Leadশিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

যৌন হয়রানি রোধে মাদ্রাসায় থাকছেন নারী মেন্টর


যৌন হয়রানি ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশের প্রতিটি মাদ্রাসায় একজন নারী শিক্ষককে মেন্টর হিসেবে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ফেনীর একটি মাদ্রাসায় ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও পুড়িয়ে মারার ঘটনার পর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কোনও প্রতিষ্ঠান এই সিদ্ধান্ত বাস্তায়ন না করলে এমপিও স্থগিত, পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন নারী বা শিশু সহিংসতার শিকার না হয়, যৌন নির্যাতনের ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন নারী শিক্ষককে মেন্টর হিসেবে নিযুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।সংশ্লিষ্ট স্কুলের একজন শিক্ষককে এ দায়িত্ব দেওয়া হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা অফিসারদের বলা হয়েছে।’

এ কে এম ছায়েফ উল্যা আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই দেশের প্রতিটি মাদ্রাসায় একজন নারী শিক্ষককে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষসহ কোনও শিক্ষক কোনও শিক্ষার্থীকে ডাকতে পারবেন না। কোনও অভিযোগ বা কোনও বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়ার প্রয়োজন থাকলে আহ্বায়কের মাধ্যমে ডাকতে হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যৌন হয়ারানিসহ নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশের প্রতিটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হচ্ছে। কোনও শিক্ষার্থী যেন যৌন হয়রানি বা সহিংসতার শিকার না হয়, সে লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি মাদ্রাসায় একজন নারী শিক্ষকে মেন্টর নিযুক্ত করা হবে। মেন্টরের কাজ হচ্ছে, ছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

মাদ্রাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পাঠ্যবইয়ের জেন্ডার সম্পর্কিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে হবে। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। দেশের সব মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে টোল ফ্রি হেলপ লাইন ১০৯ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানতে হবে। এসব বিষয় মনিটরিং করবেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপার ও ম্যানেজিং কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অন্য সদস্যরা সরকারের এই নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছেন কিনা, তাও মনিটরিং করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা অফিসার।

একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে পাঁচ সদস্যের যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আদালতের এই নির্দেশনা মানেনি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির সম্মেলন কক্ষে গত ১৮ এপ্রিল নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৮-২০৩০) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ১৭টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌন নিপীড়ন বন্ধ ও নারী সহিংসতা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা জার্নাল, মে ২৪, ২০১৯।