সিগারেট কোম্পানির টার্গেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণী

নভেম্বর ২৬, ২০১৫

24ঢাকা : ‘তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না।’ এ কথাটি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর  ধারা ৫ (ছ) এ স্পষ্টভাবে বলা আছে। অর্থাৎ এটি একটি আইন যা অমান্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে আইনটি মানছে না কিছু সিগারেট কোম্পানি। বরং উল্টো দেশের তরুণ সমাজকে টার্গেট করে তারা সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য বেছে নিচ্ছে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো।

অবাক হলেও বিষয়টি যে সত্য তার প্রমাণ মেলে অনুসন্ধানে নেমে। শুধু তাই নয়, দেখা গেছে এই প্রচারণার কাজে কোম্পনিগুলো ব্যবহার করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকেই। প্রথমে এসব তামাক কোম্পানিগুলো বিক্রয়স্থলকে (সেলস পয়েন্ট) বিজ্ঞাপনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও বর্তমানে এর বিস্তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, কাওরান বাজার, শাহবাগ, মতিঝিল, জিগাতলা, শংকর এবং মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। তামাকজাত দ্রব্যের অবৈধ বিজ্ঞাপনের উপর চালানো সেই মনিটরিং কার্যক্রম থেকে জানা গেছে, ধূমপানে উদ্বুদ্ধকরণের হাতিয়ার হিসেবে তরুণ-তরুণীদের বেছে নিয়েছে জাপান টোব্যাকো নামে একটি কোম্পানি। লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দিয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে নানা রকম ইভেন্টের আয়োজন করছে তারা। বিনামূল্যে কোম্পানির প্রিন্ট করা টি-শার্ট দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এমনকি তামাকজাত পণ্যের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতেও সেই টি-শার্ট বিতরণ করছে তারা।

এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ধানমণ্ডির নর্দান, ইউল্যাব, এশিয়া প্যাসিফিক, স্টামফোর্ডসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চোখে পড়ার মতো স্থানে টানানো হয়েছে আবুল খায়ের, ঢাকা এবং জাপান টোব্যাকো কোম্পানির অবৈধ বিজ্ঞাপন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই এমনটা করা হচ্ছে। আর বিক্রয়স্থলে আকর্ষণীয় রঙ ও ডিজাইনের বক্স দিয়ে বিজ্ঞাপন স্থাপন করছে তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা। রঙিন সেই বক্সে সিগারেটের খুচরা মূল্য প্রদর্শনের মাধ্যমে সবাইকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। এ ক্ষেত্রেও তারা লঙ্ঘন করছে সংশ্লিষ্ট আইন।

শুধু তাই নয়, আইন অমান্য করে ধানমণ্ডির জিগাতলা বাস স্ট্যান্ড ও আশেপাশের এলাকায় জাপান টোব্যাকো কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের অবৈধ বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছে। এমনকি মানুষকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে পাবলিক প্লেসে একপর্যায়ে নিজেই সিগারেট ধরাচ্ছে কোম্পানির কর্মীরা। মূলত নতুন ধূমপায়ী তৈরি করার লক্ষ্যেই তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্বলিত টি-শার্ট পরিহিত কোম্পানির প্রতিনিধিরা এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেই সঙ্গে নিজস্ব পরিচিতি বাড়াতে এবং ধূমপায়ীদেরকে আকৃষ্ট ও অধূমপায়ীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রাহকদের মাঝে টি-শার্টও বিতরণ করছে জাপান টোব্যাকো কোম্পানি।

কোম্পানিটির নিজস্ব লোগো এবং স্লোগান লেখা টি-শার্ট বিতরণ এই কার্যক্রম পরিচালনায় তারা দু’ধরনের টি শার্ট ব্যবহার করে থাকে। যারা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে অর্থাৎ কোম্পানির প্রতিনিধিরা কলারসহ টি-শার্ট ব্যবহার করে। এবং যে টি-শার্টগুলো গ্রাহকের মাঝে বিতরণ করা হয় সেগুলো কলার ছাড়া ও নিম্নমানের।

সরেজমিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে জাপান টোব্যাকো কোম্পানির টি-শার্ট গায়ে এক রিকশাচালককেও চোখে পড়ে। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘ওই কোম্পানির লোকে দিছে মামা। পয়সা লয়নি। মাঙনা পাইলে কে না গায়ে দেয়।’ অর্থাৎ রিকশাচালকটি না জেনেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে একটি সিগারেট কোম্পানির। অথচ দেখার কেউ নেই।

সরকার দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন করলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না কিছু অসাধু কোম্পানির কারণে। আর এভাবেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে টোব্যাকো কোম্পানিগুলো জনসম্মুখে প্রচারণা চালাচ্ছে। তামাকের প্রতি আকৃষ্ট করছে দেশের তরুণসমাজকে। লাভ করছে অধিক মুনাফা।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বাংলামেইলকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যেটা করছে সেটা সম্পূর্ণভাবেই আইনের পরিপন্থি। এর আগে এক সময় সরকারের পক্ষ থেকে এইসব প্রচার-প্রচারণার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন তা না থাকায় এর প্রভাব আরো বেড়ে গেছে।’

এসব কাজের শাস্তির বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে এই কাজ করছে তাদের জন্য মূলত শাস্তি হলো ১ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের জেল। আবার যদি সেই কোম্পানি একই ধরনের আইন ভঙ্গ করে তাহলে এই শাস্তি দ্বিগুণহারে হবে। তবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগও আনা যায়। কেননা তারা অন্যদেশ থেকে এসে আমাদের দেশীয় আইন লঙ্ঘন করছে।’

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.