী একটি সন্ত্রাসী দল। তবে তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।”
ইনু বলেন, সংবাদ মাধ্যমের অবারিত স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে এর অপব্যবহারের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থিত দু একটি সংবাদ মাধ্যম প্রতিনিয়ত মিথ্যা, অতিরঞ্জিত এবং কাল্পনিক সংবাদ পরিবেশন করে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
এ সময় তিনি এসব সংবাদ মাধ্যমের প্রতি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান। তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কাজ করছি। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কি করা যায় তা দেখা হবে। বিতর্কিত সংখ্যা বাতিল অথবা নিবন্ধন বাতিল সব কিছুই সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। সময়মতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইনু বলেন, “বিএনপিতে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ আছেন তাদের অনুরোধ করছি, বেগম জিয়াকে এসব থেকে বিরত রাখুন। যদি ব্যর্থ হন তবে জনতার কাফেলাতে শরীক হোন। খালেদা জিয়াকে ত্যাগ করুন।”
ঢাকা জার্নাল, ১৯ মার্চ , ২০১৩