শফিক রেহমান! আপনার উদ্দেশে-

এপ্রিল ১৮, ২০১৬

Ashish Biswasআশিস বিশ্বাস : ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) ছায়ানটের বোমা হামলা থেকে মুহূর্তের জন্য বেঁচে যাই! কিন্তু উদভ্রান্তের মতো ছবি তুলে ছিলাম পুড়ে যাওয়া বীভৎস নিথর দেহের! ভাবিনি আরো বোমা ফাটতে পারে! এর প্রতিবাদে ১৬ এপ্রিল (৩ বৈশাখ) শানতা আর আমি আমাদের তোলা ছবিগুলো গায়ে সেঁটে বিভিন্ন স্লোগান লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে ছিলাম! সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে আমাদের ছবি তু্লেছিলেন!

আমাদের গায়ে সাঁটানো একটি স্রোগান ছিল- যে সেনাবাহিনী দেশের জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে সেনাবাহিনী আমাদের দরকার নেই! এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়!

সেনাবাহিনী সম্পর্কে এ মন্তব্য করার কারণ ছিল এই যে, তখন দেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা আরো কঠোর করা হয়! আর বলা বাহুল্য, সেখানে সেনাসদস্যদের তৎপরতাই ছিল মুখ্য! কিন্তু সাধারণের নিরাপত্তার দিকে কোনো মনোযোগই ছিল না! জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের! অথচ আমরা দেখলাম, জনগণকে কচু দেখিয়ে জনগণের সেবকদেরই নিরাপত্তা বাড়ানো হলো!

যাক, চোখের সামনে সেনাসদস্য দেখতাম বলে, হয়ত সে কারণে ক্ষোভটা গিয়ে পড়েছি্ল, তাদের ওপরই!

১৬ এপ্রিলের প্রতিবাদের খবর ১৭ এপ্রিল দৈনিক সংবাদ, অবজারভার ও অন্য একটি দৈনিকে ছাপা হয়! এর মধ্যে সংবাদ ও অবজারভারে আমাদের ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়। সম্ভবত, দৈনিক বাংলায় আমাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়!

এরই সূত্র ধরে শফিক রেহমানের সাপ্তাহিক যায়যায় দিন তাদের সম্পাদকীয়তে শানতা আর আমাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট বানিয়ে দেয়! তাদের ভাষায় ‘দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী’ সম্পর্কে আমরা কটুক্তি করেছি! তাই আমরা ‘র’-এর এজেন্ট! (কী হাস্যকর যুক্তি)। যাযয়ায দিন দাবি তোলে, আমাদের দুজনকে প্যাদানি দিলে ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসবে! এ ছাড়াও শানতা আর আমার ব্যক্তিজীবন ও দুজনের ধর্মীয় আচারও খতিয়ে দেখতে বলে!

এরপরের সপ্তাহে চরম সাম্প্রদায়িক মদদদাতা পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব শানতা আর আমার ব্যক্তিজীবনকে আক্রমণ করে ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বড় একটি প্রবন্ধ ছেপে দেয়!

Santa
শানতা

এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী থেকে আমরা কোনোদিনই হুমকি পাইনি! তবে এরপরে আমরা দুজন ক্রমাগত হুমকি পেতে থাকি মৌলবাদী রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে! যখন তারা জানতে পারলো আমরা দুজনই বামপন্থী সংগঠনের সদস্য সমর্থক, তখন এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়! আমরা দুজনও আরো দৃঢ় হই! তবে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের আরো বেশি সঙ্গ দিতে থাকেন! পরে আমরা দুজন আমাদের লড়াইয়ের কৌশল বদলে নিজেদের অর্থায়নে একটি সংগঠন দাঁড় করাই! যার নাম দেই- Study For Skill Development-SSD! এর উদ্দেশ্য ছি্ল, শিশুদের মানবিক বোধে উজ্জ্বীবিত করা! নির্দিষ্ট ধর্মীয় গণ্ডী মুক্ত করে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে সমাজবাদে ধাবিত করা!

 

সে কাজটি এখন ধমকে গেছে! আরেকটি ধর্মীয় চেতনার ধসে শানতা আজ প্রয়াত! তবে আমি এখনো লড়াইয়ের মাঠে!

এই মাঠ থেকেই শফিক রেহমানকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এই ১৬ এপ্রিল আমি আর শানতা প্রতিবাদী হয়েছিলাম, ছায়ানটের অনু্ষ্ঠানে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে! আপনার পত্রিকা আমাদের ‘র’-য়ের বানিয়ে দিয়েছিল! সেই ১৬ এপ্রিলেই ঘৃন্য এক অভিযোগে আটক হয়েছেন আপনি! ঠিক একইভাবে ঘটনাচক্রে আমিও আজ সংবাদকর্মী! আমি আপনাকে ঘৃণার চোখেই দেখি, দুটি কারণে! এক- আপনি সুশিক্ষিত, আধুনিক মনস্কের মানুষের আড়ালে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়েছিলেন! যে কারণে শানতা আর আমার জীবন বিপন্ন হয়েছিল! দ্বিতীয়ত, আমি আর শানতার রাজনৈতিক আদর্শ মার্কসবাদ আর সমাজবাদে! এখনো! আর আপনি ডানপন্থার পচা আবর্জনায়!

আরেকটি কথা, শানতা আর আমার বিয়েটা হয়েছিল, ১৬ এপ্রিল (৩ বৈশাখ)! ছায়ানটে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম ১৬ এপ্রিল! আর আপনিও আটক হলেন শফিক রেহমান, ১৬ এপ্রিল! কী অদ্ভুত মিল!

তবে হ্যাঁ, আপনাকে আমি ঘৃনার চোখে দেখলেও, আমি বিশ্বাস করতে চাই, যে অভিযোগে আপনাকে আটক করা হয়েছে, সেই ঘৃণ্য কাজ করার মতো এত নিচে আপনি নামেননি! যায় য়ায় দিনের প্রথম সংখ্যা থেকে এরশাদের ৩০ সেট গহনার সংখ্যাটাও আমার কাছে আছে! তার ভিত্তিতেও আমি অনুমান করতে পারি, আপনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার! সে কারণে এবং একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আপনাকে আটকের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই! সেই সঙ্গে আপনার মুক্তিও দাবি করছি আমি…!

ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ১৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.