দেশজুড়ে হরতালে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ-ভাঙচুর

মার্চ ১৮, ২০১৩

ctg-jamayat-strike-bg20130204203536ঢাকা জার্নাল: বিএনপির দেয়া টানা দুই দিনের হরতালের প্রথম দিন সোমবারেই সারাদেশে কিছু বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ-ভাঙচুর-বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে।

ধানমন্ডি, তেজগাঁও, ফার্মগেট পোস্ট অফিসের গলিতে সকাল সোয়া ৮টার দিকে মিছিল করে বিএনপি। এছাড়া কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, বাড্ডা, মালিবাগ, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী ও জুরাইন এলাকাতেও সকালে হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের হয়। এসব মিছিল থেকে যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়েছে।

মোহাম্মদপুর নুরজাহান রোডে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিল বের হয়।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে  একটি মিছিল বের করে থানা যুবদল। এসময় মিছিলকারীরা একটি ৭ নম্বর বাসে ভাঙচুর চালায় ও ১২টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।

এ ঘটানার বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল কুদ্দুস জানান, “একটি মিছিল থেকে পিকেটররা গাবতলী-সদরঘাটগামী ৭ নম্বর একটি বাস ভাঙচুর করে এবং সুরিটোলা স্কুলের সামনে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।”

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল সভাপতি সজলের নেতৃত্বে শাখারী বাজার থেকে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ধানমণ্ডির রাপা প্লাজার সামনে রাজা সিটি পরিবহনের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা।  এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে  ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারে রাপা প্লাজা শপিংমলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে নাজমুল নামের তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
বাসাবো ও পল্লবীর কালসী এলাকায় সোমবার সকালে বাসে আগুন দিয়েছে পিকেটাররা। হরতালের শুরুতে রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনী, মিরপুর, শ্যামলী ও গাবতলী এলাকায় বিক্ষিপ্ত হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

সকালে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে পিকেটার সন্দেহে শিবিরের আট কর্মীকে আটক করা হয় বলে ওসি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সময় একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান এস আই এমরানুল ইসলাম।

সকালের প্রথমভাগে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। তবে কমলাপুর স্টেশন থেকে যথারীতি ট্রেন ছেড়ে গেছে। বিকেলের দিকে অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীতে যান চলাচল করেছে।

 
চট্টগ্রাম
সকালে নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল বের করে নগর বিএনপি। এছাড়া মীর নাসিরের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বের করা হয়। চেরাগীপাহাড় ও ডিসি এলাকায় মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াত শিবির কর্মীরা। এ সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। চকবাজার রাহাত্তারপুল, তিনপুলের মাথাসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ বের করেছেন বিএনপিসহ ১৮দলীয় জোট নেতা-কর্মীরা।
কাজীর দেউড়ি এলাকায় পিকাটারদের ঢিলে একটি সিএনজি অটোরিকশার ড্রাউভার আহত হন। অন্যবারের তুলনায় এবার রাস্তা-ঘাটে যান চলাচল কম ছিল।
জেলার বাশঁখালী উপজেরার নাপোড়া বাজারের নিকটে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা  চট্টগ্রাম-বাঁশখালী সড়কে একটি বেইলি ব্রিজ তুলে ফেলে। এতে বাশঁখালীর একটি অংশের সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী বাজারে ছাত্রলীগ কর্মীরা স্থানীয় জামায়াত নিয়ন্ত্রাধীন ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে।
রংপুর
হরতালের শুরুতে ভোরে নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাড়ি সিংগিমারী রেলওয়ে ব্রিজে পিকেটাররা আগুন ধরিয়ে দিয়ে অবরোধ করে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এতে ট্রেন যোগাযোগ রংপুর-পার্বতীপুর রুটে রেলওয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার সকাল আটটার দিকে  নগরীর মাহিগঞ্জ-পীরগাছা সড়কের  সরেয়ার তলে বিএনপি নেতা কর্মীরা দুইটি অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অন্তত চারটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে।
অন্যদিকে, সকাল সাড়ে সাতটার  নগরীর পুড়াতন রেডিওয় সেন্টারের সামনে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শিবির নেতাকর্মীরা। হরতালে পুলিশ ভোর থেকে নগরীর কলেজপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। হরতালের কারণে নগরী এবং আশপাশের হাটবাজারগুলোতেও কোনো দোকানপাট খোলে নি দোকানীরা। আন্তঃ ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়েও যায় নি।  নগরীর শাপলা চত্বর জামায়াত অফিস, গ্রান্ড হোটেল মোড়ে বিএনপি অফিস, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সাতমাথা, মডার্ন, লালবাগ, পার্কের মোড়, টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবির টহলদারী চলে সারাদিন।
কুমিল্লা
সোমবার সকালে কুমিল্লা চাঁদপুর সড়কের বিজরা বাজারে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে পিকেটাররা। সেখানে মিছিল সমাবেশ করে ছাত্রশিবির।
নগরীর ধর্মপুর টমছমব্রিজ ও চকবাজার থেকে পৃথক মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির।
নগরীর কান্দিরপাড়ে মিছিল পিকেটিং করে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল। পরে ১৮ দলের মিছিল নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে মিছিল পিকেটিং ও সমাবেশ করে।
লাকসামে বিএনপি মিছিল বের করলে বাধা দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করলে ধাওয়া পাল্টা হয়। এছাড়াও চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, ব্রাহ্মণপাড়া, ইলিয়টগঞ্জ, সৈয়দপুর, দাউদকান্দিতে হরতালের সমর্থনে মিছিল পিকেটিং করে বিএনপি, জামায়াত  অঙ্গসংগঠন।
রাজশাহী
সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নগরীর বাটার মোড় থেকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে বিএনপি।
মিছিলটি মালোপাড়া এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ পেছন থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তবে এতে কেউ আহত হবার খবর পাওয়া যায়নি।
সকাল পৌনে আটটার দিকে নগরীর শাহ মখদুম কলেজের সামনে রাস্তার ওপর টায়ারে জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে হরতাল সমর্থকরা। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই তারা পালিয়ে যায়।
এছাড়া রোববার রাতে জামায়াত-শিবিরকে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে পবা উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে আটক করে পুলিশ।
ভোলা
ভোলার গুইংগারহাটে পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থিত বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সদর থানার ওসি বেলায়েত হোসেনসহ তিন পুলিশ সদস্য ও ১৩ পিকেটার আহত হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ পিকেটাররা পুলিশ বহনকারী একটি পিকআপভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষোপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সিরাজগঞ্জ
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সোমবার সিরাজগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। এছাড়া জেলার তাড়াশ এবং উল্লাপাড়াতেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
হরতালে কোনো রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ফেনীতে পিকেটারদের ইটের আঘাতে আহত এক ট্রাক ড্রাইভারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি সমাবেশে ককটেল বিস্ফোরণ ও একে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতার পর পুলিশ দলটির যেসব নেতাকর্মীকে আটক করে তাদের মুক্তির দাবিতে সোমবার সকাল থেকে টানা দুই দিনের হরতালের একটি পূর্বঘোষিত কর্মসূচী পালন করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.