নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রধান বাধা বৈষম্যমূলক ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন
অক্টোবর ১১, ২০১৫ নারীর ক্ষমতায়নের পথে প্রধান বাধা বৈষম্যমূলক ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন বলে উল্লেখ করেছেন ‘বেলা‘র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রোববার সকালে ‘ভূমি অধিকার, খাদ্য সার্বভৌমত্ব ও গ্রামীণ নারী’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এলআরডি। সেমিনারে সভাপত্বি করেন নিজেরা করি’র খুশি কবির। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, জ্যোতিষী চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পিতৃতান্ত্রিকতা, ঔপনিবেশবাদ, পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতির মুনাফা নির্ভর সংস্কৃতি চর্চা, আধুনিক কৃষির প্রবর্তন, ভূমি দস্যুতা, নারীর অর্থনৈতিক কার্মকান্ডের আর্থিক মূলায়ন না হওয়া এবং সর্ববিষয়ে অনগ্রসরতার কারণেও নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
তারা বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নারীরা ভূমির অধিকার থেকে সব চেয়ে বেশি বঞ্চিত। বাংলাদেশে ভূমিতে নারীর অধিকার মাত্র ৩ শতাংশ। প্রতিবেশি ভারতের নারীরাও বাংলাদেশের নারীদের চেয়ে ভূমিতে বেশি অধিকার ভোগ করে। ভারতে এ হার ১১ শতাংশ, মালেশিয়াতে ১৩ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১১ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১৬ শতাংশ এবং লাইল্যান্ডে এ হার ২৭ শতাংশ। নারীকে অর্থনৈতিক সম্পদের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করার মানসিকতা থেকেই বাংলাদেশে নারীর এ বঞ্চনা।
তারা বলেন, ভূমির মালিকানা দারিদ্র ও অসমতার অন্যতম নির্ণায়ক। আর এর ভিত্তিতে আয়-ব্যয় ও খাদ্য গ্রহণ, স্বাস্থ্য জ্ঞান, জনসম্পদ ও ক্ষমতা অবকঠামো অধিকারে ভূমির মালিকানায় অবদান রাখে। ভূমিহীন পরিবার এসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আর ভূমিহীন পরিবারের নারীরা সব চেয়ে বেশি বঞ্চিত হন। এ কারণে বাংলাদেশের নারীরা বঞ্চনার শিকার। এর প্রভাব পড়ে পরিবারে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রেও।
গ্রামীন নারীর অবস্থা একই রকম উল্লেখ করা হয় সেমিনারে। গ্রামে মাত্র ১১ দশমিক ৩ শতাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ভূমিকা রাখে; উৎপাদনে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ঋণ প্রাপ্তিতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নিজের আয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ মাত্র ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ নারীর। সিদ্ধান্তহীনতার অবস্থাই বলে দেয় বাঙালী নারী সমাজে কেমন ভূমিকা রাখছে। ভূমিতে নারীর এই অধিকারহীনতার জন্য বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক অধিকার আইনকে দায়ি করেন বক্তারা।