আজ চলচ্চিত্রকার ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের৮০তম জন্মবার্ষিকী
আগস্ট ১৯, ২০১৫ আজ ১৯ আগস্ট বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের এই দিনে তিনি ফেনীর মাজুপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
এই মহান চলচ্চিত্রকারের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদের চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগ আগামীকাল বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় আগামীকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় জহির রায়হান-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাংবাদিক কামাল লোহানী, উদীচীর সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্রকার মশিউদ্দিন শাকের এবং জহির রায়হান-এর পুত্র অনল রায়হান। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ এতে সভাপতিত্ব করবেন।
আলোচনা শেষে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এ পর্বে “শিল্পে-যুদ্ধে জহির রায়হান” শীর্ষক গীতি-আলেখ্য পরিবেশন করবেন উদীচী মিরপুর শাখার শিল্পীরা। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করবেন দলীয় সঙ্গীত। এছাড়া, থাকবে জহির রায়হান নির্মিত চলচ্চিত্র “বেহুলা” এবং এই মহান চলচ্চিত্রকারের উপর সেন্টু রায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র “জহির রায়হান”-এর প্রদর্শনী।
জহির রায়হান ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ¯œাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৫০ সালে সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে।
কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। এজন্য তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত তথ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে। তার রচিত ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে বাঙালীর ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট প্রতিফলিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র।
তাঁর রচিত ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। এটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। ১৯৬৮ সালে ‘আরেক ফাল্গুন’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে রচিত। ‘বরফ গলা নদী’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ‘আর কতদিন’ প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। তার রচিত উপন্যাস, গল্প বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে জহির রায়হান ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ফিরে আসেন। ফিরে এসে তার অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সারের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনে তাকে খুঁজতে শুরু করেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে ভাইকে খুঁজতে যেয়ে তিনি আর ফিরে আসেন নি।