রাজনীতি পৌর ভোট: বিএনপির সিদ্ধান্ত আসছে ‘দ্রুত’

নভেম্বর ২৬, ২০১৫

“এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে কর্মকৌশল পার্টি চেয়ারপারসনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন দ্রুতই সিদ্ধান্ত জানাবেন,” বলেছেন আসাদুজ্জামান রিপন।

বুধবার রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে এসে একথা বলেন বিএনপির মুখপাত্র।

আড়াই মাস লন্ডনে কাটিয়ে দেশে ফেরা খালেদা পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জরুরি এই বৈঠকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ডেকেছিলেন।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা অংশ নেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর পৌরসভায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। অর্থাৎ বিএনপিকে ভোটে অংশ নিতে হলে তার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সময় কম থাকার বিষয়টি সাংবাদিকরা তুলে ধরলে রিপন বলেন, “এখনও আরও কিছুদিন বাকি আছে। নিঃসন্দেহে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের আগেই দলের চেয়ারপারসন তার সিদ্ধান্ত জানাবেন।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ কয়েকদিন আগে ভোটে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্তই নেবেন।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে বিএনপি সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আগে-পরে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে।

‘ব্যর্থ’ আন্দোলনের পর সর্বশেষ এই বছরের এপ্রিলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটগ্রহণের মাঝপথে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দেয়।

ওই নির্বাচনের পর ২৩৪টি পৌরসভায়ই প্রথম ভোট হতে যাচ্ছে। আগে নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হবে।

অর্থাৎ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সংসদ নির্বাচনের মতোই তার দলের মেয়র প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন।

রিপন বলেন, “পৌর নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত দিয়েছেন। চেয়ারপারসন নেতৃবৃন্দের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।

“নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর পৌর ভোটের দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করেছে। এর ঠিক দুদিন পরই ২ জানুয়ারি দেশের প্রায় ৫০ লাখ ভোটার নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। এসব বিষয়গুলো সিনিয়র নেতারা আলোচনায় তুলে ধরেছেন।”

বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম, জাতীয় কাউন্সিল, দল পুনর্গঠনের কাজ নিয়েও আলোচনা হয় বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

বৈঠকে মওদুদ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে। এছাড়া স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আত্মগোপনে।

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে এম শামসুল ইসলাম ও সারোয়ারি রহমান অসুস্থতার জন্য বৈঠকে ছিলেন না। আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান চিকিৎসার জন্য বর্তমানে সিঙ্গাপুরে।

এই বৈঠকের চার দিন আগেই দলের স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদু্ল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বৈঠকে ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই বৈঠক ঘিরে সন্ধ্যা থেকে দলীয় নেতা-কর্মী বিশেষ করে নোয়াখালী, ফেনী, বরিশাল, নাটোর ও দিনাজপুরের স্থানীয় নেতারা গুলশানের কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন।

পৌরসভা নির্বাচনের আগ্রহ থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন।

ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে ঈদ করে ফিরে দুই দিন বিশ্রামের পর মঙ্গলবার প্রথম গুলশানের কার্যালয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.