ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্যমুক্তির বাধা সুদের বোঝা: প্রধানমন্ত্রী

নভেম্বর ২৫, ২০১৫

বুধবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করে তিনি জানান, সরকার এ কারণে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঞ্চয় বৃদ্ধি ও পল্লী কর্মসংস্থান ব্যাংক সৃষ্টির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঋণের ব্যবস্থা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা জানি, মাইক্রোক্রেডিটের সুদ দিতে দিতে তাদের আর সঞ্চয় থাকে থাকে না। … কাজেই দারিদ্র্যের লেভেল থেকে তারা উঠতে পারে না। ওখানেই তাদেরকে পড়ে থাকতে হয়।

“আমরা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে ঋণ দিচ্ছি এবং খামার থেকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করছি। সেই সাথে সাথে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করছি ও ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করছি।”

দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও পরে তা সংশোধন করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা হয়।

জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সারা দেশে ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ বাজার গড়ে তোলা হয়েছে।

দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা ও ‘গ্রোথ সেন্টারে’ এসব পণ্য বিক্রির জন্য সমবায়ভিত্তিক বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ‘সফল’ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করা হয়েছে।

একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সঞ্চয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা, “কেউ যদি একশ টাকা জমাতে পারে, সরকার সেখানে আরও একশ টাকা দেয়। দুই বছর পর্যন্ত আমরা সেভাবে দিয়ে থাকি।

এভাবে টাকা দেওয়ার ফলে যে অর্থ জমেছে সেটা দিয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আমরা করে দিয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ব্যাংকে যারা টাকা জমাচ্ছেন, এটা তাদেরই ব্যাংক, তারাই পরিচালনা করবেন এবং ঋণ নিতে পারবেন।

“গ্রামে তৃণমূল পর্যায়ে সঞ্চয়ের ব্যবস্থা ও অর্থ সরবরাহ করা, অর্থাৎ, মানুষ যাতে দারিদ্র্য থেকে উপরে উঠে আসতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”

অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটের দহগ্রামে গ্রামীণফোনের থ্রিজি ইন্টারনেট সেবার উদ্বোধন করেন। এসময় দহগ্রামে ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “তথ্য-প্রযুক্তি আজ ব্যাপকভাবে সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার হচ্ছে। যত বেশি ব্যবহার হচ্ছে, চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই সাথে সাথে গতিটাও বৃদ্ধি করা দরকার।”

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। সেই সাথে সাথে ব্রডব্যান্ড, সাবেমেরিন কেবলকে আরও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন করা এবং মানুষের কাছে সেবা আরও ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামের মানুষ কীভাবে কৃষি ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সেবা পাচ্ছে সে কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পাশাপাশি দেশের ৮০০০ পোস্ট অফিসের মধ্যে ৩৫০০ পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল সেন্টার পরিণত করা হয়েছে। বাকিগুলোও করা হবে।

দেশের মানুষের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারে।”

দহগ্রামের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছিটমহল না হলেও ভারতের করিডর ব্যবহার করে সেখানে পৌঁছাতে হত। তার সরকারের উদ্যোগে সেখাতে চলাচলের জন্য প্রথমে ছয় ঘণ্টা পরে ২৪ ঘণ্টা করিডর খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লালমনিরহাটসহ উত্তবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.