রানাসহ ৫ গার্মেন্টস মালিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ

এপ্রিল ৩০, ২০১৩

RANA_graptaer(1)ঢাকা জার্নাল: সাভারে ৮ তলা ভবন রানা প্লাজা ধসের ঘটনায়  ভবনের মালিক সোহেল রানা ও ভবনে অবস্থিত ৫টি গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে তারা যেন কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর না করতে পারেন তা নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রাজস্ব বিভাগের মহাপরিদর্শক ও নিবন্ধককে (ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন- আইজিআর) এ আদেশ দেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা রেজিস্ট্রারকেও এ আদেশ পালন করতে হবে।

একই সঙ্গে রানাসহ এসব মালিকরা যেন তাদের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে না পারেন, সে বিষয়ে দেশের সব রেজিস্ট্রার অফিসে একটি প্রজ্ঞাপন (সার্কুলার) জারি করতেও আইজিআরকে নির্দেশ দেন আদলত।

এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মালিকরা সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না- আদালত এ আদেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন এই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

ধসের আগের দিন রানা প্লাজা পরির্দশনকারী প্রকৌশলী ফজলুল হকের নাম-ঠিকানা আদালতে দাখিলের জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেন আদালত। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ওই ভবনে অবস্থিত ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজারের বক্তব্য আদালতে হলফনামা আকারে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এছাড়াও জীবন রক্ষায় সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও আদালতকে জানাতে হবে।

রানা প্লাজার বিষয়ে রাজউক কি পদক্ষেপ নিয়েছে এবং রাজউকের এখতিয়ারে থাকা কোন ভবনে কতোটি গার্মেন্টস কারখানা এবং ওই কারখানাগুলোর কি অবস্থা তার তালিকা দিতে বলেছেন আদালত।

সারাদেশের সব কারাখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার তালিকা, ভবনগুলো ব্যবহারযোগ্য কিনা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ আছে কিনা সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বিজিএমইএকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। যেসব কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া এবং সকল কারখানা ভবনের একটি তালিকা দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রধান কারখানা পরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আহত ও নিহতদের পরিবারকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ প্রদানে কাকে কি পরিমাণ ক্ষতি দেওয়া হবে এ বিষয়ে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিজিএমইএ, ৫ গার্মেন্টসের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, বুয়েট’র একজন করে প্রতিনিধি এবং চারজন মেডিসিন, মনোবিদ, অর্থনীতিবিদের একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশও দেন আদালত।

আদালতের এসব আদেশ পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করে আদালতকে জানাতে হবে।

হাইকোর্ট আদেশ দেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সার্কুলার চেক ইস্যু করতে পারবে না। তবে বিজিএমইএ’র তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য অর্থ উত্তোলন করতে পারবে। এছাড়াও মালিকদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী আদালতে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত।

সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কবির হোসেনের বক্তব্য নিয়ে ২৫ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক, প্রকাশক ও তিন প্রতিবেদককে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া রানা প্লাজা ধসের বিষয়ে রাজউক ও পুলিশের দায়ের করা দুই মামলার যে কোনো অগ্রগতি সঙ্গে সঙ্গে আদালতকে জানাতে সাভার থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়ে আগামী ৮ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার। রাজউকের পক্ষে ছিলেন, একেএম সাইফুদ্দিন।

গ্রেফতারকৃত ভবন মালিক সোহেল রানা এবং ভবনটিতে অবস্থিত গার্মেন্টস কারখানার ৪ মালিককে হাইকোর্টে তোলার পর এসব আদেশ দেন হাইকোর্ট। গার্মেন্টস মালিকেরা হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম, মাসুদুর রহমান, বজলুল সামাদ আদনান ও আনিসুর রহমান। হাইকোর্টের এর আগের নির্দেশে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া হাইকোর্টে হাজির হন সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবির হোসেন সরকার ও সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান। শিল্প পুলিশের পরিচালক, কারখানা পরিদর্শক, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরাও আদালতে হাজির ছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ওই ৫ মালিককে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে তোলা হয়। একই বেঞ্চে সাড়ে ১০টায় হাজির হন ইউএনও কবির হোসেন সরকার ও ওসি আসাদুজ্জামানসহ অন্যরা।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে রিমান্ডে থাকা ৫ মালিককে হাইকোর্টে আনা হয়।

গত ২৫ এপ্রিল রানা প্লাজার ভবন মালিক এবং ভবনটিতে অবস্থিত গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের ৩০ এপ্রিল আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।

হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চের আদেশে হাজির হন সাভারের ইউএনও কবির হোসেন সরকার ও সাভার থানার ওসি আসাদুজ্জামান। ২৫ এপ্রিলই বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের বেঞ্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ভবন মালিক এবং ভবনটিতে অবস্থিত গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের হাজির হতে নির্দেশ দেন। তবে এ আদালতও সবাইকে মির্জা হোসেইন হায়দারের বেঞ্চে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, ড. মো. ইউনূস আলী আকন্দ ও ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়ার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত সেদিন ৪টি রুলও জারি করেন। রুলে রানা প্লাজা ধসের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ভবন কোড অনুযায়ী নীতিমালা তৈরির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা, স্বরাষ্ট্র সচিব, শ্রম সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, রাজউকের চেয়ারম্যান, সাভারের ইউএনও ও ওসি এবং ভবনের মালিক, গার্মেন্টসগুলোর মালিক বা চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ৩৯৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫২ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।এছাড়া ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে এ পর্যন্ত মোট জীবিত মানুষ উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৭৯ জনে।

অন্যদিকে ইতিমধ্যেই রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ওই ভবনের মালিক, মালিকের বাবা, ভবনে অবস্থিত কারখানাগুলোর মালিক ও সাভার পৌরসভার প্রকৌশলীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করা হয় ভবনের মালিক সোহেল রানাকে। আর সোমবার দুপুরে রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কলু খালেককে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর মগবাজার থেকে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.