সোয়ান শ্রমিক আন্দোলন, ‘ট্যাকা পাস না, তোরে তালাক দিমু’

জুলাই ১৭, ২০১৫

Moni Beagamএস এম আববাস : ‘ট্যাকা পাস না, ঘরে উঠিস না, তোরে তালাক দিমু।’ কথা দু’টি বলতে বলতে থেমে যান মনি বেগম। সঙ্গে সঙ্গে চোখ জলে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

শুক্রবার (১৭ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া চাঁদপুর আর ঠাকুরগাঁওয়ের ভাষা মিলিয়ে স্বামী-সংসার ভেঙে যাওয়া পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে থাকেন সোয়ান গার্মেন্টসের এই শ্রমিক।

মনি বেগম বলেন, চারদিন বাসায় ফেরা হয়নি। মনে করেছিলাম টাকা নিয়ে বাসায় ফিরবো। দুই বছরের মেয়ে আর স্বামীর সঙ্গে ঈদের আনন্দ করবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্বামী-সংসারই হয়তো থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) রাতে উত্তরার হাজি ক্যাম্পের সামনে ভাড়া বাসায় ফেরত যান ২৫-২৬ বছর বয়সী মনি বেগম। স্বামী ঠাকুরগাঁওয়ের মোকছেদুল আর দুই বছরের শিশু জান্নাতুল মারিয়ার সঙ্গে দেখা করে পরদিন আবারও আন্দোলনে যোগ দেন।

শুক্রবার আন্দোলনে যোগ দিতে পারলেও স্বামী আর সন্তানের সঙ্গে আগের রাত কাটানো হয়নি তার। ঘরে ঢুকতে নিষেধ করেছেন স্বামী মোকছেদুল।

স্ত্রী বাসায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই স্বামী রিকশা মিস্ত্রী মোকছেদুল বলে দিয়েছেন, ট্যাকা পাস না, ঘরে উঠিস না, তোরে তালাক দিমু।
Hajratমনি বেগম জানান, তার সহকর্মী সোয়ান শ্রমিক মিমির বাসায় রাতযাপন করে আবার আজকের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। টাকা নিয়ে ফিরতে পারলে হয়তো ঘর-সংসার ফিরে পাওয়া সুযোগ হতে পারে।

শুধু মনি বেগমের অবস্থাই এমন, তা নয়। কারো সংসার ভেঙে যাবার ভয়, কেউবা ভাড়া দিতে না পেরে বাসায় ঢুকতে পারেননি।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া হজরত বাড়ি ভাড়া দিতে ‍না পারায় মালিকের হাতে মার খেয়ে সপরিবারে ঘরের বাইরে কাটাচ্ছেন। বেতন পেলে সপরিবারে ভাড়া বাসায় ফিরতে পারবেন।

হজরত বলেন, টিনশেড বাসা ভাড়া মাসে ২২০০ টাকা। দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে গার্মেন্টসে চাকরির বেতন দিয়ে। দুই মাসের ভাড়া এবং বকেয়া ৯০০ টাকা দিতে না পারায় বাসার মালিক উত্তর গাওয়ালের কাজ‍ী বাড়ির নজরুল তাকে মারধর করে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফের শুক্রবার বিকেলে আন্দোলনে যোগ দেন হজরত। স্ত্রী রাশিদা বেগমকেও মারধর করে বাসা মালিক।

হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে রাশিদা বেগম বলেন, টাকা দিলে বাসায় ফেরা যাবে, না হলে আবারো ঝামেলা বাধবে, মারধোর করবে। বাসা থাকতেও ফিরতে পারছি না। তাই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আমিও আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। বেতন না পেলে ঈদের পর আমার মতো আরো আনেকেই যোগ দেবেন।

Sowan 1সোয়ান গার্মেন্টের মালিকের আত্মহত্যার পর তিন মাসের বকেয়া বেতন ও উৎসব ভাতা বঞ্চিত হন শ্রমিকরা। মালিকের মৃত্যুর পর কারখানায় অঘোষিতভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে আরো অংশীদার থাকলেও তারা এ শ্রমিকের বেতন বা কারখানা চালুর দায়িত্ব নেয়নি।

পাওনা না পেয়ে গত ১২ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন সোয়ান গার্মেন্টস শ্রমিকরা। আন্দোলনের মাধ্যমে ঈদের আগে বেতন-ভাতা পাওয়ার আশায় শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তবে টানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও ঈদের আগে বেতন-ভাতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই আর।

শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে তাদের দরজা খুলছে না। আর বিজিএমইএ কোনো দায়িত্ব না নেওয়ায় এ অবস্থার শিকার হতে হলো।

শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, মালিকের স্ত্রী শেষ পর্যন্ত আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ইসলামী ব্যাংকের প্রধানের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। তবে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা নেয়নি।

মন্টু ঘোষ আরো বলেন, সরকারও একটি কমিটি করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। এ নিয়ে গত ৮ জুলাই একটি মিটিং ডাকতে বলা হলেও কারখানা পরিদর্শক ঈদের পর আগামী ২৭ জুলাই মিটিং আহ্বান করেছেন রহস্যজনক কারণে। আর বিজিএমইএ কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না।

তবে চলমান আন্দোলনে শ্রমিকদের আশার কথা শুনিয়েছেন শ্রমিক নেতা। মন্টু ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের কথা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ঈদের দিন দেখা করবেন শ্রমিক নেতারা। আর গার্মেন্ট মালিকের স্ত্রী বলেছেন, জীবন দিয়ে হলেও টাকা পরিশোধ করবো। সৌজন্যে- বাংলানিউজ।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১৭, ২০১৫।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.