ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শক্তির জয় হবেই

মার্চ ১৬, ২০১৩

02122013131806ogni-1ঢাকা জার্নাল: আমাদের দেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আসে গার্মেন্ট শ্রমিকের রক্ত-ঘামে। সেই গার্মেন্ট শ্রমিকরাই আজকের সমাবেশের মূল আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী। গণজাগরণ মঞ্চের শুক্রবারের সমাবেশ সফল করতে গতকাল আশুলিয়ার শিল্প এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কর্মীরা মাইকিং করেছে, সর্বসাধারণকে দাওয়াত দিয়েছে । এবং মানুষ তাতে বিপুল সাড়াও দিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে শহুরে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তের চাইতে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ বেশি ছিল। পাক-হানাদার বাহিনীর অত্যাচারও এরাই বেশি সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্র শোষণহীন সমাজের কথা বললেও আদতে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই মানুষগুলোর সকল অবদান ও ত্যাগ অনেকটা আড়ালেই রয়ে গেছে।

`৭১ এর পরাজিত শক্তিকে এদেশে পুনর্বাসন ও মদত দিয়েছে বিগত ৪২ বছরের শাসকগোষ্ঠীই। এই শাসকরাই এখনো শ্রমিকের ন্যায্য মজুরীর দাবিকে দমিয়ে রাখতে সিদ্ধহস্ত। শতশত শ্রমিককে পুড়িয়ে মেরেও মালিক এখানে ঘুরে বেড়ায় রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। ভোটের রাজনীতিতে বিরোধ থাকলেও এই শাসকরা শ্রমিককে শোষণ করার বেলায় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বাজায় রাখতে জোট-মহাজোট মিলে একজোট।

কিন্তু শ্রমিকের ঘামের ন্যায় দেশের জন্য তার ভালবাসাও নিখাদ। বড়লোকের দুলালেরা কথায় কথায় বলে উঠে Bangladesh is a dirty country. সেয়ান হবার সাথে সাথে এই `নোংরা` দেশটাকে ছেড়ে তারা বিদেশে পাড়ি জমাতে পারে। কিন্তু বিদেশে এই ননির পুতুলদের হুইস্কি-ব্র্যান্ডির জন্য টাকাটা কিন্তু এই দেশ থেকেই পাঠানো হয়।

বড়লোকের তনয়-তনয়ারা বিদেশে গেলে কাড়ি কাড়ি বৈদেশিক মুদ্রাও তাদের সাথে চলে যায়। অথচ এই বৈদেশিক মুদ্রা এদেশে এসেছিল শ্রমিকের রক্ত-ঘামে। সেই শ্রমিক মধ্যবিত্তের ন্যায় চটকাদারি বাণী আওড়ানোর মধ্যে নেই। নিজের রক্ত দিয়ে সে তার দেশপ্রেম প্রমাণ করে। দেশকে সে দেয় অনেক কিছু ;বিনিময়ে রাষ্ট্র তার দিকে তাক করে বন্দুক, লেলিয়ে দেয় শিল্প-পুলিশ। তবু শ্রমিক বলতে পারে না `দেশটা নোংরা`।

শাহবাগের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও এবং সর্বস্তরের মানুষের সমর্থনলাভ করতে পারলেও আজই প্রথম শ্রমিকশ্রেণির বিপুল অংশগ্রহণ হতে যাচ্ছে । কিন্তু সেই সমাবেশ আয়োজনে বাধা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে `হেফাজতে ইসলাম` নামে একটি সংগঠন।

‘হেফাজতে ইসলাম’ নামে  সংগঠনটি  নিজেদেরকে জামাত-শিবির বিরোধী বলে দাবি করলেও এখনো পর্যন্ত তারা জামাতের মিথ্যাচারকে অবলম্বন করেই বক্তব্য দিয়ে আসছে। তাদের কর্মসূচিও জামাত-শিবিরের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডকে আড়াল করছে। চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার ১০ জন আলেমকে হত্যার উদ্দেশ্যে শিবিরের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেল, কিন্তু এই বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের কোন বক্তব্য কিংবা কর্মসূচি নেই। নেই সারা দেশে হত্যা-খুন ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে দেশের শান্তি বিনষ্টকারীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নেই নূন্যতম প্রতিবাদ। মিথ্যা-গুজব রটিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে  চলেছে জামাত-শিবির। সাঈদিকে চাঁদে দেখা গেছে বলে সরল মানুষগুলোকে রাস্তায় বের করে এনে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়ে কোন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় জামাত-শিবির। এসব নিয়েই হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটি নীরব। প্রশ্ন জাগতে বাধ্য তারা ইসলামকে হেফাজত করতে চান নাকি জামাতকে।

এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের ন্যায় আশুলিয়ায়ও সরকার কিংবা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেই তার দায় সারতে পারে। যেমনটি করে প্রায় দু`শ শ্রমিক আগুনে পুড়ে কয়লা হবার পরেও সরকার কোন না কোনভাবে তার দায় এড়াতে সক্ষম হয়েছে । কিন্তু প্রজন্মের তরুণেরা; যারা বিগত একমাসে জাতিকে একটি নতুন সূর্য এনে দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে ,স্বপ্ন দেখিয়েছে `৭১ এ লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা-মুক্তির পূর্ণতা এনে দেয়ার ………সেই তরুণরা এই লড়াইয়ে হেরে গেলে এর দায় গোটা জাতিকেই নিতে হবে।

কিন্তু সেই ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ অবদি মানুষের চোখে যে দৃপ্ত শপথ দেখেছি, যে প্রত্যয় দেখেছি তা আমেদের সাহস যোগায় হতাশ হতে বারণ করে। দুই-একটি ধর্মব্যবসায়ী চক্রের চোখ রাঙানি মোকাবেলা করা এই বিশাল জনতার জন্য মামুলি ব্যপার। শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তি ’৭১ এর  ন্যায় আবারও জয়লাভ করবে। ধর্মব্যবসায়ীদের কোন প্রকার অপপ্রচারই জনতার এই বিজয়কে রুখতে পারবেনা। জনতার বিজয় বারবার ছিনতাই হওয়া সত্ত্বেও সে তা পুন:রুদ্ধার করতেও সক্ষম।

জয় বাংলা

জয় জনতা

লাকি আক্তার, সমাজকল্যাণ ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
সূত্র: বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.