ভারতীয় সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস নিয়ে শঙ্কা

আগস্ট ১১, ২০১৩

border20130811032341ঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের বিলটি সোমবার রাজ্যসভায় তুলছে ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার। খবরটি বাংলাদেশের জন্য ‘উচ্ছ্বাসের’ হলেও ‘শঙ্কামুক্ত’ নয়।

কারণ, এ চুক্তি বাস্তবায়নে কোনোভাবেই রাজি হয়নি বিরোধী দল বিজেপি। ফলে ভারতের সংসদে এটি পাস না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

ঈদের পর প্রথম দিনের অফিসে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বহুদিন চেষ্টার পর ভারত সরকার বিষয়টি সংসদে তুললেও এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, বাংলাদেশের পক্ষে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কোনোভাবেই বিজেপির মন গলেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা শঙ্কা আর আশা নিয়ে অপেক্ষা করছি। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের বিলটি সংসদে তোলাই প্রমাণ করে, চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে ভারতের বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। এতো কিছুর পরও যদি বিলটি সংসদে পাস না হয়, তাহলে তাদের ব্যর্থতার কিছু নেই। কারণ, তারা চেষ্টা করেছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধানে সংশোধনী আনা প্রয়োজন। আর সেজন্য ভারতীয় সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার, যা ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের নেই।

স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে, যা নিয়ে বিজেপির আপত্তি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অপেক্ষা করা ছাড়া বাংলাদেশের এখন কিছু করার নেই। বিজেপি রাজি না হলে বিলটি পাস হবে না। তাই সংসদে বিলটি উঠলেও শঙ্কা কাটছে না।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে বিজেপি এমন শর্তে রাজি নাও হতে পারে। তবে ভারতের বিরোধী দল রাজি না হলে ভারত একটি নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে।

কারণ, কোনো কোনো দেশের রাজনৈতিক দলের মতামত অনুযায়ী পররাষ্ট্র নীতি লক্ষ্য করা যায়। ভারত সেদিকে যাচ্ছে কিনা সোমবার সংসদে সীমান্ত চুক্তি বিলটি পাস হওয়া বা না হওয়াই সে প্রমাণ দেবে।

ড. ইমতিয়াজ আরো বলেন, তবে এ বিলটি সংসদে তোলার মাধ্যমে মনমোহনের সরকার কিছুটা নির্ভার হলেন।
কারণ, পাস না হলেও তার সরকার দায় চাপাতে পারবে বিরোধী দল বিজেপির ওপর। আর পাস হলে এটি বর্তমান সরকারের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলকে রাজি করার শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গত বুধবার এ বিল নিয়ে বিজেপি নেতা এল কে আদভানি, অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল আসেনি।

বরং বিজেপি নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর করতে ভারতের সংবিধান সংশোধনের বিলে তারা সমর্থন দেবে না।

গত মাসের শেষ দিকে দিল্লি সফরে গিয়ে রাজ্যসভায় বিরোধী দলীয় নেতা বিজেপির অরুণ জেটলির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি।

অরুণ জেটলি সে সময় দীপু মনিকে বলেছিলেন, দলের মধ্যে আলোচনা করে তারা এ বিষয়ে জানাবেন। ওই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন দীপু মনি। তারাও চুক্তি বাস্তবায়নে ভারত সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান।

কিন্তু বিজেপি অনড় থাকায় চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যাওয়ার শঙ্কার মুখে পড়ে।
কংগ্রেস সরকার এ বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যসভায় বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও বিরোধী দলের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। এরপর সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে আবারো বিলটি তোলার জন্য ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ বিরোধী দলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করেন।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১১, ২০১৩
লিখেছেন- জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট, বাংলানিউজ।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.