শিক্ষক নিয়োগ কমিশন স্বচ্ছ হতে হবে
অক্টোবর ১২, ২০১৫ সরকার সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে জেলা শিক্ষক নিয়োগ কমিটি অথবা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধ করা না গেলে কমিশন গঠন করে কোন লাভ হবে না। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে। জাতি গঠনের মূল কারিগর হলেন শিক্ষক। সেই শিক্ষক নিয়োগে যাতে কোন স্বজনপ্রীতি না হয় বা কোন অনিয়ম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোন অনিয়ম প্রতিরোধ করতে হবে। দেশের সেরা মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই দেশ আরো এগিয়ে যাবে।
শিক্ষক নিয়োগে কমিশন গঠনের পর যদি সে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে তাহলে এটি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কারণ, একজন ভাল শিক্ষক সব সময় শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু কমিশন যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ না করে কিংবা এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যদি দুর্নীতির আশ্রয় নেন তাহলে কোন লাভ হবে না। মোট কথা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে।
সম্প্রতি বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। এটা এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগে আগে প্রশ্নপত্র অসাধু শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন। মুলত কিছু লোকের এই অন্যায়ের কারণে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হন।
বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে আবেদন করতে হলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করতে হয়। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর সেখানে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর বিদ্যালয় পরিচালনা বোর্ড গঠিত একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অভিযোগ আছে যে, এই পরীক্ষায় পাস করার পরও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদেরকে মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হয়। তা না হলে নিয়োগ হয় না। আবার কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ার আগেই ওই বিদ্যালয়ে অনেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ক্লাশ নেন। পরে শূন্য পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওই খণ্ডকালীন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রেও প্রকৃত মেধাবীরা এ পেশায় আসার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হন। মূলত, এ ধরনের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে জেলা শিক্ষক নিয়োগ কমিটি অথবা কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দেশে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার, কলেজ সাড়ে তিন হাজার ও মাদ্রাসা রয়েছে সাড়ে নয় হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনার জন্যই মূলত বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে বিধিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।