ইতালির রাষ্ট্রদূতকে ভারত ছাড়ার নিষেধাজ্ঞা আদালতের
মার্চ ১৫, ২০১৩ ঢাকা জার্নাল: ভারতে নিযু্ক্ত ইতালীর রাষ্ট্রদূত দানিয়েল মানচিনিকে দেশ না ছাড়ার আদেশ দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
ভারতের দুই মৎসজীবীকে সমুদ্রে গুলি করে হত্যা করার দায়ে বিচারাধীন দুই ইতালীয় নৌসেনাকে একমাসের জন্য নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রীম কোর্ট। ইতালীয় রাষ্ট্রদূত মি. মানচিনি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন যে ওই দুই ইতালীয় সেনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ভারতে ফিরে আসবেন।
গত সোমবার ইতালী জানায় যে দুই সেনা সদস্যকে তারা আর ভারতে পাঠাবে না। তারপরেই আজ দেশটির সুপ্রীম কোর্ট এই আদেশ দিল। এ নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক চাপের মুখে ইতালীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারী দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের প্রধান বিচারপতি আলতামস কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ ইতালীয় রাষ্ট্রদূত দানিয়েল মানচিনিকে ভারত না ছাড়ার ওই নির্দেশ দিয়েছে।
ইতালী যখন জানিয়ে দেয় গত সোমবার যে তারা ভারতে বিচারাধীন দুই নৌসেনা সদস্যকে আর ফেরত পাঠাবে না, তারপরে ইতালীর রাষ্ট্রদূতকে ভারত থেকে চলে যেতে বলা হবে, অর্থাৎ পার্সোনা নন গ্রাটা বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বলে ঘোষণা করা হবে – এরকম একটা কথা শোনা যাচ্ছিল – তার প্রেক্ষিতেই একটা জনস্বার্থ মামলা করেন সিনিয়র আইনজীবী সুব্যহ্মনীয়ম স্বামী। সেই মামলাতেই সুপ্রীম কোর্ট ভারত না ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে দানিয়েল মানচিনিকে।
যেহেতু তিনিই সুপ্রীম কোর্টের কাছে হলফনামা দিয়ে ওই দুই নৌসেনার ভারতে ফিরে আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছিলেন – তাই আদালত তাঁর কাছ থেকে যতক্ষন না এ ব্যাপারে জানতে পারছে, ততদিন তিনি দেশ ছাড়তে পারবেন না।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ইতালীর সরকারের প্রতিনিধি – তার রাষ্ট্রদূত – যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটা অমান্য করে রোমের ঘোষণায় ভারত সরকার, বিরোধী পক্ষ, নিহত মৎসজীবিদের পরিবার বা সাধারন মানুষ সকলেই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বিকেলে বলেছে যে ইতালীর সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আগে। সেটা আন্তর্জাতিক আদালতও হতে পারে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দরবারও হতে পারে। তবে এখনই ইতালীর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভারত সম্ভবত ভাবছে না।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো – বি জে পি আর বামপন্থীরা, সরকারকে এই বলে আক্রমণ করছে, যেহেতু দেশটার নাম ইতালী আর কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী জন্মসূত্রে ইতালীয় এবং তাঁর আত্মীয় – পরিবার সেদেশেই থাকেন – তাই সরকার কড়া ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করছে।
গতবছর ফেব্রুয়ারী মাসে ইতালীর একটি তেলবাহী জাহাজ যখন কোচির কাছাকাছি সমুদ্রে ছিল, তখন একটি ভারতীয় ট্রলার জাহাজটির কাছাকাছি চলে যায়। আর তখন প্রহরারত দুই নৌসেনা সদস্য মাসিমিলিয়ান লাতোরে এবং সালভাতোরে জিরোন ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালান – যাতে দুজন মৎসজীবীর মৃত্যু হয়।
জাহাজটিকে ভারতের বন্দরে নিয়ে আসা হয় আর গ্রেপ্তার করা হয় দুই সেনা সদস্যকে।
ইতালীর সরকার প্রথমে বলেছিল যে ট্রলারটিকে জলদস্যুদের নৌকা ভেবে ভুল করেছিলেন তাঁরা – এরপরে এটাও বলা হয় যে ঘটনাটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রে হয়েছে – তাই ভারতে সেনাসদস্যদের বিচার হতে পারে না। ভারত ওই সব যুক্তি মানে নি আর হত্যার মামলা চলতে থাকে।
ডিসেম্বরে ক্রিসমাসের ছুটিতে দেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করলে আদালত ওই দুই সেনাসদস্যকে ছুটি দেয় আর তাঁরা ফিরেও আসেন। এরপরে ফেব্রুয়ারী মাসে ইতালীর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য একমাসের ছুটির আবেদন করেন তারা – রাষ্ট্রদূতের গ্যারান্টির ভিত্তিতেই সুপ্রীম কোর্ট তাঁদের ছেড়ে দেয়।
কিন্তু হঠাৎই ইতালী জানায় যে ঘটনাটা যেহেতু আন্তর্জাতিক সমুদ্রে হয়েছে আর মি. লাতোরে ও মি. জিরোনের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ খারিজ হয়ে গেছে – তাই ভারতে বিচারের জন্য সেনাদের ফেরত দেওয়া হবে না। ভারত চাইলে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য নিক।
ইতালীর সরকারের সোমবারের এই ঘোষণা পর থেকেই একবছর ধরে চলতে থাকা বিতর্ক নতুন মোড় নিয়েছে ।