প্রথম ফ্রান্সিস কি ক্ষণিকের অতিথি?

মার্চ ১৫, ২০১৩

0,,16672062_401,00ঢাকা জার্নাল: আর্জেন্টিনার কার্ডিনাল হর্খে মারিও ব্যার্গোগলিও ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হলেন৷ ডিডাবলিউ’এর ভাষ্যকার ক্লাউস ক্রেমার’এর প্রশ্ন – প্রথম ফ্রান্সিসকে কি ‘মধ্যকালীন’ পোপ হিসেবে দেখা উচিত?

কার্ডিনালদের কনক্লেভে পোপ নির্বাচিত হন, সেই কার্ডিনালদের মধ্য থেকেই৷ এবং স্বভাবতই কনক্লেভ শুরু হবার আগেই কে পোপ হবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলে৷ পোপ হওয়ার জন্য যে সব কার্ডিনালদের নাম খুব বেশি করে শোনা যাচ্ছে, তাদেরও কনক্লেভে ঢুকতে দেখা যায়৷

আবার প্রায়শ এও দেখা যায় যে. ফেভারিট হয়ে যারা কনক্লেভে ঢুকেছেন, তাঁরা কিন্তু পোপ হতে পারেননি৷ ফেভারিটদের সেই কার্ডিনাল থেকে গিয়েই কনক্লেভ থেকে বেরতে হয়৷ তাই কথায় বলে – যাঁরা পোপ হয়ে কনক্লেভে ঢোকেন, তাদের কার্ডিনাল হয়ে সেখান থেকে বেরতে হয়৷

দরদী মানুষ

এবার ঠিক যা হল৷ গণমাধ্যমে যে সব সম্ভাব্য পোপদের নাম শোনা যাচ্ছিল, তাদের সবাই বাদ পড়েছেন৷ পোপ হলেন এমন একজন যাজক, যিনি তাঁর সাদাসিধে জীবনযাত্রার ধরণ এবং মানবিকতার জন্য খ্যাত: একজন জেসুইট যাজক, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস’এর আর্চবিশপ হর্খে মারিও ব্যার্গোগলিও৷

স্বদেশের মানুষদের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গে তিনি খুব ভালোভাবে পরিচিত৷ সেই অভিজ্ঞতা ও সংবেদনশীলতা থেকেই তিনি আর্চবিশপের গাড়ি ও চালক ছেড়ে বাসে করে কাজে যেতেন৷ বাড়িতে নিজের খাবার নিজেই রেঁধে খেতেন৷ এ বিশ্বের বস্তি, ফাভেলা, টাউনশিপ কি উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে যে কোটি কোটি ক্যাথলিকদের বাস, এ ধরনের একটি মানুষ ভ্যাটিকানে অধিষ্ঠিত হওয়াটাই তাদের কাছে একটা আশার আলো৷

আবার রক্ষণশীলও বটে

কার্ডিনাল ব্যার্গোগলিও, যিনি বুধবার সন্ধ্যা থেকে পোপ প্রথম ফ্রান্সিস হলেন, তিনি আবার রক্ষণশীলও বটে৷ তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই, কেননা পোপ পদে তাঁর দুই পূর্বসূরি বিগত ৩৫ বছর ধরে শুধুমাত্র রক্ষণশীল বিশপ ও মঠাধ্যক্ষদেরই কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেছেন, এবং এই কার্ডিনালরাই শেষমেষ পোপ নির্বাচন করেন৷

প্রথম ফ্রান্সিস যে ক্যাথলিক গির্জায় আধুনিকীকরণের জোয়ার আনবেন, এটা প্রত্যাশা করা ভুল হবে – যদিও ক্যাথলিক গির্জার সমালোচকদের মধ্যে এই পোপ নির্বাচনের আগে ঠিক সেরকমই একটা আশা দানা বেঁধেছিল৷ জেসুইট যাজক ব্যার্গোগলিও অনেক উপলক্ষ্যেই ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানের সমালোচনা করেছেন; অপরদিকে তিনি অতি রক্ষণশীল ক্যাথলিক সংগঠন ‘‘কম্যুনিওনে এ লিবারাৎসিওনে”-র ঘনিষ্ঠ সহযোগী৷

সমস্যা অনেক এবং বিশাল

৭৬ বছর বয়সি পোপের সামনে সমস্যার কোনো অভাব নেই, এবং তার কিছু কিছু সুবিশালও বটে৷ গির্জার যাজকদের দ্বারা শিশু-কিশোরদের যৌন নিপীড়ন ক্যাথলিক গির্জার ভাবমূর্তির ব্যাপক হানি ঘটিয়েছে৷ এমনকি এর ফলে – বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে – বহু মানুষ ক্যাথলিক গির্জার সদস্যতা ত্যাগ করেছে।

প্রথম ফ্রান্সিসকে সর্বাগ্রে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে৷ আরও কাজ থাকবে – যেমন যাজক সম্প্রদায় এবং গির্জার অপরাপর কর্মীদের মধ্যে যে শ্রেণিবিভাগ বিরাজ করে, এমনকি একদিকে যাজক ও গির্জার কর্মকর্তা, অন্যদিকে সাধারণ ক্যাথলিক ভক্তদের মধ্যে যে বিভাজন রয়েছে, তা হ্রাসের প্রচেষ্টা করতে হবে৷ গির্জার অভ্যন্তরে অ-যাজকদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে৷ মহিলারাই গির্জার তৃণমূল কাজের মূল ভারটা বহন করেন৷ কাজেই গির্জার কাজকর্মের প্রেক্ষাপটে নারীদের একটা নতুন মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন৷

যাজকদের বিবাহ করা কিংবা এখনকার যা প্রথা, আজীবন অকৃতদার থাকা নিয়ে একটা খোলা বিতর্কের প্রয়োজন৷ যে সব ক্যাথলিক নারী-পুরুষ বিবাহবিচ্ছেদের পর দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে চাইছেন, কিংবা যে সব দম্পতির মধ্যে মাত্র একজন ক্যাথলিক, সে সব ক্ষেত্রেও গির্জার নীতির পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন৷ প্রোটেস্টান্ট ও অপরাপর অ-ক্যাথলিক খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কটাও পুনরায় ভেবে দেখা উচিত৷ বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপের গুরুত্বও থেকে যাচ্ছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি৷

ভবিষ্যতের নবী?

স্বয়ং ভ্যাটিকানেও সমস্যার অভাব নেই৷ ভ্যাটিলিকস কেলেঙ্কারি এবং তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য রোমহর্ষক কাণ্ডকারখানা ধীরে ধীরে এই ধারণার জন্ম দিচ্ছিল যে, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট আর ঠিকমতো তাঁর গির্জার হাল ধরে নেই৷ কার্ডিনাল রাৎসিঙার যখন পোপ হন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৮৷ প্রথম ফ্রান্সিসের বয়স তার মাত্র দু’বছর কম৷ কাজেই তিনি যে ক্যাথলিক গির্জার এক নতুন, সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের সূচনা ঘটাবেন, এটা ভাবা শক্ত৷ বরং এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, কার্ডিনালরা আবার একটি মধ্যকালীন সমাধানেরই আশ্রয় নিয়েছেন এবং একজন ‘মধ্যকালীন পোপ’ নির্বাচন করেছেন৷

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.