তৃতীয় শক্তির উত্থানের শঙ্কা: গোলাম সারওয়ার

মার্চ ১০, ২০১৩

Golam Sawer copyঢাকা জার্নাল: এ ধরনের সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে তৃতীয় শক্তির উত্থানের শঙ্কা আছে। আমি মনে করি, বড় দুই রাজনৈতিক দলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।

গোলাম সারওয়ার, সম্পাদক, দৈনিক সমকাল । সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকার ও বিরোধীদলের ভূমিকা, সংলাপ ও সমঝোত, তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ণ করেন?

গোলাম সারওয়ার: দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নিরপেক্ষ ও সহজ-সরলভাবে বিশ্লেষণ করলে বলতে হয়, আমাদের তথা জনগণের উৎকণ্ঠার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ৯০ সাল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে রয়েছে। দেশের রাজনীতির এই দুই প্রধান শক্তি দুই দল আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরস্পরবিরোধী ও অনড় অবস্থানে রয়েছে। দেখে আমাদের মনে হয়, একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে আমরা দাড়িয়ে আছি। বিষয়টি আমাদের অন্ধকার সুড়ঙ্গের কথা মনে করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, আমরাই কি শুধু দেশের মঙ্গলের কথা ভাবি; রাজনীতিকরা কি মোটেও ভাবেন না? একটি কথা আছে, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমাদের এটা দুর্ভাগ্য। একটা কথা এ দেশের রাজনীতিতে সব সময় মনে করা হয়, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। অনেকে এটাও প্রশ্ন করেন, এ অবস্থায় আমরা কোথায় যাব। এতে মনে হয়, দলীয় সংর্কীণ স্বার্থ, রাজনৈতিক সংর্কীণতা আমাদের বৃহৎ জাতীয় স্বার্থকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। আমাদের উৎকণ্ঠার কারণ এখানেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর পর নির্বাচন হয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ সংসদের মেয়াদকাল উর্ত্তীণ হবে। সামনে নির্বাচন। এ সব কারণে মনে হচ্ছে, আমরা অতল জলের গভীরে হারিয়ে যাই কিনা? এ ভয়টা কিন্তু সবার মধ্যে রয়েছে। যাদের সঙ্গে দেখা বা কথা হয়, তাদের প্রায় সবাই একই কথা বলেন – কি হচ্ছে? এরা শুধু সাধারণ মানুষই নন, অনেক সিনিয়র মন্ত্রী-এমপিও শঙ্কিত। তারা বলেন, কি হচ্ছে ?

প্রশ্ন: পরিস্থিতি কি বড় ধরণের সংঘর্ষের দিকে যাচ্ছে?

গোলাম সারওয়ার: এ মুহূর্তে পরস্পরবিরোধী যে অনঢ় অবস্থান দুই দলের মধ্যে বিদ্যমান দেখি, তখন মনে হয়, সামনে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন যদি না হয়, তাহলে পরিণতি আমাদের জন্য খারাপ হবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে দুই দলই বলছে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারি দলও বলে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, আবারও ওয়ান-ইলেভেন আনার পায়তারা করা হচ্ছে। বিএনপিও একইভাবে বলছে, ষড়যন্ত্র চলছে। আমার প্রশ্ন হলো, দুই দলই যখন ষড়যন্ত্রের কথা বলছে তখন তারা কেন এক হয়ে এ অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন না?

প্রশ্ন: দুই দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ?

গোলাম সারওয়ার: আমি সব সময় বলে আসছি এবং এখনো বলছি, বর্তমান সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ হতেই হবে এবং ক্ষমতাসীন হওয়ায় সরকারের দায়িত্ব এক্ষেত্রে অবশ্যই বেশি। বর্তমানে যদি কিছু ঘটে, তবে এর দায়-দায়িত্বটা ক্ষমতাসীন হওয়ায়, সরকারের ওপরই বর্তাবে। সংলাপটা শুরু হওয়া উচিত জাতীয় সংসদে। আমার কাছে খুবই দুভার্গ্যজনক বলে মনে হয়, বিএনপি যে যুক্তিই দেখাক না কেন- সংসদ বর্জন অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিল, সরকার গঠন করতে না পারলেও আমরা সংসদে যাব। প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও তারা যদি সংসদে না যায়, সেটি যৌক্তিক হতে পারে না। বিএনপি সংসদে না যাওয়ার পেছনে যে যুক্তির কথা বলছে সেটি হলো, সরকারি দল তাদের কথা বলতে দেয় না। এটি সঠিক যুক্তি নয়, তর্কের খাতিরে বলা হয় মাত্র। আমি প্রথম তিন বছরের কথা বাদ দিলাম সর্বশেষ বিরোধী দলীয় নেতা ২ ঘন্টার কাছাকাছি সময় বক্তৃতা দিয়েছেন। তার মাইক কিন্তু বন্ধ করা হয়নি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এক সময়ে বিটিভি ছাড়া অন্য টিভি চ্যানেল ছিল না এবং তারাই সংসদ কার্যক্রম সম্প্রচার করত। বিরোধী দলের বক্তব্য ঠিক মতো সম্প্রচার করা হতো না। সুইচ অফ করে দেয়া হতো। এখন সংসদ টেলিভিশন রয়েছে, আছে রেডিও। সংসদে এখন যে কথা বলছে, তা সরাসরি প্রচার করা হচ্ছে। মানুষও দেখছে, শুনছে। কেন বিএনপি এ সুযোগটা নিচ্ছে না। এটা বিস্ময়কর ও রহস্যজনক ঘটনা বলে মনে হয়। কথা বলতে না দিলে জনগণ দেখবে সরকার বাধা দিচ্ছে। বিরোধীদল রাজপথে মিছিল-মিটিং করছে। সে সুযোগ তো আছে। কেন সংসদের মতো গণতান্ত্রিক একটি হাতিয়ারকে ব্যবহার করছে না বিএনপি? ভারতের পালামের্ন্টে এর চেয়েও খারাপ ঘটনা ঘটে। সেখানে টাকার বস্তা নিয়ে দেখানো হয়েছে, এ অর্থ তাদের দেয়া হয়েছে যাতে ভোটটা ‘আপনাদের’ বিরুদ্ধে দেই। সেখানেও ফাইল ছুড়ে মারা হয়েছে। স্পিকারকে আক্রমণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি কিন্তু সরাসরি জনগণ দেখেছে। এ ধরণের ঘটনা ঘটলে সেটি আমরাও দেখব। সুতরাং যে যুক্তিই দেখাক না কেন, বিএনপি সংসদ বর্জন মেনে নেয়া যায় না।

প্রশ্ন: তাহলে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার সম্ভাবনা কি নেই ?

গোলাম সারওয়ার: ইংরেজীতে একটা কথা আছে, হোপ এগেনস্ট হোপ। আশার বিপরীতে আশা থেকেই যায়। সিভিল সোসাইটিসহ সবাই আশা করছেন, এমন একটা সময় আসবে যখন দুই দলের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। ২০০৭-০৮ সালে মতো আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পরিস্থিতি তৈরি হলে ক্ষতি হবে দেশের, ক্ষতি হবে বিশেষত প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের। দুই নেত্রীরও ক্ষতি হবে। আশা করি তাদের বেধোদয় হবে। এখন তারা যাই করুন না কেন সমাধান আসবে। সংলাপের আশা নেই, এটা আমি বিশ্বাস করি না। সংলাপ হবে। সংকটের শেষ মুহূর্তে গিয়ে সংলাপ হয়েছে।

প্রশ্ন: সংলাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে দেশের দায়িত্ব কতটুকু?

গোলাম সারওয়ার: সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই বেশি। ক্ষমতাসীনদের বলা উচিত, আগামী নির্বাচন কোনো সরকারের অধীন হবে- তা-নিয়ে অনেক কথাবর্তা হচ্ছে। বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে, আমরা নির্বাচিত সরকারের কথা বলছি। যা কিছু হোক না কেন আসুন আমরা সংসদে গিয়ে আলোচনা করি। সরকার বলুক আমরা খোলা মন নিয়ে সব কিছু নিয়ে আলাপ করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনি তৃতীয় শক্তির উত্থানের কথা বলছিলেন…

গোলাম সারওয়ার: আমি এখনো বিশ্বাস করি, সংলাপ হবে এবং শেষ পর্যন্ত সময়মতো নির্বাচন হবে। তৃতীয় শক্তি আসার সম্ভাবনা তিরোধিত হয়নি। রাজনৈতিকভাবে তৃতীয় শক্তি আর্বিভাবের সম্ভাবনা নেই। যেসব দল বর্তমানে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাড়াতে চাইছে তাদের দলীয় ভিত্তিই নেই। ফলে আলোচনায় তাদের স্থান দেয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তৃতীয় শক্তি বলতে আমরা সাধারণত যাদেও মনে করে থাকি তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। অরাজনৈতিক শক্তি যদি ক্ষমতায় আসে, সেটি দেশের জন্য খারাপ হবে। এ ধরণের সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো কয়েক মাস বজায় থাকলে তৃতীয় শক্তির উত্থানের শঙ্কা আছে। কিন্তু আমি মনে করি, বড় দুই রাজনৈতিক দলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দুই জনেরই ওয়ান-ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুতরাং দুই নেত্রী কখনই চাইবেন না, দেশ আবারও সেদিকে যাক। এতে কারও লাভ হবে না, ক্ষতিটা হবে আমাদের সবার। এতে গণতন্ত্র অনেক পিছিয়ে যাবে।

প্রশ্ন: কোন কোন বিষয়গুলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে বলে মনে করেন?

গোলাম সারওয়ার: সংবাদপত্রের পাতা উল্টোলে সরকারের বেকায়দায় পড়ার দৃশ্যপট স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামে যে ঘটনাগুলো ঘটছে। আমি একটা কথা সব সময় বলি, সরকার অনেক ভালো কাজ করেছে। গ্রামের অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক সবল হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এটা কিন্তু সত্য কথা। যারা গ্রামে যান না তারা এটি বিশ্বাস করবেন না। আমি গ্রামে যাই। সেখানে গিয়ে দেখেছি, টিনের বাড়ি-বিল্ডিং হচ্ছে। বাজারে দুপুরের পর কিছু মিলছে না। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের কথা না হয় বাদ দিলাম। এটা সত্য, গ্রামীণ উন্নয়নে এসব কার্যক্রমের অবশ্য ভূমিকা আছে। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের যে অর্থ আসছে তার ৭০ শতাংশ যাচ্ছে গ্রামে এবং সেখানে ব্যয় হচ্ছে। এতে সেখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে। কৃষি-শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকার অনেক ভালো কাজ করেছে। সরকারের ভালো কাজগুলো যেমন ব্যাখ্যা করে বলতে হচ্ছে। এতে আমি কনভিন্স হই বা না হই, কিন্তু কিছু দৃশ্যমান খারাপ কাজ হয়েছে এ সরকারের আমলে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারীদের কিছু দুস্কর্ম এ সরকারের ভালো কাজকে ম্লান করে দিচ্ছে। সরকার ভালো কাছ করে এক কদম সামনে এগোলে, খারাপ কাজ তাকে ৫০ পা পিছে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মারামরি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা, টেন্ডারবাজি হচ্ছে। অনেক সাধারণ লোক টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার চিত্র সরকারের দৃশ্যমান ভালো কাজকে ম্লান করে দিচ্ছে। পদ্মা সেতু মানুষের প্রত্যাশার বড় জায়গা। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন থেকে পদ্মা সেতু শুরু করলে এতদিনে হয়তো এর নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে যেত। মানুষের বিশ্বাস জন্মেছে যে, পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক বড় ধরনের দুর্নীতি হয়ে যাচ্ছিল। এ সরকারের আমালেও দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা যায়নি। সবার ধারণা, দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর কাজ এখানো শুরু করা যায়নি। এটা কিন্তু ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া। দুর্নীতির বিষয়ে সাধারণ মানুষ খুব সেনসেটিভ। পদ্মা সেতু বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প। সরকারের এসব ব্যর্থতা অনেক ভালো কাজকে ম্লান করে দিচ্ছে, এটা অস্বীকারের উপায় আছে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন: জামায়াতের আন্দোলনকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

গোলাম সারওয়ার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সরকারের একটি বড় কাজ। এই রায় কার্যকর করতে হবে। এ জামায়াতের উচ্ছৃঙ্খলতা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিবে, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। তাদের সহিংসতা দমনে সরকার আদালতের ভেতরে বাইরে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, আমাদের উচিত সেটাকে অনুমোদন করা। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। জামায়াতের লাশ কাঁধে নিয়ে বিএনপি একটি বড় ভুল করেছে।

প্রশ্ন: আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন ?

গোলাম সারওয়ার: সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনার কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির বিচার করলে হয়তো অন্য চিত্র পাওয়া যাবে। যারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং এখন আছেন, তাদের কথা-কাজ সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়, এখানে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যেভাবে বজায় রাখা প্রয়োজন ছিল, সেটি রাখতে পারেননি। তাদের কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে অস্বত্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।

প্রশ্ন: মন্ত্রীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

গোলাম সারওয়ার: ১ জানুয়ারি ২০১৩ সালে একটি পাতা করেছিলাম, মন্ত্রীদের সুবচন নিয়ে। পুরো বছরে তারা কে, কি ধরনের হাস্যকর, দুঃখজনক ও অবাঞ্চিতকর মন্তব্য করেছেন একের পর। সেগুলো আমরা ছেপেছি। সরকারের ওপর মহল থেকে শুরু করে একেবারে সাধারন এমপি পর্যন্ত এসব মন্তব্য করেছেন। তাদের কথার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই, অপ্রয়োজনে কথা বলছেন। যে পর্যায়ে থেকে যে কথা বলা সঠিক নয়, সেটি বলছেন। যে কথাগুলো একজন সাধারণ নেতার বলার কথা, সেগুলো বলছেন ওপরের সারির নেতা। এটা শুধু সরকারি দলই, বিরোধী দলও কম যান না। সিভিল সোসাইটির সদস্যরাও অযাচিত মন্তব্য করেছেন। মনে হয়, কে কত বেশি কথা বলবেন; কে বেশি চটকদার কথা বলবেন, এর প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেছে। এটা দুঃখজনক।

প্রশ্ন: সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

গোলাম সারওয়ার: অনেক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়েছে আবার অনেকগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্প শুরু হয়নি। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারেনি। আমাদের দেশের সমস্যা হলো, অঙ্গীকার করার সময় কেউ কম করেন না। আমরা জানি এবং বুঝি এগুলো করা সম্ভব নয়। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দেয়। ‘তীর থেকে তরী’ অনেক দূরে আছে। কিছুদিন আগে, সমকাল একটি জরিপ করেছিল সেখানে একটি অদ্ভুত চিত্র বেরিয়ে এসেছিল। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারও এমন জরিপ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সরকারের ব্যর্থতা অনেক বেশি। তারপরও জনপ্রিয়তার দিক থেকে শেখ হাসিনা অনেক এগিয়ে আছেন। এটা বিপরীতধর্মী মনে হতে পারে, তবে এটা সত্য।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি?

গোলাম সারওয়ার: আমি আশাবাদী থাকতে চাই। সংসদীয় গণতন্ত্র চলমান থাকুক। মাঝে দুই বছর বাদে ৯০ সাল পরবর্তী এটি চলছে। গণতন্ত্রের ভালো-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। কিন্তু এর ভালো বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। সরকার-বিরোধী দল এক সঙ্গে কাজ করবে – দেশবাসী সবসময়ই এটা প্রত্যাশা করে।

সাক্ষাতকার নিয়েছেন এস এম আববাস

  সূত্র, দ্য এডিটর ডটনেট

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.