মরুভূমিতে মানুষ পোড়ানো উৎসব!

আগস্ট ২৬, ২০১৫

Manঢাকা জার্নাল: ভাবুন তো সমুদ্র সৈকতে কিংবা মরুভূমিতে জলন্ত মানুষ দেখতে কেমন লাগবে? ভয়, বিস্ময় ও নাকি কষ্ট! ভাবনা-চিন্তা বাদ চলুন, মূল কথায় যাই-

১৯৮৬ সালে দু’জন ব্যক্তি নতুন এক বার্ষিক উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেন। আর তা হলো-আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো বেকার সমুদ্র সৈকতে কাঠের তৈরি মানব বা কাঠযুক্ত মানব ভাস্কর্য পোড়ানো। যার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় পোড়া মানুষ, যাকে বলে ‌`‌‌‌‌‌বার্নিং ম্যান’।

একই বছর ২১ জুন ল্যারি হারভি ও জেরি জেমস নামে ৪০ ফুট উচ্চতার কাঠের তৈরি মানব ভাস্কর্য বানিয়ে পোড়ানো হয়। যা `‌‌‌‌‌বার্নিং ম্যান’ নামে এক অখ্যাত উৎসবের রূপ নেয়।

১৯৯০ সালে এই উৎসবটি দেশটির ব্লাক রক মরুভূমিতে স্থানান্তর করা হয়। উৎসবটির চিত্র ধারণ করেন স্কট লন্ডন নামে এক আলোকচিত্রী।

তিনি বলেন, কাঠের মানব পোড়ানোর মধ্যদিয়ে সেখানে একটি বৃহৎ শৈল্পিক মন্দির তৈরি করা হয়েছে। ওই সময় সেটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠের অস্থায়ী মন্দির বলে গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচটি ছোট মন্দিরের সমন্বয়ে ১২০ ফুট উচ্চতার একটি টাওয়ার মরুভূমির বুকে এক স্বপ্নিল স্থাপত্য নিদর্শন হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।

একদা আলোকচিত্রী স্কট লন্ডন মানুষ পোড়ানোর বিষয়টি ভাবছিলেন। স্কট বলেন, আমি যখন প্রথম বার্নিং ম্যানের বিষয়টি শুনি, তখন কোনো আগ্রহ ছিল না। মরুভূমিতে পাগল মানুষের কাজ কারবার চোখের সামনে ভেসেছে। ওসব আমার সঙ্গে যায় না।
Man 2যাহোক, অবশেষে স্কট তার প্রেমিকার সঙ্গে মরুভূমিতে ‘মার্নিং ম্যান’ দেখতে যান। যা তিনি আগে কখনই দেখেননি। যা দেখে এতোটাই উচ্ছ্বসিত হয়েছেন গত ১২ বছর ধরে প্রতি বছর তিনি ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসবে ছুটে আসেন।

এই উৎসব একেবারে মরুভূমির জনশূন্য স্থানে উদযাপিত হয়। আগ্রহীরা সপ্তাহব্যাপী উৎসবে অবস্থান করার জন্য সব ধরনের খাবার এবং অনুষঙ্গিক বিষয় সঙ্গে নিয়ে আসেন।

কারো কিছু প্রয়োজনে সবাই সবারটা শেয়ার করেন। অর্থের ব্যবহার এখানে নেই বললেই চলে। স্রেফ বরফ এবং কফি ছাড়া কিছুই এখানে বিক্রি হয় না।

‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ শিক্ষাই যেন এ উৎসবের মর্মবাণী। কাঠের তৈরি মানব ভাস্কর্য পোড়ানোর সময় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের দিক-নির্দেশনা মেনে চলতে উৎসাহিত করা হয়।

man 3২০১১ সালে উৎসবটি বাণিজ্যে পরিণত হয়। এ বছর ৫০ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে যোগ দেন। এখন প্রতি বছর ব্লাক রক মরুভূমি অস্থায়ী শহরের আকার ধারণ করে। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী শিবিরগুলো রাস্তা ও লোকালয়ের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে আগের মতো সেই নির্জনতা ও সুনসান নিরবতা নেই। যেন উৎসবটি এখন বিশেষ বিশেষত্বহীন।
দর্শনার্থীরা যখন সপ্তাহের জন্য এখানে অবস্থান করেন। তখন তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে যে যার মতো শিল্পকর্ম বানিয়ে এখানে প্রদর্শন করেন।

যে ঐতিহ্যবাহী উৎসবে আপনি বিনোদন নিতে যাচ্ছেন, সেখানে দর্শক এবং পারফর্মারের মধ্যে সীমানা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ‌‌ফলে ‘বার্নিং ম্যান’‌ এখন এক কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
আলোকচিত্রী স্কট বলেন, উৎসবে প্রতেক্যেই তার সার্বিক অভিজ্ঞতার কিছু অংশ শেয়ার করে অবদান রাখে এবং আমি সেটি খুব পছন্দ করি। আর সেটাই মূলত অন্তহীন আকর্ষণ যা ভাগাভাগি করতে দলে দলে মানুষ এ উৎসবে আসেন।

এ বছরও উৎসবটি আগামী ৩০ আগস্ট শুরু হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২৬, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.