তাজউদ্দীন আহমদের ৯০তম জন্মদিন

জুলাই ২৩, ২০১৫

Tajuddin_Ahmedঢাকা জার্নাল: মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ৯০তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই)।

১৯২৫ সালের এই দিনে গাজীপুর জেল‍ার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়‍া গ্রামে মৌলভী মুহাম্মদ ইয়াসিন খান এবং মেহেরুন্নেসা খানমের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। মধ্যবিত্ত মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারের তাজউদ্দীন আহমদের ছিল চার ভাই ও ছয় বোন।

তাজউদ্দীন আহমদের শিক্ষা জীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের মক্তবে। পরে তিনি ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা করেন। চর্তুথ শ্রেণিতে থাকার সময় তাজউদ্দীন কাপাসিয়া মাইনর ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি কালীগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনিস্টিটিউশন, ঢাকা মুসলিম বয়েজ স্কুল, সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাজউদ্দীন আহমদ পবিত্র কোরআনের হাফেজও ছিলেন।

১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক প্রশিক্ষন নেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি কলকাতা বোর্ডে প্রথম শ্রেণিতে ১২তম স্থান অর্জন করেন। ১৯৪৮ সালে ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তাজউদ্দীন। ১৯৬৪ সালে অর্জন করেন ল’ ডিগ্রি।

ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এদেশে ভাষার অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনসহ সব সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের টিকেটে এমএলএ নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ।

আওয়ামী লীগ গঠন প্রক্রিয়ার মূল উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে জাতির চরম সংকটময় মুহূর্তে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রিসভা থেকে সরে যান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্র সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দি করে। পরে তাকে জেলখানায় বন্দি করে রাখে। বন্দি থাকাবস্থায় একই বছরের ৩ নভেম্বর তাকেসহ চার জাতীয় নেতাকে ‍কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভ‍াবে হত্যা করা হয়।

ব্যক্তিজীবনে ১৯৫৯ সালের ২৬ এপ্রিল সৈয়দা জোহরা খাতুন লিলির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া তাজউদ্দীন আহমদ চার সন্তানের বাবা। তার বড় মেয়ে শারমিন আহমদ রিতি, মেজো মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি (গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য) এবং কনিষ্ঠা মেয়ে মাহজাবিন আহমদ মিমি; তার একমাত্র পুত্র তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ (সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী)।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা, সততা ও আর্দশবাদের অনন্য এক প্রতীক হয়ে আছেন তাজউদ্দীন আহমদ।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২৩, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.