স্বপ্ন পূরণ হলো না টাইগার যুবাদের

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬

tiger  ঢাকা জার্নাল:বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে খুদে টাইগাররা। ফলে, কাগজে-কলমের পরিসংখ্যানে আর নিজেদের পারফর্মে ক্যারিবীয়দের থেকে এগিয়ে সেমিফাইনালের ম্যাচে নেমেও ৩ উইকেটের হার বরণ করতে হলো স্বাগতিকদের। সঙ্গে স্বপ্ন পূরণ করতে পারলো না মেহেদি হাসান মিরাজের দল।
বাংলাদেশ জিতে ফাইনালে উঠলে ইতিহাসই রচনা হতো মিরপুরে। তবে, তার আগেই ইতিহাস স্পর্শ করেছে মেহেদি হাসান মিরাজের দল। কারণ, এর আগে বাংলাদেশের যুবাদের কোনো দল বিশ্বমঞ্চের সেমিফাইনালে খেলেনি। ফাইনালে পৌঁছালে সেটি হতো বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় অর্জনগুলোর আরেকটি।
টাইগার যুবাদের ছুঁড়ে দেওয়া ২২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪৮.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩০ রান তোলে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেমিফাইনাল ম্যাচটি শুরু হয় সকাল ৯টায়। আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পৌঁছাতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগারদের দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজ। ম্যাচে আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টাইগার যুবারা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ‍সবক’টি উইকেট হারিয়ে তোলে ২২৬ রান। মিরাজ, জয়রাজ আর সাইফুদ্দিনের দারুণ ব্যাটিংয়ে এ রান তোলে স্বাগতিকরা।
যুবাদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন ২৬ ম্যাচ খেলা পিনাক ঘোষ ও ৩৩ ম্যাচ খেলা সাইফ হাসান। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বেশ বড় ধাক্কা খায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে পিনাক ঘোষ কোনো রান করার আগেই বিদায় নেন। কেমার হোল্ডারের লাফিয়ে উঠা বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১০ মোকাবেলা করা পিনাক। দলীয় ১০ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটে।

দলীয় ১০ রানের মাথায় টাইগার যুবাদের ওপেনার পিনাক ঘোষ ফিরে গেলে ব্যাট হাতে নামেন ৪২ ম্যাচ খেলা জয়রাজ শেখ। ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন সাইফ হাসান। জোসেফের বলে স্কয়ার লেগে গোলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে সাইফ ১৬ বলে করেন ১০ রান।

দুই ওপেনারকে হারিয়ে খেলতে থাকা বাংলাদেশ ইনিংসের ১৩তম ওভারে তৃতীয় উইকেট হারায়। রায়ান জনের বলে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। ২৪ বল মোকাবেলা করে একটি বাউন্ডারি পান শান্ত। এর আগে বিদায় নেন পিনাক ঘোষ ও সাইফ হাসান। দলীয় ২৭ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে হারায় স্বাগতিকরা।

দলীয় ৫৮ রানে টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বেশ ভালোই খেলছিল টাইগার যুবারা। উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান জয়রাজ শেখ ও জাকির হাসান ৩০ রানের জুটিও গড়েন। তবে, ইনিংসের ২২তম ওভারে স্প্রিংগারের ভেতরে আসা একটি বলে ইনসাইডএজ হয়ে বিদায় নেন জয়রাজ। আউট হওয়ার আগে ৫৪ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩৫ রান করেন তিনি।

উইকেটে অপরাজিত থেকে দলের রানের চাকা ঘোরানোর দায়িত্ব পালন করতে থাকা দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজ ও জাকির হাসানের জুটি ভাঙে ইনিংসের ২৮তম ওভারে। কেমার হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান। বিদায়ের আগে ৪৪ বলে ২৪ রান করেন তিনি। মেহেদির সঙ্গে স্কোরবোর্ডে আরও ২৫ রান যোগ করেন জাকির। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় যুবাদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে।

ইনিংসের ৪৩তম ওভারে নিজের ৬৩তম বলে অর্ধশতকের দেখা পান মেহেদি হাসান মিরাজ। আইসিসির মেগা ইভেন্টে এটি তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি।

দলীয় ১১৩ রানের মাথায় পিনাক ঘোষ, সাইফ হাসান, জয়রাজ শেখ, নাজমুল হোসেন শান্তর পর জাকির হাসান বিদায় নিলে যুবাদের দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে উইকেটে জুটি গড়েন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। এ জুটি থেকে আরও ৮৫ রান আসে। ৪৬তম ওভারে মিরাজ অর্ধশতক হাঁকিয়ে বিদায় নেন। পরের বলেই বিদায় নেন সাইফুদ্দিন। সেই ওভারের তৃতীয় বলে মিরাজকে ফেরান কেমো পল। ফ্রিউয়ের তালুবন্দি হওয়ার আগে টাইগার দলপতি করেন ৬০ রান। তার ৭৪ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি বাউন্ডারি। পরের বলেই বোল্ড হন ৩৬ রান করা সাইফুদ্দিন। ৫৫ বল মোকাবেলা করে তিনি এ ইনিংসটি সাজান।

৬ বলে মাত্র ৩ রান করে বোল্ড হন সাঈদ সরকার। কেমো পল ফেরান তাকেও। শেষ দিকে মোসাব্বেক হোসেন ১৪ রানে বিদায় নিলেও ১০ রানে অপরাজিত থাকেন মেহেদি হাসান রানা।

ইনিংসের শুরুতে স্বাগতিকদের হয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন দলপতি মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ওভারেই এক ছয় আর দুই চারে ১৪ রান তুলে নেন ক্যারিবীয় ওপেনার গিডরন পোপ। মেহেদি হাসান রানার করা দ্বিতীয় ওভারে আরও ১১ রান যোগ করেন দুই ওপেনার। তবে, ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে বোকা বনে যান ওপেনার তেভিন ইমলাচ। এলবির ফাঁদে পড়ে এই ওপেনার বিদায় নেওয়ার আগে করেন ১৪ রান।

ইনিংসের সপ্তম ওভারে মেহেদি ক্লিন বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা ২৫ বলে দুটি ছক্কা আর ৫টি চারের সাহায্যে ৩৮ রান করা গিডরন পোপকে। দলীয় ৫৬ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই উইকেট হারায়। এরপর ইনিংসের ২০তম ওভারে বোল্ড করে সালেহ আহমেদ শাওন সাজঘরের পথ ধরান কেচি কার্টিকে (২২)।

ইনিংসের ২৮তম ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ফিরিয়ে দেন ৬০ রান করা ক্যারিবীয়ান অধিনায়ক শিমরন হেটমায়ারকে। সাইফ হাসানের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে ৭টি চার আর একটি ছক্কা। ৫৯ বলে তিনি এ ইনিংসটি সাজান।

ইনিংসের ৩৮তম ওভারে ম্যাচে ফেরে টাইগাররা। একই ওভারে জোড়া আঘাত হানেন সালেহ আহমেদ শানও। ফিরিয়ে দেন ৩৩ বলে ৯ রান করা গোলিকে। আউট হওয়ার আগে গোলি ৩০ রানের জুটি গড়েন স্প্রিংগারের সঙ্গে। একই ওভারে কেমো পলকে বোল্ড করেন শাওন।

এরপর মূলত সেট ব্যাটসম্যান স্প্রিংগার ক্যারিবীয়দের জয়ের পথেই টেনে নিতে থাকেন। অপরাজিত থাকেন ৬২ রান করে।

স্বাগতিকদের হয়ে তিনটি উইকেট নেন সালেহ আহমেদ শাওন। আর দুটি করে উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের মঞ্চে নামবে ক্যারিবীয়রা। আর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানের মোকাবেলা করবে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

ঢাকা জার্নাল, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.