চার বছরেও খুনের রহস্য অজানা

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬

Sagor_Runiঢাকা জার্নাল: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হবে কাল। এত দিনেও র‌্যাবসহ সরকারের একাধিক সংস্থা এ ঘটনার তদন্ত করে খুনিদের চিহ্নিত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। আর কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তার কূলকিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাগর ও রুনি।

মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা ৮ জনের মধ্যে ৩ জন জামিনে আছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পর ১৬ জানুয়ারি আদালতে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় আরো একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক আলামত পাঠানো হয়েছে। সবকিছু চিন্তাভাবনা করেই তদন্ত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আরো কিছু সময় লাগবে।

মামলা তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ৪০টি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা অর্ধশত আলামতের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষাগার থেকে পাওয়া প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, দুটি পৃথক ডিএনএ নমুনার সঙ্গে যাদের ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া যাবে তারাই ঘাতক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ডিএনএ নমুনার প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, দুটি ডিএনএ নমুনা বহনকারীই ঘাতক। ওই দুই ডিএনএ নমুনা জাতীয় ডিএনএ ভান্ডারে থাকলে, তার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানেই থেমে আছে মামলার সব তদন্ত। এরপর দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ কারণে কারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল, কী কারণে তাদের খুন করা হলো- এসবের কোনো কূলকিনারা হয়নি।

অভিযোগ আছে, প্রায় কোটি টাকা খরচ করেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুনের ঘটনার তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। খুনিদের গ্রেফতার কিংবা চিহ্নিত- কিছুই করতে পারেনি মামলা তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। এরই মধ্যে র‌্যাবে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদকে। এই সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হয় স্কলাসটিকা স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর রহমান, সাগর-রুনির ফ্ল্যাটের দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল ও ডা. নিতাই হত্যা মামলার আসামি মিন্টুকে। এই মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছে ডা. নিতাই হত্যা মামলার আসামি কামরুল হাসান অরুণ, পেশাদার ডাকাত রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, আবু সাঈদ ও সাগর-রুনির অ্যাপার্টমেন্টের আরেক সিকিউরিটি গার্ড হুমায়ুন ওরফে এনামুল হক। তবে তারাই যে এই দম্পতিকে খুন করেছে, তা কোনো সংস্থাই নিশ্চিত করতে পারেনি।

তদন্তের এ অবস্থা দেখে বিচারের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটি আমরা জানি না। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর মঙ্গলবার মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা এই মামলার তদন্ত নিয়ে একেবারেই হতাশ। এখন শুধু সাগর-রুনির একমাত্র উত্তরসূরি মাহীর সারোয়ার মেঘকে নিয়ে আমাদের চিন্তা। জীবদ্দশায় বিচার না হলে তার কাছে কী জবাব দেব?’

ঘটনার রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২, রশিদ লজ অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা জার্নাল, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.