মিরসরাইয়ে চাঞ্চল্যকর সেই ছিনতাইয়ে অংশ নেয় ১০ জন ।। আদালতে লোমহর্ষক কাহিনীর বর্ণনা দিল সন্ত্রাসী আরিফ
সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫ প্রথমে কোটি টাকা বহনকারী গাড়িতে ছিনতাই কাজে অংশ নেয় ১০ জন। প্রাইভেট কারে এলোপাতাড়ি গুলি করে ছিনতাইকারী ছাত্রলীগ–যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। তাদের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে তিনজন। কোটি টাকার মধ্যে শেষতক ১৪ লাখ টাকার নাগাল পায় তারা। পরে ১০ ছিনতাইকারীর চারজন আবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ তিনজনকে দেখতেও যান। কি সাহস! যেন ফিল্মকেও হার মানায়। গ্রেপ্তারকৃত এক ছিনতাইকারীর লোমহর্ষক জবানবন্দী থেকে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
মিরসরাইয়ে মুখোশ পড়ে ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা এমরান উদ্দিনের কোটি টাকা বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে প্রথমে গুলি করে সন্ত্রাসী মামুন ও বেলায়েত। তিনজনকে গুলিবিদ্ধ করে গাড়ি থেকে ১৪ লাখ টাকার একটি ব্যাগ তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী নোমান–আমজাদ। এরপর ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে দুটি মোটর সাইকেলে করে ঘটনাস্থল মিঠাছড়া বাজার এলাকা ত্যাগ করে তারা।
এভাবে ফিল্মি স্টাইলে কার’র গতিরোধ করে টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ে জড়িত ১০ জনের একটি সিন্ডিকেটের নাম–পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সন্ত্রাসী নুর হোসেন আরিফ। ছিনতাই সম্পন্ন হয়েছে। এবার যে যারযার মতো চলে যাবে, ঘটনা এতদুর থাকলে কথা ছিল। টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের তিন ঘণ্টা পর গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ–সম্পাদক এমরান উদ্দিন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম এবং গাড়ির চালক বরুণ চক্রবর্তীকে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে দেখতেও যান ছাত্রলীগ–যুবলীগ নামধারী ‘চার’ সন্ত্রাসী।
জবানবন্দিতে তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অপারেশনে অংশ নেয়া এবং যার তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে সেই তথ্যদাতার নাম–পরিচয়ও প্রকাশ পেয়েছে। উঠে এসেছে ভয়ংকর এ ঘটনায় জড়িত ১৯ থেকে ২৫ বছরের তরুণ–যুবকদের সিন্ডিকেটের কথা। কোটি টাকার লোভে পড়েই তারা এ কাজটি করেছে বলে গত ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করে আরিফ। চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া দীর্ঘ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ২০ বছরের উঠতি সন্ত্রাসী নুর হোসেন আরিফ জানায়, ব্যবসায়ী এমরানের গাংচিল ফিলিং স্টেশনে কর্মরত ড্রাইভার কানা জাহিদ আমাদের তথ্য দেয়। সে চট্টগ্রাম–গ–১১–৪৩০১ কারটি অনুসরণ করে।
এক পর্যায়ে ব্যাংকের কাছাকাছি আসলে কানা জাহিদ জানায়, কারটিতে করে এক কোটি টাকার বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন এমরান সাহেব। সকাল ১১টার দিকে মিঠাছরা বাজারস্থ পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের সামনে আসার সাথে সাথে মুখোশ পড়ে দুই দিক থেকে দুটি মোটর সাইকেলে করে আমি, আমজাদ, নোমান, রহিম বাদশা,মাসুম বেলায়েত গুলি ছুড়তে ছুড়তে কারটির গতিরোধ করি। কারের দরজা না খোলায় মামুন ও বেলায়েত চালক ও এমরানকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে।
এরপর দরজা খুলে টাকার ব্যাগটি তুলে নেয় নোমান ও আমজাদ। এরপর উত্তর দিকে ঠাকুরদীঘিতে চলে যাই আমরা। সেখান থেকে আমরা দুটি মোটর সাইকেল চালিয়ে উপজেলার উপকুলীয় চর এলাকা ঝুলনপুরের দিকে চলে যাই। ঝুলনপুরে গিয়ে মামুনের এক বন্ধুর বাসায় মোটর সাইকেল দুটি রেখে সিএনজি নিয়ে পুনরায় মিঠাছড়া বাজারের (ঘটনাস্থল) দিকে আসি। এখানে এসে মামুনের বাসায় টাকার ব্যাগটি রেখে আমরা চারজন গুলিবৃদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা এমরান ভাইকে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে দেখতে যাই।
এদিকে টাকা ছিনতাইয়ের কাজে আরো যারা অংশ নিয়েছিল বলে নাম প্রকাশিত হয়েছে তারা হচ্ছে, নুর হোসেন আরিফ (২০), রহিম বাদশা (২১), মাসুম (২১), বেলায়েত (২২), আমজাদ(২১) ও নোমান (২৩)। তাদের সহযোগিতা করেছে কানা জাহিদ (১৯), মীর হোসেন বাহার(২৭), সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ আরাফাত ও শাহ মোজাম্মেল (২৫)।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট উপজেলার মিঠাছরা বাজার পূবালী ব্যাংকের সামনে প্রকাশ্যে ডাকাতির ঘটনায় গাংচিল ফিলিং স্টেশনের সহকারী ম্যানেজার আব্দুল জলিল প্রকাশ সুমন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির নাম উল্লেখ করে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।