পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর আহ্বান ইউনূসের

মে ১৩, ২০১৩

younusঢাকা জার্নাল: গত কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাত প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সাভারের তৈরি পোশাক কারখানার ভয়াবহ ভবন ধসের পর বিশ্বজুড়ে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু এখনও বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, বিশেষ করে এই শিল্পের শ্রমিক ও তাদের অধিকার এবং নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সব মাধ্যম। এবার বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, নোবেলজয়ী সমাজকর্মী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ইংল্যান্ডের পত্রিকা ‘ দ্যা গার্ডিয়ানে’র মাধ্যমে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পশ্চিমা গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

দুর্ঘটনার পর দ্যা গার্ডিয়ানে মত বিদেশি গনমাধ্যমের এই উল্লেখযোগ্য লেখাতে তিনি প্রায় ৪ মিলিয়ন পোশাক শ্রমিকের অবস্থার উন্নতির প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে তাদের উপর নির্ভর এই শিল্প ও জীবন সংরক্ষনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

এই প্রসঙ্গে ডঃ ইউনূস সংশ্লিষ্ট বিদেশী কোম্পানি ও সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে এই সব শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

৭২ বছর বয়েসী এই অর্থনীতিবিদ লিখেছেন,”আজ যারা তাদের জীবন হারিয়েছেন, তাদের আত্মারা আমাদের দেখছেন … আমরা তাদের জন্য যা বলেছি, তার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছি, তারা আমাদের আশেপাশেই আছেন, আমাদের লক্ষ্য করছেন।”

অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশের এই পোশাকশিল্প ত্যাগের আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন “ যে দেশে সর্বনিম্ন মজুরি দিয়ে কাজের সুযোগ আছে, সেই সুযোগ ত্যাগের কোন কোন মানে হয়না।” তবে নুন্যতম মজুরি নির্ধারণ এ ক্ষেত্রে একটি জরুরি বিষয় বলে তিনি মনে করেন।

নুন্যতম মজুরি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,”বর্তমান মজুরির সাথে মাত্র ৫০ সেন্ট মজুরি বেশি নির্ধারণ করেই এই শিল্প সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।” এই বাড়তি ৫০ সেন্ট এর মাধ্যমেই এই শিল্পের সম্পূর্ণ সংস্কার করা সম্ভব বলে তিনি বলেন। কিন্তু এজন্য দেশি–বিদেশী সকল পক্ষকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহবান জানান।

গত রোববার পর্যন্ত সাভার শহরতলীতে ধসে যাওয়া আট তলা রানা প্লাজায় জীবিত বা মৃত শ্রমিকদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১১২০ এর বেশি । অন্য দিকে ১৭ দিন পর আশ্চর্যজনক ভাবে উদ্ধার পাওয়া পোশাককর্মী রেশমা হাসপাতালে সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন।

ইউকে’র অন্যতম প্রধান খুচরা বিক্রেতা প্রাইমার্ক সহ কয়েকটি পশ্চিমী সংস্থা অবৈধভাবে নির্মিত এই ভবনে অবস্থিত কারখানাগুলো থেকে তাদের মাল সরবরাহ নেয়ার কথা স্বীকার করেছে। দুর্ঘটনার আগের দিন এতে বিশাল বিশাল ফাটল দেখা দেয়,কিন্তু নিরাপত্তা ভয় সত্ত্বেও মাসে ২৫ ইউরো প্রাপ্ত এইসব শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ঘটনার পর বিল্ডিং এর মালিক গ্রেপ্তার করা হয়। উল্লেখ্য যে মাসে ২৫ ইউরো বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিকদের গড় আয়।

বিশ্বের শিল্প দুর্ঘটনার অন্যতম এই ট্রাজেডির পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উন্নত বিশ্বের পোশাক ব্যবসায়ীদের এশিয়ার গরিব দেশের সস্তা শ্রমবাজারে ব্যবসায়ের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে ইউনূস একটি পোশাক শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট চালুর কথা বলেন,যেখানে বাংলাদেশে তৈরি জামাকাপড়ে ৫০ সেন্ট মূল্য সম্পূরক দেয়া হবে। তাঁর মতে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বর্তমান সমস্যা কাটিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও স্থানীয় শ্রমিকদের উত্পাদনশীলতা বজায় রাখতে এই ৫০ সেন্ট অধিভার একটি মার্কেটিং হাতিয়ার হতে পারে।

তিনি বলেন,“যদি কোন ক্রেতা পছন্দের পোশাকটি ৩৫ ডলারের এর বদলে ৩৫.৫০ ডলার দামে কেনে, সে কি তাতে আপত্তি করবে ? আমি বলি, অবশ্যই না। হয়তো তারা বিষয়টি খেয়ালই করবেন না। কিন্তু কেবল মাত্র এই অতিরিক্ত ৫০ সেন্ট এর মাধম্যে আমরা একটি শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট শুরু করতে পারি। যার মাধ্যমে আমরা পোশাক কর্মীদের সবধরনের সমস্যার মীমাংসা করতে পারি – তাদের শারীরিক ও সামাজিক নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ, পেনশন, স্বাস্থ্য, আবাসন, তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য-শিক্ষা, সন্তানের দেখাশোনার, অবসরভাতা , বার্ধক্যভাতা এমনকি ভ্রমনের সুযোগও ।”

তিনি তুলে ধরেন,“এই দেশের প্রতি টুকরা পোশাকের উপর একটি বিশেষ ট্যাগ লাগানো হবে। যার উপরে লেখা থাকবে ‘ বাংলাদেশের সুখী পোশাক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। আমাদের শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত/ অধিকার সুরক্ষিত। ”( From the happy workers of Bangladesh, with pleasure. Workers’ well-being guaranteed). উল্লেখ্য ২০১১ সালে বর্তমান সরকার গ্রামীন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডঃ ইউনূসকে অপসারণ করে। তাকে বাংলাদেশ সরকারের একজন ধারাবাহিক কড়া সমালোচক হয়েছে হিশেবে দেখা যায়।

তার ভাষায়,সাভারে পোষাক কারখানার এ বিয়োগান্ত নাটক জাতি হিসাবে আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক।রানা প্লাজার ফাটল আমাদের জাতি হিশেবে নিজস্ব সিস্টেমের মধ্যের ফাটলকেই সামনে নিয়ে এসেছে। এর ধ্বংসস্তূপ আমাদেরকে জাতি হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য সাবধান করে দিয়েছে। নিজেদের ভেতরের ফাটল যদি এখনও আমরা মেরামত না করি , জাতির জন্য হ্যত অপেক্ষা করছে এমনই আরেকটি ট্রাজেডি। জাতি হারিয়ে যাবে অতল ধ্বংসস্তূপের গহব্বরে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.