মিয়ানমার থেকে ফিরল ১০৩ বাংলাদেশি

অক্টোবর ১২, ২০১৫

07কক্সবাজার প্রতিনিধি: মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত আরও ১০৩ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।

সোমবার দুপুর ১টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু’ দিয়ে তাদের ফেরত আনা হয়।

খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কক্সবাজার ১৭ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইমরান উল্লাহ সরকার।ষষ্ঠ দফায় ৭৩ জনকে ফেরত আনার কথা থাকলেও  পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত নতুন ৩০ জনের নাম তালিকায় যোগ হয়েছে বলেও জানান তিনি।বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতুর বাংলাদেশ অংশে এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম. এম. আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের জলসীমায় উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আরও ৬০ জন বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তাদের ফেরত আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চলছে।’

মিয়ানমারের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সীমান্তে উগ্রপন্থিরা যাতে কোনো গোলযোগ সৃষ্টি করতে না পারে সেই ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সহায়তা চাওয়ার কথাও তিনি সাংবাদিকদের জানান।প্রেস ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক চ নাইং মিয়ানমারে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্তদের ফেরত আনায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আগামীতেও বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ এ সম্পর্ক বজায় রাখতে সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, মিয়ানমার থেকে ১০৩ জনকে ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু দিয়ে দুপুরে দেশের অভ্যন্তরে ফেরত আনা হয়। এরপর তাদেরকে চারটি বাসে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নিয়ে আসা হয়। ওখানে ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট কাজ শেষ করে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপরই তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টের বিপরীতে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়ায় ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের এক পতাকা বৈঠক হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে বিজিবির মেজর ইমরান উল্লাহ সরকারের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার যান। ওই দলে বিজিবির প্রতিনিধি ছাড়াও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, চিকিৎসক, ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

প্রতিনিধি দলে পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এম. এম. আনিসুর রহমান।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ন্যাশনাল প্রোগাম অফিসার আসিফ মুনীর জানান, বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হওয়া ফেরত আনা ১০৩ জনকে আইওএম’র পক্ষ থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত খাদ্য, চিকিৎসা ও যাতায়ত খরচসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে।

আসিফ আরো জানান, ফেরত আনা ১০৩ জন ১৭টি জেলার বাসিন্দা। সর্বোচ্চ বগুড়া জেলার ৩১ জন। ফেরত আনাদের মধ্যে ছয় শিশু-কিশোর রয়েছে।

গত ২১ মে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয় ২০৮ জন এবং ২৯ মে আরো ৭২৭ জন অভিবাসী প্রত্যাশীদের উদ্ধার করে দেশটির নৌ-বাহিনী। উদ্ধার হওয়া এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিয়ানমার প্রথম থেকেই বাংলাদেশি নাগরিক বলে দাবি জানিয়ে আসছিল। পরে বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্তদের মধ্যে গত ৮ ও ১৯ জুন, ২২ জুলাই এবং ১০ ও ২৫ আগস্ট পাঁচ দফায় ৬২৬ জনকে দেশে ফেরত আনা হয়। ষষ্ঠ দফায় আনা ১০৩ জনসহ এ পর্যন্ত দেশে ফেরত আনা হয়েছে ৭২৯ জনকে।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.