imagesঢাকা জার্নাল: কিছু দিন আগে ভ্যানিটি ফেয়ার-এ ক্যাটলিন জেনারের ছবি দেখে সবাই খুব চমকে উঠেছিলেন। কেউ ভাবতেই পারেননি একজন রূপান্তরকামী লিঙ্গ পরিবর্তন করে এমন এক সুন্দরী মহিলা হয়ে উঠতে পারেন।

৬৫ বছরের ক্যাটলিনকে এত দিন সবাই জানতেন ব্রুস জেনার নামে। কিম কারদেশিয়ানের সৎ-বাবা। অলিম্পিকসেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। অনেক বছর ধরেই তাঁর সুপ্ত ইচ্ছে ছিল একজন মহিলা হয়ে ওঠার। ব্রুসের এই সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি হননি তাঁর নিজের মেয়ে কাইলি জেনার। যদিও বাবার এ হেন পরিবর্তনে এখন খুশি সে-ও।

কলকাতায় মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে প্রচারের আলোয় এসেছেন, তাতে কিন্তু রূপান্তরকামীদের একটা নিজস্ব জায়গা তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। অনেক বাবা-মা-সন্তানের সত্যিটা জানলেও মেনে নেওয়ার মানসিকতাটাই তাঁদের নেই। ব্যতিক্রম কিন্তু তা সত্ত্বেও থেকেই যায়। ঠিক যেমন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং ব্র্যাড পিট তাঁদের আট বছরের মেয়ে শিলোকে রেড কার্পেটে ছেলেদের স্যুট পরে নিজেকে জন বলে পরিচিত হওয়ার অনুমতি দেন।

আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শো-এ চোখ ধাঁধানো যে মডেলরা হেঁটে বেড়ান, তাঁদের কেউ কেউ কিন্তু রূপান্তরকামী। অথচ দেখে বোঝাই যায় না!

 

আন্দ্রেজা পেজিক

একজন অ্যান্ড্রোজিনাস মডেল হিসেবে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন আন্দ্রেজা। জাঁ পল গ্যতিয়ে-র মতো ফ্যাশন হাউস মেয়েদের পোশাকের মডেল হিসেবে আন্দ্রেজার অবস্থানই ছিল শীর্ষে। সেই আন্দ্রেজা গত বছর একটি সার্জারি করিয়ে খাতায়কলমে একজন মহিলা হয়েছেন। আন্দ্রেজ থেকে নাম বদলে হয়েছেন আন্দ্রেজা।

 

হারি নেফ

বিশ্ববিখ্যাত এক মডেলিং এজেন্সি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হারিকে সই করিয়েছেন তাঁদের চুক্তিপত্রে। জিসেল বুশেন আর ক্যান্ডিস সোয়ানপোলের মতো মডেলদের নিয়ে কাজ করে এই এজেন্সি।

 

জ্যাজ জেনিংস

এক নামজাদা স্কিনকেয়ার সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন করতে দেখা যাবে এই কিশোরকে। অল্প কিছু দিন আগেই ‘সি দ্য রিয়েল মি’ ক্যাম্পেনের জন্য সই করানো হয়েছিল জ্যাজকে।

 

কঞ্চিতা উর্স্ট

গত বছর এক আন্তর্জাতিক গানের প্রতিযোগিতা জিতে সবার নজরে পড়েছিলেন কঞ্চিতা। মুখভর্তি দাড়িগোঁফ কঞ্চিতার। নিজের গানের অ্যালবামও প্রকাশ করবেন তিনি আর কিছু দিনের ভেতর। এই অস্ট্রেলীয় প্যারিস ফ্যাশন উইকের মতো খ্যাতনামা ফ্যাশন শো-তেও অংশ নিয়েছেন। এ বছর গোল্ডেন গ্লোব-এও রেড কার্পেটে হেঁটেছেন কঞ্চিতা। জুলিয়ান মুর, জেনিফার লোপেজ-এর মতো সেলিব্রিটিদের সঙ্গে।

 

রূপান্তরকামী তালিকায় শুধু এই মডেলরাই নন, আছেন বিশ্ববিখ্যাত আরও অনেক মডেল। আছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেকেই।

 

জ্যানেট মক

এক বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিনের প্রাক্তন সম্পাদক। বইও লিখেছেন নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। জন্মসূত্রে পুরুষ মককে এখন কিন্তু মহিলা হিসেবেই সবাই চেনেন।

 

মার্সি বাওয়ার্স

প্রথম রূপান্তরকামী মহিলা যিনি পেশায় একজন চিকিৎসকও। বিখ্যাত রূপান্তরকামী মডেল আইসিস কিং-এর সার্জারি ইনিই করেছিলেন।

 

বালিয়ান বুশবম

অলিম্পিক পোল-ভল্টার বালিয়ান জন্মসূত্রে মহিলা। এখন কিন্তু তাঁকে দেখলে জাস্টিন টিম্বারলেকের ভাই বলে ভুল হতে পারে। এতটাই সুদর্শন পুরুষ এই জার্মান।

 

শাজ বোনো

জন্মসূত্রে মেয়ে। রূপান্তরের পর তিনি সরব হয়েছেন সমকামীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে।

 

চামিলা আসাঙ্কা

শ্রীলঙ্কার এই রূপান্তরকামী মডেল ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন মানচিত্রে।

 

আমেলিয়া মালতেপি

জন্মসূত্রে বাংলাদেশি আমেলিয়া এখন কানাডার বাসিন্দা। তাঁর একটাই লক্ষ্য। মিস ওয়ার্ল্ডের শিরোপা পাওয়া।

 

বেগম নওয়াজিশ আলি

এক সময় পাকিস্তানের এক জনপ্রিয় চ্যাট শো হোস্ট করতেন নওয়াজিশ।

 

এই দেশেও রূপান্তরকামীদের অভাব নেই। ববি ডার্লিং অভিনয় করছেন অনেক বছর ধরে। লক্ষ্মীনারায়ণ ত্রিপাঠি, ডিজাইনার রোহিত বর্মারা প্রকাশ্যে নিজেদের রূপান্তরকামী বললেও সমাজে এঁদের অবস্থান এখনও বিতর্কিত। এলজিবিটিদের নিয়ে বহু দিন ধরে সংগ্রাম চালাচ্ছেন হরিশ আইয়ার। দিনকয়েক আগে তিনি উঠে এসেছিলেন শিরোনামে। তাঁর বিয়ের বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল একজন যোগ্য আইয়ার পাত্র চাই হরিশের জন্য। হরিশ বললেন, ‘‘ভারতে এখনও ট্রান্সজেন্ডারদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। শুধু গ্ল্যামার জগতেই নয়, রূপান্তরকামীদের অনেকেই কিন্তু আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট বা সমাজকর্মী। আমি অনেক রূপান্তরকামী মডেলকে জানি, যাঁদের খুব নামজাদা মডেল হওয়ার যোগ্যতা আছে। এতটাই সুন্দর তাঁরা।’’

দুনিয়া তোলপাড় এখন রূপান্তরকামীদের প্রতিভায়। লিখছেন নাসরিন খান। সৌজন্যে- আনন্দবাজার পত্রিকা।

ছবি: টুইটার।